Happy New Year-এর পার্টিতে গান গেয়ে এখন নিভৃতবাসে ডিএম, করোনা আক্রান্ত এডিএমও, স্থগিত মালদহ বইমেলা

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এমনকী এই সব অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রবল উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। মালদহ জেলাশাসকের করোনা পরীক্ষার ফল যে পজিটিভ হতে চলেছে তা আগে থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। 

Parna Sengupta | Published : Jan 3, 2022 8:10 AM IST / Updated: Jan 03 2022, 02:22 PM IST

করোনা আক্রান্ত হলেন মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষী মিত্র (COVID 19 Positive Maldah DM Rajashi Mitra)। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক জেনারেল বৈভব চৌধুরী (COVID 19 Positive Maldah ADM-General Baibhav Chowdhury)। দুজনেই এখন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। দিন কয়েক ধরেই প্রবল জ্বর এবং সর্দি-কাশি-তে আক্রান্ত হন জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (Coronavirus Symtom)। ২ তারিখে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রাতে রিপোর্ট এলে দেখা যায় দুজনেই করোনা আক্রান্ত। এরপর থেকেই দুজনে গাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন (Home Isolation)। এদিকে, কোভিড ১৯-এর বেড়ে চলা সংক্রমণের মধ্যে মালদহ বইমেলাকে (Maldah Book Fair Postponed) স্থগিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মন খারাপ মালদহবাসীর। 

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আগমনের আগে কোভিড ১৯ নিয়ে আতঙ্ক প্রায় নিভু নিভু হয়ে গিয়েছিল সকলের মনে। বিশেষ করে ভোট পরবর্তী সময়ে যেভাবে লাগাতার কোভিড ১৯-এর হামলা এবং এতে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছিল তা জুলাই মাসের শেষ থেকে অনেকটা নেমে যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসেও কোভিড ১৯ নিয়ে কোনও আতঙ্ক সেভাবে ছিল-ই না। এরমধ্যে প্রশাসন থেকে শুরু করে আম-জনতা সকলেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গিয়েছে। ওমিক্রনের আগমনের খবর প্রকাশ্যে আসার পরও এই নিয়ে কোনও কড়া অবস্থান প্রশাসনকে নিতে দেখা যায়নি। আবার সেইসঙ্গে আম-জনতাও সুযোগ বুঝে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বর্ষ বিদায়ের উৎসবকে চেটেপুটে খেয়ে নিতে তৎপর ছিল। যার পরিণাম শুধু কলকাতায় নয় জেলা শহরগুলো এখন সমানভাবে ভুগছে। 

আরও পড়ুন-  মাস্ক ব্যাবহার না করায় ১৫ জনকে আটক করল পুলিশ, সচেতনতার জন্য সকাল থেকেই শুরু মাইকিং

আরও পড়ুন- India's COVID-19 Tally: ভারতে করোনার বিস্ফোরণ, গত তিন মাসের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছল সংক্রমণ

মালদহ-র জেলাশাক রাজর্ষী মিত্র আমলাতান্ত্রিক ঘেরাটোপের বাইরেই বিচরণ করেন। সহজে সমাজের সবস্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার তাঁর এই গুণ ইতিমধ্যে মালদহবাসীর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। জেলাশাসক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসাবেও নিজের পরিচিত এই জেলা-তে তৈরি করেছেন রাজর্ষী মিত্র। ২০২১-এর শেষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলেন জেলাশাক রাজর্ষী মিত্র। যেখানে তাঁকে গান গাইতেও দেখা যায়। ফেসবুক পোস্ট হওয়া জেলাশাসকের গানের ভিডিও-তে শয়ে শয়ে লাইক এবং কমেন্টও পরেছে। সেখানে অনেকেই লিখেছেন জেলাশাক রাজর্ষী মিত্র-র গানের গলা যে এতে ভালো তা জানা ছিল না। অনেকে জেলাশাসক অসামান্য প্রতিভাবান বলেও মন্তব্য করেছেন ফেসবুক পোস্টে। কিন্তু ওমিক্রনের বেড়ে চলা আক্রমণের মধ্যে এবং যেখানে গত এক সপ্তাহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বাংলার বুকে পাওয়া যাওয়ায় জেলাশাসকের এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা একটি বিবেচনার মধ্যে আনা দরকার ছিল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলশাসকের দপ্তরে জেলাশাসকের পাশেই বসে কাজ করতেন অতিরিক্ত জেলাশাসক-জেনারেল বৈভব চৌধুরী। তিনিও একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এমনকী বর্ষশেষে ঘটা করে মালদহে একটি পুষ্প প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মুখ্য অতিথিদের মধ্যে যেমন জেলাশাসক এবং প্রশাসনের গণমাণ্য কর্তারা ছিলেন তেমনি ছিলেন ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান সুমন আগরওয়াল এবং মালদহের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসক-জেনারেল-এর স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কোনও উদ্বেগের কারণ নেই। চিকিৎসকরা তাঁদের স্বাস্থ্যের উপর নজর রেখেছেন। 

ওমিক্রনের বাড়ন্ত এবং রাজ্যে আংশিক লকডাউনের জেরে আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না মালদহ বইমেলা কর্তৃপক্ষ। তাই সোমবার বইমেলা উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা আগে তা স্থগিত বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এদিন বইমেলার উদ্বোধন বলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছিলেন। ২০২১-এ বইমেলায় থাবা বসিয়েছিলেন কোভিড ১৯। ফলে এবার বইমেলা ঘিরে ছিল প্রবল উৎসাহ। কিন্তু বইমেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এদের সকলেরই মন খারাপ। তবে যেভাবে বইমেলাকে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ বই বিক্রেতা থেকে প্রকাশকরা। তাঁদের অভিযোগ, কোভিড ১৯-এর বেড়া চলা সংক্রমণে তাঁরাও আতঙ্কে ছিলেন। কিন্তু বারবারই তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে বইমেলা হবে। সোমবার সকালে আচমকাই বইমেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় যে বইমেলা হচ্ছে না। এখন স্টল ভেঙে বই নিয়ে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও গতি নেই বলেই জানিয়েছেন বই বিক্রেতারা। অন্যদিকে বইমেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে করোনাভাইরাসের নতুন করে যে প্রাদুর্ভাব হয়েছে তাতে তাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না। সাধারণ মানুষ বিপন্ন হোক এটা তাঁরা চাইছেন না। মেলা না হলে তাঁদেরও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে মেলা বাতিল করা ছাড়া কোনও গতি নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

Share this article
click me!