মুর্শিদাবাদের ঢাকের ঢ্যাংকুর ঢ্যাংকুরে মাততে চলেছে মুম্বইয়ের দুর্গাপুজো। এবার মুম্বইয়ে পাড়ি দিচ্ছেন বহরমপুরের বাঁশচাতর গ্রামের ঢাকি লালু দাস ও তাঁর দলবল। সময় হাতে আর একদমই নেই। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে নিজেদের কাজকে নিপুন ভাবে মেলে ধরতে তাই এখন নাওয়া, খাওয়া ভুলেছেন লালু ও তাঁর দলের সদস্যরা।
বহরমপুর সদর মহকুমার বেলডাঙা থানার বাঁশচাতর গ্রামে বাস লালুর। এলাকায় ঢাক বাজানো নিয়ে খ্যাতি রয়েছে তাঁর। এই তল্লাটে লালুর মত অধিকাংশের পেশাই হল ঢাক বাজানো। বংশপরম্পরা ধরে এটাই তাঁদের রুজি। পড়াশোনার প্রাথমিক গণ্ডী পেরোনোর পরেও লালুদের মত অনেকেই এই পারিবারিক পেশার সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। এর জন্য বিকল্প কাজের সুযোগের অভাবকেই দায়ি করছেন বাঁশচাতর গ্রামের যুবকরা।
বাবা, ঠাকুরদার সঙ্গে ছোটবেলায় কাঁশর বাজিয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল, আর একটু বড় হতেই কাঁধে ঢাক নিয়ে বেরিয়ে পরা। গ্রাম ছাড়িয়ে শহর পুজোর সময় সবখান থেকেই ডাক আসে তাঁদের। আর এই ঢাক বাজিয়েই বিদেশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে লালুদের। ঘোরা হয়ে গিয়েছে লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, আমেরিকা, রাশিয়া, ভুটান। এবারও পুজোয় ডাক এসেছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই থেকে। সেই শহরের এক খ্যাতনামা পুজোকমিটির ডাকে সদলবলে মুম্বই পাড়ি জমাচ্ছে লালুরা।
ঢাক বাজিয়ে যেমন সুনাম কুড়িয়েছেন লালু দাস তেমনি আন্তর্জাতিক স্তরে জুটেছে পুরস্কারও। ২০০৬ সালে লালুদাসকে তাঁর কৃতিত্বের জন্য সম্মানিত করা হয় ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ঢাক বাজানো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর থেকেও পুরস্করা নিয়েছিলেন লালু। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন হেমা মালিনীও।
নিজের কাজের জন্য সামাজিক স্বীকৃতি মিলেলও আক্ষেপ শোনা যায় লালু দাসের গলায়। সরকার মাসিক ভাতা চালু করলেও তা নেহাতই সামান্য। সারা বছর সবমিলিয়ে আয় হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এই টাকায় সংসার চলে না তাই কখনও রিক্সা চালিয়ে আবার কখনও পরের জমিতে কাজ করে দিন গুজরান করতে হয় লালুদের। বিদেশের মাটিতে বহুবার দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই শিল্পীরা। কিন্তু সেভাবে সরকারের থেকে পাননি আর্থিক সাহায্য। তবুও মনে ক্ষোভ থাকলেও পৈত্রিক এই শিল্পকলাকে ছাড়তে চান না লালুর মত ঢাকিরা।
পুজো আসলে রোজগার বাড়লেও ঘরের মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকতে হয় ঢাকিদের। তাই দশমীতে সকলের উৎসব শেষ হলেও হাসি ফোটে ঢাকিদের পরিবারে। বাড়ির লোকটির ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকে ঢাকি পাড়া।