বিশ্বের বৃহত্তম টয়লেট, ভারতীয় রেলপথ, ভোর সেই ভারতেই কথাই বলে, সাফ জানালেন পরিচালক

  • তিন বছর ধরে কেবলই চলচ্চিত্র উৎসবে সফর 
  • ২০২১-এ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারে মুক্তি পেল ভোর
  • ছবির চিত্রনাট্য থেকে বাস্তব পরিস্থিতি
  • খোলামেলা আলোচনায় পরিচালক 

পৃথিবীর বৃহত্তম খোলা পরিবেশ টয়লেট হল ভারতের রেলপথ। এই উক্তি নজরে আসা মাত্রই চোখ আটকে যায় পরিচালক তথা ভোর চিত্রনাট্যের লেখক কামাক্ষা নারায়ণ সিং-এর। মুহূর্ত্যে মনের কোণে খোঁচা দিয়ে ওঠে একটাই প্রশ্ন, ভারতের বর্তমান ছবিটা ঠিক কী! মেট্রোপলিটন সিটিতে মাল্টিপ্লেক্স, নাকি সুদূর গ্রামের মাঝে লুকিয়ে থাকা মানুষের না বলা ভালো থাকার কাহিনি। এ ভালো থাকার গল্পটা একটু অন্য অন্য রকমের। যেভাবে এখনও বাড়ির গুরুজনদের দেশের বাড়ি বেশি টানে, দেশ শব্দটা তাঁরা শান্তি খোঁজে, সেই দেশ কি সত্যি অভাগা, নাকি ভারতের মাঝেই প্যারালালি বেঁচে আছে অন্য ভারতের ভোরের কাহিনি! এই নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথা বললেন ভোর ছবির পরিচালক কামাক্ষা নারায়ণ সিং। 

আরও পড়ুন- নারী ক্ষমতায়নের ভিন্ন বার্তা 'ভোর'-এ, কামাক্ষা নারায়ণের ছবিতে ফুটে উঠেছে দেশের অন্যদিক

Latest Videos

 

 

এএনবাংলা- ভোর ছবির প্লট কীভাবে আপনার মাথায় এলো! 

পরিচালক- সত্যি বলতে কী এটা একদিনের ভাবনা নয়। দীর্ঘ দশ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই ভাবনার জন্ম নেওয়া। তথ্যচিত্র বানানোর সূত্রে আমি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছিলাম। সেখান থেকেই এই বিষয়গুলো আমার নজরে আসতে থাকে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পথ চলাটা কিন্তু এক নয়। ভারতের ছবিটাও ঠিক তেমনই।  যেভাবে মোদীজি কয়েকবছরে টয়লেট প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন, ক্যাম্পেনিং হচ্ছে, তা থেকেই এই বিষয়টা আমার মাথায় আসে। এর পাশাপাশি গৌতম ঘোষের ছবি পাড় দেখেছিলাম আমি। যা আমাকে একইভাবে উজ্জিবিত করেছিল এই বিষয় নিয়ে ভাবার। 

এএনবাংলা - বিভিন্ন সম্প্রদায়কে খুব কাছ থেকে দেখে আপনি এই গল্পের প্লট নির্মাণ করেছিলেন, বিশেষভাবে বিহার! 

পরিচালক- না, শুধু বিহার নয়। হ্যা, বিহারের মুসাহরসদের কথা আমি ছবিতে তুলে ধরেছি ঠিকই, কিন্তু এ ছাড়াও আরও অনেক সম্প্রদায়কেই আমি দেখেছি, যাঁদের কাছে খোলা আকাশের নিচে থাকা টয়লেটটাই বেশি পছন্দের। আমি জানতেও চেয়েছি, কেন একটা টয়লেট বানানো হয়নি, তাঁদের উত্তরে আমি যা স্পষ্ট বুঝলাম, তাঁরা এই পরিবেশেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আগেই বললাম আপনাকে, তথ্যচিত্র তৈরির সুবাদে আমি বিভিন্ন জায়গাতে ঘুড়েছি। তবে মুসাহরসদ সম্প্রদায়কে আমি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি, এটা বলতে পারি, প্রতিটা ছুটিতেই তাঁদের সঙ্গে আমি কথাা বলতাম, সময় কাটাতাম। ইচ্ছে ছিল তাঁদের নিয়ে গল্প বলার। আর সেই সুযোগটাই পেলাম। সত্যি বলতে কি তাাঁরা ভীষণ গরিব, কিন্তু দিনের শেষে তাঁরা সুখী, তাই এক এক সময় আমার মনে প্রশ্ন জাগত, যে তাঁদের যদি কখনও প্রশ্ন করা হয় টয়লেট বানানো নিয়ে, তাহলে তাঁরা ঠিক কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটা কি ভেবে দেখা হচ্ছে! 
আমার মনে আছে এক সময় আমি জানতে চেয়েছিলাম এক মুসাহরসদের কাছে, যে তোমরা কেন টয়লেট ব্যবহার করো না! ছবিতে একটটা চরিত্রের মুখে সংলাপ রয়েছে, যেখানে খোদ ঠাকুরই বলছে, আমিই তো ব্যবহার করি না টয়লেট। 
আমার আরও মনে পড়ে, আমার ঠাকুরদা আমার সঙ্গে থাকতেন গোয়াহাটিতে, কিন্তু সেই শহুরে পরিবেশ তাঁর প্রিয় ছিল না। তাঁর ভালো লাগত না। 
এটা খুব সহজ বিষয় যে প্রথম দিকে জনসংখ্যা খুব কম ছিল, যার ফলে বেশি সংখ্যক মানুষ খোলা আকাশের নিচেই টয়লেটে যেতেন। কিন্তু দিনে দিনে সেই সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কিন্তু বর্তমানে এই অভ্যাস ক্রমেই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এএনবাংলা- আপনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সমস্যা কোথায়! ভোর কোন দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে! 

পরিচালক- আমার কথায় ভারতে টয়লেটের অভাব, কারণ দারিদ্রতা বা পরিস্থিতি নয়, আমার মতে বলে সঠিকভাবে প্রচার, ও মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। এক দীর্ঘ মেয়াদী ধ্যান ধারনার জন্যই কিন্তু অধিকাংশ মানুষ টয়লেট মুখী নন। বা প্রয়োজনও মনে করেন না। 

এএনবাংলা- এই জায়গা থেকেই কি ভারও ও ইন্ডিয়াকে আলাদা চোখে দেখা! 

পরিচালক- আমি তা মনে করি না তা। ভারত বা ইন্ডিয়া, যাই হোক না কেন, সেখানের ৬০ শতাংশ মানুষই গ্রামে বসবাস করে, গ্রামীন জীবন যাপন করে থাকেন, অথচ এই নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নয়। আমি এক বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতাম। যেখানে আমায় বলা হয় যে চলো গ্রামের কোনও গল্প নিয়ে কাজ করি। তখন থেকেই আমার মনে এই বিষয়গুলো চলত। 

এএনবাংলা- তাহলে ভোর জীবনের কথা বলে, বাস্তবের ছবি তুলে ধরে! 

পরিচালক- হম, ফিকশন তো বটেই, তবে না ঠিক ডকুফিচার এটা নয়। তবে বাস্তব জীবনেই গল্পের আকারে পেশ করা, এখানে কোনও সন্দেহ নেই। 

এএনবাংলা- ইতিমধ্যেই ২৮টা চলচ্চিত্র উৎসবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভোরকে। এরপরের পরিকল্পনা কি! এই নিয়ে কি আরও গল্প বলার পরিকল্পনা আছে! 

পরিচালক- অবশ্যই, আমার হাতে আরও একটা কাজ রয়েছে এখন। আমি সব সময় চাই একটু ভিন্ন ধাঁচে গল্প বলতে। অন্য ধারার গল্পকে তুলে ধরতে। আমার হাতে থাকা পড়ের গল্প হচ্ছে জিওপলিটিক্যাল তথ্য নির্ভর, যা কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তৈরি করছি। দেখা যাক কীভাবে তা দর্শকদের মনে প্রভাব ফেলে। 

এএনবাংলা- তিন বছর পর মুক্তি হল ভোর, তাও ওটিটি-তে, কেন! 

পরিচালক- তিন বছর ধরে এই ছবি বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে ঘুড়েছে। ২০১৮ তে বানানো। ২০২১ এ মুক্তি পাচ্ছে। আর এই ধরনের ছবি বড় পর্দায় এখনও সেভাবে জায়গা করতে পারে না। আর ডিজিটালে মুক্তি পাওয়া মানেই বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে তা পৌঁচ্ছে যাওয়ায় তো বটেই। 

এএনবাংলা- কোভিড আমাদের এক অন্য শিক্ষা দিয়ে গেল, যা বোঝালো তা নিজের টয়লেট থাকা, স্যানিটাইজেশন কতটা জরুরী, সেই মর্মে তো ভোর আরও বেশি প্রাসঙ্গিক! 

পরিচালক- প্রাসঙ্গিক তো বটেই। আমি আপনাকে বলছি, আমি তো মুসাহরসদের দেখেছি, তাঁরা আমার আপনার থেকেও অনেকাংশে প্রভাবশালী, কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন তাঁদের সেই মানসিকতাটাই তৈরি হয়নি। এরা খুব অল্পতে সুখী। এদের জীবন খুব মিনিমাল। এই পরিস্থিতি অতিরিক্ত কিছু পাওয়ার আশাই তো এনারা করেন না। ফলে চাহিদা কম। 

এএনবাংলা- এই জ্যঁরের ছবিই কি উপহার পাব আপনার থেকে, না কি পরিচালক হিসেবে আপনি অন্য ঘরানার ছবি নিয়েও কাজ করবেন ভবিষ্যতে! 

পরিচালক- দেখুন সত্যি বলতে কি আমি ছবি বানাই নিজের সুখের জন্য। যা আমার ভালো লাগে, যে বিষয়টা আমার পছন্দ বা আমাকে আকর্ষণ করে, সেই ছবির গল্প বুঁনে ফেলি মন খুলে। তাই যে গল্পই ভালো লাগবে, যে ধরনের কাজ ছবিতে তুলে আনতে আমার আত্মসন্তুষ্টি হবে, আমি বারে বারে সেই ঘরানা নিয়েই ফিরে আসব। আমার বিশ্বাসকেই আমি ছবির মধ্যে দিয়ে তুলে ধরি। আমি কি জানছি, আমি কি শিখছি, আমি সেই টুকুই ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখতে চাই ছবির মধ্যে দিয়ে। 

Share this article
click me!

Latest Videos

লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
পুলিশের তৎপরতায় বানচাল ডাকাতির প্ল্যান! গ্রেফতার ২ অপরাধী, চাঞ্চল্য Birbhum-এ
Suvendu Adhikari: 'কত বড় জিহাদি, রামনবমীর মিছিলে ঢিল মেরে দেখাও', হুঙ্কার শুভেন্দুর
খাদান নিয়ে Dev কে বিশ্রী আক্রমণ রাজের, দেবের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা দিলেন Aritra Dutta Banik