
দূর্গা পুজোর মহাসপ্তমী (Durga puja saptami) তিথিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার হল নবপত্রিকা (nabapotrika) স্নান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবী দূর্গাকে প্রকৃতি হিসেবে পুজো করা হয়। কারণ পুরাণ অনুযায়ী নবপত্রিকা আসলে দেবী দূর্গার ৯টি রূপ। দেবীর নটি রূপকে একত্রে পুজো করা হয় নবপত্রিকার মাধ্যমে।
নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি গাছের পাতা। কিন্তু মহাসপ্তমী তিথিতে যে পুজো করা হয় সেখানে নটি গাছ একসঙ্গে পুজো করা হয়। প্রতিটি গাছেই দেবী কোনও না কোনও রূপে অধিষ্ঠান করেন।
১. কলাগাছ- এই গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রাহ্মণী।
২. কচু- অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা।
৩.হরিদ্রা বা হলুদ- অধিকাষ্ঠাত্রী দেবী উমা
৪. জয়ন্তী- অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী।
৫. বিল্ব বা বেল-অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা ।
৬. ডালিম বা বেদানা- অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা।
৭. অশোক- অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা
৮. মানকচু-অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা।
ধান- অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
গবেষকদের মতে নবপত্রিকা প্রকৃত পক্ষে শস্যের পুজো। বিশেষজ্ঞ শশিভূষণ দাশগুপ্ত লিখেছেন, শস্যকেই বধূরূপে বা দেবী রূপে পুজো করা হয়। এটাই মূলত শারদীয়ার পুজো। প্রাচীনকালে দূর্গার সঙ্গে প্রকৃতিকে মিলিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা করা হত। অন্যদিকে ইংসনারায়ণ ভট্টাচার্য দুর্গা পুডোর সঙ্গে শস্য পুজোর অনুষঙ্গ স্বীকার করলেও শাকম্ভরী তত্ত্বে নবপত্রিকার উৎস মানা হয়নি। দূর্গা পুরাণে নবদূর্গার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নবপত্রিকার কথা নেই। আবার কালিকা পুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। কিন্তু সপ্তমী তিথিতে পত্রিকা পুজোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ না থাকলেও কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই প্রথার উল্লেখ রয়েছে।
মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের রীতে এখন প্রচলিত। কলাগাছের সঙ্গে আরও আটটি গাছ বা গাছের ডাল একত্রিত করে নবপত্রিকা তৈরি করা হয়। তারপর সেটিকে একটি লালপাড় সাদা শাড়িতে মুড়ে অনেকটা নববধূর আকার দেওয়া হয়। মূলত পুরোহিতই নবপত্রিকা স্নান করান। দেবীর ডানদিকে গণেশের পাশেই স্থাপন করা হয় নবপত্রিকাকে। অনেকে নবপত্রিকাকে কলাবউও বলে থাকেন।