
করোনার তৃতীয় ঢেউ (COVID-19 Third Wave) আছড়ে পড়েছে ভারতে। দেশে এখন প্রতিদিন আড়াই লক্ষেরও বেশি নতুন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের (Omicron) আগমনের পর থেকে, ভারতসহ গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অতি দ্রুত হারে বাড়ছে, প্রায় প্রতিটি দেশেই করোনার নতুন ঢেউ দেখা দিয়েছে। এই যুদ্ধে আমাদের ঢাল-তরোবারি হল মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব এবং অবশ্যই করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন (Coronavirus Vaccine)। ভ্যাকসিন যে করোনা যুদ্ধে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার সর্বশেষ উদাহরণ হল দেশের রাজধানী দিল্লির (Delhi) গত কয়েকদিনের করোনা চিত্র। পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লিতে বর্তমানে করোনায় মৃতদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই ভ্যাকসিনের কোনও ডোজ পায়নি।
দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের (Delhi Health Department) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে দিল্লিতে কোভিড-১৯ (COVID-19) রোগের কারণে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই ১৪৪ জনের মধ্যে ১০৬ জন রোগী, অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ ব্যক্তিই কোভিড টিকার একটিও ডোজ পাননি। আর ১৯ জন এমন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যারা মাত্র একটি করে ডোজ পেয়েছিলেন। তবে, টিকার দুটি ডোজ পাওয়ার পরও মৃত্যু এড়াতে পারেননি ১৯ জন। দেশের আরেক বড় শহর, আর্থিক রাজধানী মুম্বই-এর ছবিটাও একই। বৃহৎ-মুম্বই মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনার (BMC) জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের শহরের কোভিড-১৯'এর কারণে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই ভ্যাকসিনের একটিও ডোজ পাননি।
আরও পড়ুন - IED found In Delhi: দিল্লির ফুলবাজারে বোমা - বিস্ফোরণ ঘটালো এনএসজি, দেখুন
আরও পড়ুন - ভ্যাকসিন যেন নেশা - করোনা টিকার ১২তম ডোজ নিতে গিয়ে ধরা পড়লেন বিহারি বৃদ্ধ
দিল্লিতে গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে মোট ৯৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি। ৩৭ জনের বয়স ছিল ৪১-৬০ বছরের মধ্যে। ১৮ জনের বয়স ছিল ১৮-৪০ বছর। এছাড়া, ১৮ বছরের কম বয়সী ৭ জন শিশুরও করোনায় মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে করোনাভাইরাস কোনও বয়সের মানুষকেই রেহাই দিচ্ছে না। যে কোনও বয়সের ব্যক্তিরই মৃত্যু হতে পারে। আর এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র অস্ত্র হল ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন যে কাউকে করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে না, তা এতদিনে প্রমাণিত সত্য। তবে, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন আমাদের এই মহামারি রোগের গুরুতর মারাত্মক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং করোনার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেকাংশেই কমায়। ভারতে প্রায় এক বছর ধরে কোভিড-১৯ টিকাদান অভিযান চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার সকলকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দিচ্ছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার করে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, অনেকেই টিকা নেওয়ার বিষয়ে উদাসিনতা দেখাচ্ছেন।
ডাক্তাররা কিন্তু বলছেন, এই ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। ওমিক্রনের মতো সংক্রামক স্ট্রেইন যেখানে ছড়াচ্ছে, সেখানে ভ্যাকসিন না নেওয়াটা অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে যাওয়ার মতো। বর্তমানে ১৫-১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ফ্রন্টলাইন কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও ষাটোর্ধ্বদের সতর্কতামূলক তৃতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।