বুদ্ধদেব পাত্র: পুরুলিয়ার ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের সরজুমাতু গ্রামের বেশ কয়েকটি কালিন্দী পরিবার গ্রামের মোড়লদের কাছে বন্ধক রাখে রেশন কার্ড। ফলে লকডাউনে মরশুমে সরকার ঘোষিত বিনাপয়সার রেশন তুলতে পারেনি তারা। তাই কার্যত অনাহারে থাকতে হচ্ছিল ওই পরিবারগুলোকে। বুধবার এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় সেই খবর প্রকাশিত হয়। আর তারপরই টনক নড়ে সকলের। প্রশাসনের উদ্য়োগে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ভেতর বন্ধক দেওয়া রেশন কার্ড ফিরে পায় ওই কালিন্দী পরিবারগুলো। সেইসঙ্গে পরিবারপিছু ২০ কেজি করে চালও পৌঁছিয়ে দেন খাদ্য় দফতরের আধিকারিক।
আরও পড়ুন- পরাণমুখ সবুজ-নালি ঘাসে ঢাকা পড়েনি মানবিকতা, লকডাউনে এক অন্য কাহিনি লিখছে গলফগ্রিন
আরও পড়ুন- দিদির কথায় দান, রাজ্য়ের ত্রাণ তহবিলে ৫০০টাকা স্কুলছাত্রীর
আরও পড়ুন- লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের তিনি প্রাণের মানুষ, দুবেলা পেট ভরে তাঁদেরকে খাওয়াচ্ছেন পাটুলির দাশু সাহা
পুরুলিয়ার এই ঝালদা মহকুমার সরজুমাতু গ্রামের এই মানুষগুলো মূলত ডোম সম্প্রদায়ের। সমাজের নিম্নবর্গের এই মানুষগুলো কখনও কাজের খোঁজে পাড়ি দেন ঝাড়খণ্ডে, কখনও-বা অন্য় কোথাও। মধ্য়বিত্তের ঘরে যেমন সোনা, ঠিক তেমনই এই মানুষগুলোর কাছে রেশন কার্ডই ঘরের সবচেয়ে বড় সম্পদ। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য় বা চিকিৎসার কারণে কোনও সমস্য়ায় পড়লে এঁরা রেশন কার্ড বন্ধক দিয়ে টাকা ধার নেন। পরিবারে ক-টা কার্ড রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে ঋণের পরিমাণ। কখনও ৫ হাজার টাকা, কখনও-বা ২২ হাজার টাকায় চলে এই বেআইনি বন্ধকি কারবার। অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা অনেকটা যেন সোনা বন্ধক রাখার মতো করেই রেশন কার্ড বন্ধক রেখে টাকা ধার দেন। চলে সুদের কারবার। আর, যে পরিবারের কার্ড বন্ধক দেওয়া হয়, তাদের তরফ থেকে রেশন ডিলারকে বলে দেওয়া হয়, যিনি ওই কার্ডগুলো নিয়ে আসবেন, তাঁকেই যেন রেশন দেওয়া হয়। এটাই এখানকার রেওয়াজ।
আরও পড়ুন- ২২ হাজার টাকায় বন্ধক রেশন কার্ড, লকডাউনে তাই রেশনহীন পুরুলিয়ার কালিন্দীদের গ্রাম
বছরের অন্য় সময়ে কোনও-না-কোনও কাজ জোগাড় করে নিতে পারলেও লকডাউনের মরশুমে তা আর সম্ভব হয়নি এই পরিবারগুলোর পক্ষে। এদিকে রেশন কার্ডও বন্ধক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কার্যত অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছিল সরজুমাতু গ্রামের শ্যামলা কালিন্দী, ইন্দ্র কালিন্দী, রাধা কালিন্দী আর ভগীরথ কালিন্দীদের। বুধবার এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় সেই খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। ঝালদা ১নম্বর ব্লকের বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস বুধবার রাতেই সরজুমাতু গ্রামে গিয়ে বন্ধক রাখা কার্ডগুলি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। যাঁরা বেআইনিভাবে কার্ড বন্ধক রেখেছিলেন তাঁদেরকে দিয়ে মুচলেখা লিখিয়ে নেওয়া হয় যে, ভবিষ্যতে যেন আর এরকমভাবে রেশন কার্ড বন্ধক রাখা না হয়। বৃহস্পতিবার নিজের দফতরে ডেকে কার্ডগুলি কালিন্দীদের হাতে তুলে দেন রাজকুমার বাবু নিজে।
এদিকে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার খবরের জেরে কার্ড ফেরত পেয়ে খুশি কালিন্দী পরিবারের সদস্য়রা ধন্য়বাদ জানান এই নিউজ পোর্টালকে। শুধু কার্ড ফেরতই নয়, খবর পেয়ে ঝালদা এক নম্বর ব্লক খাদ্য নির্বাহক সুদীপ্ত জানা ওই পরিবারগুলোর কাছে ২০কেজি করে চাল পৌঁছিয়ে দেন। আর, বেআইনিভাবে যাঁরা রেশন কার্ড বন্ধক রেখেছিলেন, তাঁদের অন্য়তম গুনা কুইরি এদিন কাঁচুমাচু মুখে বলেন, "২২হাজার টাকাতেই কার্ড বন্ধক রেখেছিলাম। আজ নিঃশর্তে কার্ডগুলো ফেরত দিয়েছি। সঙ্গে মুচলেকাও দিয়েছি, আর কখনও এই কাজ করবো না।"