করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারত
বিপর্যয়ের মোকাবিলায় ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
সত্যিই কী ব্যর্থ সরকার
প্রশ্নগুলির উত্তর দিলেন অখিলেশ মিশ্র
অখিলেশ মিশ্র - কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে ভারতবর্ষে। এর মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি মোকাবিলায় ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে, সরকার কি সমস্ত সংস্থান জোগাড় করতে পেরেছে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য? আসুন দেখা যাক কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে ভারতের বেশ কয়েকটি সমস্যা।
ভারত কি দ্বিতীয় তরঙ্গ সম্পর্কে অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল?
২০২১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০ মার্চের মধ্যে ভারতের দৈনিক নতুন সংক্রমণের গড় ছিল ২০,০০০ -এর কম। একটা বড় সময় দৈনিক নতুন সংক্রমণের গড় নেমে এসেছিল ১০,০০০-এর কাছাকাছি। ২০২০ সালের অক্টোবর এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের মুখে পড়েছিল। কিন্তু, ভারতে প্রথম তরঙ্গ শিখর পর মনে করা হয়েছিল দ্বিতীয় তরঙ্গকে এড়ানো গিয়েছে। এমনকী, এই বছরের প্রথম দিকে অনেক দেশি বিশেষজ্ঞ, যাঁরা এখন সরকারকে দোষ দিচ্ছেন, তাঁরাও ভারতের দ্বিতীয় তরঙ্গ কেন হবে না সেই সম্পর্কে একাধিক নিবন্ধ লিখেছিলেন। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার মতো নিশেধাজ্ঞা এবং স্কুল এবং কলেজগুলি ফের তালু করার দাবি করেছিলেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি-ও ২০২১-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল, যার শিরোনাম ছিল 'ইজ দ্য এপিডেমিক কামিং টু অ্যান এন্ড ইন ইন্ডিয়া?' (অবশেষে কি ভারতে মহামারী শেষ হতে চলেছে? দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং আরও অনেক সংবাদমাধ্যমও একইভাবে একদিকে অবাক হয়েছিল এবং অন্যদিকে দ্বিতীয় তরঙ্গকে ভারত এড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করে রিপোর্ট করেছিল।
তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার কিন্তু আত্মতুষ্ট ছিল না। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে, দেশে সংক্রমণের সংখ্যা যখন সর্বনিম্ন ছিল, সেই সময়ও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির জন্য ১৭ টি পরামর্শ দিয়েছিল। সতর্কতা না কমানো, আরও বেশি বেশি করে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, এবং সমস্ত রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। ১৭ মার্চ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ২০,০০০-এর আশপাশেই ছিল। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি বিশদ বৈঠক করে ন। তিনি স্পষ্টভাবে তাদের সবসময় পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলেছিলেন। সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরার বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে বলেছিলেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের ফের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রশাসনিক প্রোটোকলগুলিকে নতুন করে প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এপ্রিল মাসেও প্রধানমন্ত্রী এরকম একাধিক সভা করেন।
তাহলে, গন্ডোগোলটা কোথায় হল? দেখা যাচ্ছে, রাজ্য প্রশাসনগুলির বেশ কয়েকটি কোভিডের বিষয়ে শিথিল হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে, মহারাষ্ট্র, কেরল, দিল্লি, ছত্তিসগড়, পঞ্জাব এবং কর্ণাটক রাজ্যে, যেখানে দ্বিতীয় তরঙ্গের সূচনা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, সেই রাজ্যগুলিতে অনেক দেরিতে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছিল। ততদিনে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সেখানে পুরো মাত্রায় দাপট দেখাতে শুরু করেছে।
কিন্তু, কেন মহামারির মধ্যে নির্বাচন করা হবে?
যথাসময়ে নির্বাচন করা সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা। প্রতি ছয় মাসে একবার করে বিধানসভা অধিবেশ করা বাধ্যতামূলক হয়। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অসম এবং পদুচেরি - এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে কেন্দ্রীয় শাসন দারি করাটা একটা বিপর্যয় এবং সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক কাজ হত। সারা বিশ্বেই মহামারিরর সময় নির্বাচন হয়েছে। ভারতেও ২০২০ সালের নভেম্বরে বিহারে নির্বাচন হয়েছিল। তাই নিয়েও খুব বেশি হইচই হয়নি।
আসল প্রশ্নটা হচ্ছে, বড় নির্বাচনী সমাবেশগুলি কি এড়ানো যেত? বিজেপি বিহারের নির্বাচনের আগে ভারত নির্বাচন কমিশনকে ঠিক এই প্রস্তাবই দিয়েছিল - জনসভা না করে এবং নির্বাচনী প্রচার শুধুমাত্র ভার্চুয়াল মাধ্যমে করা হোক। অন্যান্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলই এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। তাদের আবেদন ছিল বিজেপি অনেক বেশি সুসংহত, তাই তারা ভার্চুয়াল বিশ্বে বাড়তি সুবিধা পাবে। এই বিষয়ে ঐক্যমত না থাকায় নির্বাচন কমিশন জোর করে এই বিধি জারি করতে পারেনি, পুরোনো ব্যবস্থাই জারি থাকে।
২০২০ সাালের সেপ্টেম্বরে, বিহারের নির্বাচন ঘোষণা হয়েছিল। সেই সময় কোভিডের প্রথম তরঙ্গ একেবারে শিখরে ছিল। দৈনিক গড় নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৯০,০০০-এর আশপাশে। তা সত্ত্বেও বিজেপি বাদে সবকটি রাজনৈতিক দল জনসভার উপর জোর দিয়েছিল। সম্প্রতি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচটি রাজ্যে যখন নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই সময় গড় সংক্রমণের সংখ্য়া ছিল প্রায় ১০,০০০। তাই এই পাঁচটি রাজ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই জনসভা করেছে। বিপুল জনসমাাগম নিয়ে কেরল ও তামিলনাড়ুতে রাহুল গান্ধী রোড শো করেছিলেন। অসমে ব্যাপক প্রচার চালান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমববঙ্গে বড় বড় জনসভা করেছেন। বিজেপিও সব ৫ রাজ্যেই সমাবেশ করেছে।
মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, পঞ্জাব বা দিল্লিতে অবশ্য কোনও নির্বাচন হয়নি। তাসত্ত্বেও মার্চ মাসের শেষদিক থেকে নাটকীয়ভাবে এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ বাডড়তে শুরু করেছিল। অর্থাৎ, তথ্য বলছে এই ধারণা ভুল।
হরিদ্বারে কুম্ভমেলা করা কি ঠিক ছিল?
কুম্ভ ভারতে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় সমাবেশ। এই সমাবেশের দিনক্ষণ সরকার নয়, সাধুরা সিদ্ধান্ত নেন। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের ঘটনা কমতে থাকার সরকার শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবিত তারিখগুলিতেই মেলা করার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। সমাবেশের সময় প্রবেশ, পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাাস্থ্য সংক্রান্ত প্রোটোকল খুব কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১ এপ্রিল কুম্ভমেলাার শুরুর দিনে ভারতে ৭২,০০০--এর মতো করোনা সক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। মোট সংক্রমণের ৭৬ শতাংশই ছিল মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, কেরল, কর্ণাটক, দিল্লি এবং পঞ্জাব - এই ছয়টি রাজ্যে। এই রাজ্যগুলির সঙ্গে কুম্ভমেলার কোনও যোগ ছিল না। ১ এপ্রিল উত্তরাখণ্ডে সংক্রমণেরর সংখ্য়া নথিবদ্ধ হয়েছিল ২৯৩টি। ৮ এপ্রিল ছিল ১১,১০০ টি। তবে, সারা দেশে মহামারির দাাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই এগিয়ে এসে সাধুদের নির্ধারিত তারিখের আগেই মেলা শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরা সেই অনুরোধে সাড়াও দিয়েছিলেন।
ভারতের টিকাদান অভিযানের কৌশল কি সঠিক?
কোভিডশিল্ড এবং কোভাক্সিন - ভারত দেশে উৎপাদিত দুটি ভ্যাকসিনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে কোভাক্সিন হ'ল সম্পূর্ণ দেশীয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায়, আইসিএমআর এবং ভারত বায়োটেক সংস্থার অংশিদারিত্বে রেকর্ড সময়ে এই ভ্যাকসিন বিকাশ করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, কংগ্রেস দলের দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীরাও কোভাক্সিনের বিরুদ্ধে খুব খারাপ প্রচার চালিয়েছিলেন। এর মধ্য়েই ভারত চলতি ১৬ জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাকরণ অভিযান শুরু করে। চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই অভিযানের নকশা করা হয়েছিল - প্রথমে মৃত্যুর হার কমাতে কোভিডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে স্বাস্থের দিক থেকে দুর্বল অংশকে টিকা দেওয়া হবে। তারপর প্রগতিশীলতার সঙ্গে এগোন হবে। সেই নকশা মেনেই, ১৬ জানুয়ারী প্রথমেই টিকা দেওয়া শুরু হয় স্বাস্থ্য়কর্মীদের। তারপর ২ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য ফ্রন্টলাইন কর্মীদের টিকা দেওয়া হয়। ১ মার্চ থেকে ৬০-ঊর্ধ্বদের এবং ৪৫ ঊর্ধ্ব কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের, ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ ঊর্ধ্ব সকলের, এবং ১ মে থেকে ১৮ ঊর্ধ্ব সকলের জন্য টিকাকরণের ব্যাপ্তি বাড়াানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারতে, ১৬ কোটি ২০লক্ষ মানুষ ভারতে টিকা পেয়েছেন। বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম গতিতে টিকা দেওয়া হয়েছে এই দেশে। কেন্দ্রীয় সরকার সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করেছে।
এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলি এবং রাশিয়ান স্পুটনিক ভ্যাকসিনকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার সংগ্রহের প্রায় ২১৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ।
দেশের জনগণকে টিকা দেওয়ার আগে ভারত কেন ভ্যাকসিন রফতানি করেছিল তাই নিয়েও প্রশ্ন উছেঠে। গত ১১ মে পর্যন্ত ভারত বিদেশে মোট ৬৬.৩৬,৯৮ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ বিদেশে রফতানি করেছে। একই সময়ে, ভারতবর্ষে প্রায় তিনগুণ ডোজ দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুতকারকদেরও এই সরবরাহের জন্য চুক্তিগতবাধ্যবাধকতা ছিল। অনেক দেশেই বিশেষ করে যেখান থেকে কাঁচামাল এসেছিল, সেইসব দেশে ভ্যাকসিনগুলি সরবরাহ করতেই হত। পাশাপাশি এটা প্রয়োজনের সময় সমগ্র মানব সভ্যতার পাশে দাড়ানো ভারতের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ফরাসী রাষ্ট্রপতি দু'জনেই সম্প্রতি বলছেন, গত বছর যখন বিশ্বের প্রয়োজন ছিল, সেই সময় ভারত গোটা বিশ্বকে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সাহায্য করেছে। এখন ভারতকে গোটা বিশ্ব তার প্রতিদান দিচ্ছে।
মহামারী চলাকালীন কেন সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরি করা হবে?
গ্রেট ডিপ্রেসনের পরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ওয়াশিংটন ডিসি-র সম্পূর্ণ পুনর্নির্মাণ-সহ নতুন পরিকাঠামো তৈরিতে তিনি এত বেশি বিনিয়োগ করেলেন কেন? এই অর্থ তো অন্য কোথাও ব্যবহার করা যেতে পারত? তাঁর উত্তর ছিল একেবারে ধ্রুপদী শাসকের মতো। পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চক্রের সূত্রপাত ঘটায়। আধা-দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকরা কাজ পাবেন। সম্পর্কিত পরিষেবা এবং আতিথেয়তা খাতেও কর্মসংস্থান হবে। উৎপাদন ক্ষেত্রে চাহিদা তৈরি হবে। এক বছর ধরে লকডাউন এবং অর্থনৈতিক মন্দার পর ভারত সরকার যথাযথভাবেই উত্পাদনশীল অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় করছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, নগরীর পুনর্নবীকরণ করছে। সমাজের একেবারে নিচু অংশের মানুষের জন্য এটাই একমাত্র লাভজনক ক্ষেত্র। এটা বন্ধ করলে তাদের উপর চাপ আরও বাড়বে। সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পটি ইতিমধ্যে অনুমোদিত প্রকল্প এবং এটি এটি বন্ধ করার কোনও মানে হয় না এবং
এতে অর্থনৈতিক মন্দা আরও বাড়বে।
চিকিত্সা ক্ষেত্রের পরিকাঠামোগত ঘাটতি সংশোধন করা হয়েছে?
২০২০ সালের ২৫ মার্চ, ভারতে ১০,১৮০টি শয্য়া ছিল। আজ এই সংখ্যা ১৬ লক্ষেরও বেশি। একই সময়ে, আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ২,১৬৮ থেকে বেড়ে ৯২,০০০-এরও বেশি হয়েছে।
বর্তমান শিখরের আগে ভারতের গড় দৈনিক মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন। কয়েকদিনের মধ্য়েই এই চাহিদা বেড়ে প্রায় ৯,০০০ মেট্রিক টন হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ১,২০০ শতাংশ বেড়েছিল। এই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উত্পাদন চ্যালেঞ্জ ছিল বটেই, তবে তার থেকেও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল সিলিন্ডার, পরিবহন এবং পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করাটা। কয়েকটা দিন খুব বেদনাদায়ক গেলেও খারাপ সময় সম্ভবত চলে গিয়েছে। এখন সরবরাহ এবং তার পরিবহণ দুই জায়গাই তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো চলছে।
রেমডেসিভিরের মতো ওষুধের উত্পাদন মাসে ৪০ লক্ষ থেকে মাসে ১ কোটি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
লোকবল বাড়াতে সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিকেল ইন্টার্নদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রোটোকল এবং ইন্টার্নশীপের বেতনসহ মোতায়েন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একাধিক শহরে জরুরী ভুভিত্তিতে চিকিৎসা সুবিধা স্থাপনের করছে সশস্ত্র বাহিনী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগতভাবে তার সংস্থার তদারকি করেছেন।
পিএম কেয়ার্স তহবিলের অর্থে ভারতের বড় বড় হাসপাতাল গুলিতে ইন-সিটু অক্সিজেন উত্পাদনকারী প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে, ৫৫১টি নতুন উত্পাদক ইউনিটের বরাত অনুমোদিত হয়েছে। এই কাজে ডিআরডিও-কে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগেই আরও ১৬২ টি প্ল্যান্টকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে অতিরিক্ত ৫০০ টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
ফলে, মোট 1,200 টিরও বেশি অক্সিজেন প্ল্যান্ট হাতে থাকবেয। ফলে দেশের প্রতিটি জেলাতে শীঘ্রই মেডিকেল অক্সিজেন উত্পাদনের সুবিধা থাকবে। পিএম কেয়ার্স তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে দেশে তৈরি ভেন্টিলেটর যন্ত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। এঐর সঙ্গে ডিআরডিও এই ফান্ড ব্যবহার করে অক্সিজেনের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে অক্সিজেন নিয়ন্ত্রণ করার ১,৫০,০০০ টি যন্ত্র তৈরি করেছে।
৮০০ মিলিয়ন ভারতীয়কে বিনামূল্যে খাদ্য ও রেশন দেওয়ার প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।
এদিনই ডিআরডিও-র তৈরি একটি নতুন কোভিড-রোধী মুখ দিয়ে খাওয়ার ওষুধ, ২-ডিঅক্সি-ডি-গ্লুকোজ বা ২ ডিজি অনুমোদিত হয়েছে। এটি কোভিড সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খুবই কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এরপর কী?
সম্পূর্ণ আত্মোৎসর্গ ও সংকল্প নিয়ে ভারত করোনা দ্বিতীয় তরঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অনেকদিন পর গত সপ্তাহেই প্রথমবার নতুন সংক্রমণের ঘটনার সাত দিনের গড় হিসাব কমতে দেখা যাচ্ছে। চিকিত্সা পরিকাঠামোও এখন রোগীদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে র মতো রাজ্যে নতুন নতুন কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হচ্ছে। তাই আশা করা হচ্ছে যে ভারত খুব তাড়াতাড়ি এই কঠিন সময় পার করবে। সন্দেহাতীতভাবে, চিকিত্সা পরিষেবা কর্মীরা এবং অন্য়ান্য ফ্রন্টলাইন কর্মীকরাই দ্বিতীয় তরঙ্গের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই-এর নায়ক। তাদের এই উত্সর্গ এবং সেবা আশা করি শীঘ্রই কাজে লাগবে।
*লেখক নয়াদিল্লির পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ব্লুক্রাফ্ট ডিজিটাল ফাউন্ডেশনের সিইও এবং এর আগে মাইগভ এর কনটেন্ট বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন।