লকডাউনে ভারত জুড়ে ঘরবন্দি মানুষ
রাস্তার খিদেয় মরে যাচ্ছে কুকুর-বিড়ালরা
পেটের জ্বালায় বেরিয়ে আসছে তাদের বন্যতা
এমনই চরম নিদর্শন মিলল উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ায়
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সারা ভারতে চলছে লকডাউন। অধিকাংশ মানুষই বাড়ির মধ্যে তালাবন্দি। এই অবস্থায় রাস্তার দখল নিয়েছে কুকুর-বিড়ালরা। এদিকে, মানুষ ঘর থেকে না বের হওয়ায় অনেক জায়গাতেই খাবার জন্য কিছুই জুটছে না রাস্তার কুকুরদের। আর পেটের জ্বালায় বেরিয়ে আসছে তাদের বন্যতা, অদিমতা। এমনই বন্যতার চরম নিদর্শন মিলল উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি শহর আলমোড়া থেকে।
সাধারণত এই শহরে পর্যটকদের ভিড় থাকে। কিন্তু, লকডাউনে পর্যটক তো দূর স্থানীয়রাও রাস্তায় কেউ নেই। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই খাওয়ার জুটছে না শহরের পথ কুকুরদের। শুক্রবার বাড়িতে বন্দি অবস্থাতেই এই শহরের এক এলাকার বাসিন্দারা একটি বিড়ালকে তারস্বরে ডাকতে শোনেন। বারান্দায় বেরিয়ে দেখেন, একটি বেড়ালকে বেকায়দায় ঘিরে ধরেছে প্রায় ২০-২৫টি ক্ষুদার্ত কুকুরের দল। তাকে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। তারপর বাসিন্দাদের সামনেই কুকুরগুলি বিড়ালটিকে খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলে বলে জানা গিয়েছে।
সেই সময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন সংবাদমাধ্যমের কর্মীও। তাঁরা ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেও এগোতে সাহস করেননি। ক্ষুদার্ত কুকুরগুলি এমনই ভয়ঙ্কর মেজাজে ছিল যে তাঁরা তাঁদের ক্যামেরায় সেই ঘটনার ছবিও তোলার সাহস করতে পারেননি। শুধু সাংবাদিকরা নন, এদিনের ঘটনার পর এলাকাবাসীও ওই কুকুরদের নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। এভাবে চলতে থাকলে লকডাউনের মধ্যে কোনও প্রয়োজনে বাইরে বের হলে কুকুরগুলি মানুষকেও আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, এমনি সময় কয়েকজন সমাজকর্মী, স্থানীয় হোটেলওয়ালা, রেস্তোরাঁ থেকে তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া, এই পথ-কুকুরগুলি দিনেরবেলা মাংসের দোকানে আশেপাশে ঘুরঘুর করত। সেখান থেকেও তারা প্রচুর খাবার পেত। লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। সমাজকর্মীরাও আসতে পারছেন না। এই অবস্থায় ওই সমাজকর্মীদের খবর দেওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসী নিজেরাই ওই কুকুরদের কিছু কিছু খেতে দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
বস্তুত, লকডাউনের আগেই বিজেপি সাংসদ তথা পশু অধিকার কর্মী মানেকা গান্ধী এই সময়ে পথের কুকুর বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অনেক জায়গাতেই পশুপ্রেমীদের ভাইরাস সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই পথ কুকুরদের, রাস্তার বেড়ালদের খাওয়াতে দেখা যাচ্ছে। আবার অনেক শহরেই পথের পশুরা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। বিপদের সময় মানুষকে কিন্তু শুধু নিজেদের কথা ভাবলে চলবে না, সকলের পাশেই দাঁড়াতে হবে।