এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২.৪৮ কোটি ডোজ টিকা দিয়েছিল ভারত
কিন্তু, তারপর থেকে দ্রুত হারে কমছে টিকাদানের সংখ্যা
তাও দেশে টিকার ঘাটতি আছে মানতে নারাজ কেন্দ্র
ঘাটতি না থাকলে কেন কমছে টিকাদানের সংখ্যা
৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল - এই ৭ দিনে ভারতে ২.৪৮ কোটি ডোজ করোনাভাইরাস টিকা দেওয়া হয়েছিল। যা এখনও পর্যন্ত ৭ দিনের সময়কালে ভারতের সর্বোচ্চ টিকাকরণের রেকর্ড। আর ঠিক এর পরপরই দেশে আছড়ে পড়েছিল কোভিড-১৯'এর দ্বিতীয় তরঙ্গ। যা প্রতিরোধ করতে এক নম্বর অস্ত্র ছিল টিকা, এমনটাই জানিয়েছেন ডাক্তাররা। তারা বলেছিলেন, এই টিকাকরণের জন্যই আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোতে দ্বিতীয় তরঙ্গ সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু, ভারতের ক্ষেত্রে ৯ এপ্রিলের পর থেকে টিকাদানের সংখ্যা আরও বাড়ার তো দূর, উল্টে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
এই বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল দেশের সবথেকে করোনাধ্বস্ত ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় উদ্বেগ পপ্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। মুখ্যমন্ত্রীদের তিনি সাফ জানিয়েছিলেন কোভিড পরিস্থিতিতে কোনওভাবেই টিকাদান কর্মসূচির গতি ধীর হওয়া চলবে না, বরং তা আরও বাড়াতে হবে। তবে কার্যক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীতটিই ঘটেছে। ১০ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে ভারতে টিকা দেওয়া হল ২.০৭ কোটি ডোজ, ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে ১.৭ কোটি ডোজ এবং ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্য়ে দেওয়া হয়েছে ১.৪৮ কোটি ডোজ টিকা। অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহের মধ্যে টিকাদানের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে টিকাদানের সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাহলে কি সত্য়িই টিকা কম পড়েছে, যেমনটা অভিযোগ করছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা? কেন্দ্র অবশ্য এই অভিযোগ মানছে না। কেন্দ্র জানিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এখনও পর্যন্ত ১৬.৬৯ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৫ লক্ষেরও বেশি ডোজ এখনও রাজ্যগুলির হাতে রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে আরও ৪৮ লক্ষ ডোজ পাঠানো হবে। তাই বিরোধী দল শাসিত কয়েকটি রাজ্য ভ্যাকসিনের ঘাটতির অভিযোগ করলেও, তা সঠিক নয়।
তবে কেন কমছে টিকাদানের সংখ্যা? কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় বহু রাজ্যেই নতুন করে বিবিন্ন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আর এই কারণেই টিকাদানের সংখ্যায় বড় পতন ঘটেছে। তাদের দাবি, টিকা নেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। লকডাউনের মধ্যে টিকা নিতে বের হওয়া যাবে কি না, তাই নিয়েও অনেকে সংশয়ে রয়েছেন। এছাড়া রাজ্যের পক্ষ থেকেও 'রিসোর্স ম্যাপিং'এ গন্ডোগোল রয়েছে। শহরের টিকাদান কেন্দ্রগুলিতে চাহিদা অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও, বেশ কিছু রাজ্য সেইখানে খুব কম সংখ্যক টিকা বরাদ্দ করেছে।
তবে, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যা দাবি করা হচ্ছে, অন্তত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ছবিটা অন্থরকম দেখা যাচ্ছে। এদিনও রাজ্যের টিকাদান কেন্দ্রগুলিতে বহু মানুষ করোনার টিকা নিতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। অধিকাংশ কেন্দ্রেই টিকার অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে টিকাকরণ। রাজ্যে এখনও ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হয়নি, তার আগেই বিভিন্ন জায়গায় শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। শহুরে কেন্দ্র, গ্রামীন কেন্দ্রর মধ্যে এই টিকার জন্য হাহাকারের ছবিটাতে বিশেষ তফাৎ নেই। এই অবস্থায় বাংলায় বিদায়ী মন্ত্রী তথা সদ্য নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হওয়া ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যে নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যপালকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন করা নিয়ে কটাক্ষ করেন। তাঁর মতে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকে ফোন করে টিকার উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, তা আলোচনা করা।