বাংলার বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম এই পুজো। ১০৪-এর ঐতিহ্যময় এই পুজোয় দেখা মেলে যাবতীয় সাবেকি রীতির। শুধু তাই নয় এখানে দেবীর রূপও অভিনব। দশভূজা, শক্তিরূপেন নয়, হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী বাড়িতে দেবী পূজিত হন হরগৌরী রূপে।
সময়টা ১৯১৮ সাল। হাওড়া মাকড়দহ অঞ্চলে বাস ছিল শর্করা ও ঘিয়ের ব্যবসায়ী কেদারনাথ শ্রীমানী। দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও হরিপদকে নিয়ে ছিল সংসার। এক ভোরে বাড়ির দালানে হরগৌরীর কাঠামো দেখতে পান বিশ্বনাথ শ্রীমানীর স্ত্রী । ঠাকুরের আদেশ ভেবেই শুরু হয় ধুমধাম করে পুজো করা হয় দেবী দুর্গার। সেই থেকেই শুরু হল হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী পরিবারের দুর্গা পুজো।
বাংলার বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম এই পুজো। ১০৪-এর ঐতিহ্যময় এই পুজোয় দেখা মেলে যাবতীয় সাবেকি রীতির। শুধু তাই নয় এখানে দেবীর রূপও অভিনব। দশভূজা, শক্তিরূপেন নয়, হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী বাড়িতে দেবী পূজিত হন হরগৌরী রূপে। স্বামী মহাদেব ও চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, ও সরস্বতীকে নিয়ে স্বপরিবারে পূজিত হন দি দেবী। পুজোয় কোনও বলির প্রথা নেই। ফল মিষ্টি নৈবেদ্য দিয়েই হয় দেবীর প্রসাদ। মূলত নারকেলের তৈরী সমস্ত মিষ্টান্ন পূজার প্রসাদ হিসেবে প্রদান করা হতো দেবী সন্মুখে । তাছাড়া থাকতো বিভিন্ন ধরনের ফল। প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিনে বাড়ির দালানে কাঠামোপুজো করে শুরু হল প্রতিমা তৈরির কাজ।
আরও পড়ুন - বেহালা ফ্রেন্ডস-এর এবছরের থিম ‘দুর্গাযাপন’, জেনে নিন এর অর্থ কী, কী রয়েছে পুজোর বিশেষত্ব
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজন কমেছে মাকড়দহ শ্রীমানী বাড়ির পুজোরও। করোনার জেরে বাড়ির দালান ছেড়ে প্রতিমা আসে কুমোরটুলি থেকেই। আগেকার জৌলুস হারালেও পুজোর আচারে তেমন বদল আসেনি। ষষ্ঠীর দিন পরিবারের সকালেই চলে আসেন হাওড়া মাকড়দহের বাড়িতে । চার পাঁচদিন কাটে একসঙ্গেই। তারপর দশমীতে প্রথা মেনে কাঁধে চেপে বিদায় নেন হরগৌরী। শুধু পরিবারের লোকই নয় দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসতেন এই পুজোয় অংশ নিতে । পুজোর চার দিন থাকতো বাড়িতে সকলের জন্য ভোজের আয়োজন । এখনও বিশর্জনের সময় মাকে সিঁদুর দান করার জন্য মাকড়দহ মাকড়চন্ডী মন্দিরে প্রতীক্ষা করেন হাজারো মানুষ। জৌলুস কমলেও আগেকার সেই ঐতিহ্য এখনো বজায় রেখেছে হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী পরিবার।