মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলের দুর্গাপুজো পার করেছে ৪৫০ বছর, আজও আনন্দে মেতে ওঠে নবাবনগরী

প্রায় সাড়ে চারশো বছরের এক মন্দিরে একসঙ্গে অধিষ্ঠান করেন ৩ দুর্গা। দশভুজা নন, ৩ দেবীই এখানে চতুর্ভুজা রূপে অধিষ্ঠিত। 

বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের এক মন্দিরে একসঙ্গে অধিষ্ঠান করেন ৩ দুর্গা। একসঙ্গে তিন দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে একই মন্দিরে। রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজোয় এটাই আকর্ষণীয় বিশেষত্ব। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুপরবর্তীকালে বাংলায় প্রথম স্বাধীন নবাব হয়ে আসীন হল মুর্শিদকুলি খাঁ। তাঁর শাসনকাল থেকে একনাগাড়ে চলে আসা এই পুজো ছাড়িয়ে গিয়েছে ৪৫০ বছরেরও বেশি সময়। মুর্শিদাবাদের গুড়া পাশলা রায়চৌধুরী পরিবারে একই মন্দিরে তিন দুর্গার আরাধনাকে ঘিরে আজও আনন্দে মেতে থাকে নবাবনগরী।

দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা উৎসবে যোগ দিতে হাজির হন রায়চৌধুরী বাড়ির এই তিন দুর্গার পুজোতেই। সোনালি ডাকের সাজে সেজে ওঠেন রায়চৌধুরিদের বুড়ি মা। বাকিদের ছেলে মেয়েদের সাজ হয় অতি সাধারণ। প্রতিমার পূর্ব দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয় চতুর্ভুজা বুড়ি মাকে, তারপর কৃষ্ণপদ ও শেষ প্রান্তে থাকেন গিরিশ চন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত দেবী দুর্গা। মজার কথা হল, এই দুর্গার ছেলেদের আসনের মধ্যে হয়ে গেছে অদলবদল। কার্তিক থাকেন গণেশের আসনে আর গণেশ থাকেন কার্তিকের আসনে । বহুকাল আগে থেকেই এই অদল বদল ঘটে গেছে বলে জানান পরিবারের কর্তা দুকড়ি রায় চৌধুরি। 

Latest Videos

স্থানীয়দের মধ্যে কথিত আছে, মণ্ডপের জায়গায় আগে ছিল জঙ্গলে ঘেরা উঁচু ভূমি বা ঢিবি। বহুকাল আগে এক সন্ন্যাসিনী গ্রামে এসে ওই জঙ্গলে ঘেরা উঁচু ঢিবিতে পঞ্চমুন্ডি আসন স্থাপন করে সাধনায় রত হন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। এরপর সেই সিদ্ধা সন্ন্যাসিনী পঞ্চমুন্ডি আসনে ঘট স্থাপন করে দশভূজার আরাধনা শুরু করেন। বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে গ্রামবাসীরা ‘বুড়িমা’ নামে চিনত। তাই সন্ন্যাসিনীর প্রতিষ্ঠিত এবং পূজিত দুর্গা তখন থেকেই ‘বুড়িমা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

দশভুজা নন, ৩ দেবীই এখানে চতুর্ভুজা রূপে অধিষ্ঠিত। তাঁদের উপাসনায় নিয়োজিত থাকেন মোট ৪ জন পুরোহিত। তাঁরা একসঙ্গে এই পুজো করেন। মায়ের আরতি ও নবমীতে একহাজার আটটি বেলপাতা দিয়ে হোমের আয়োজন করা হয়। পুজোর সূচনাকালে এখানে মহিষ বলির রীতি থাকলেও যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই প্রথা উঠে গেছে। তবে, ষষ্ঠীর দিন থেকে পাঁঠা এবং মেষ বলির প্রচলন রয়ে গেছে এখনও। মায়ের ভোগের বিশেষত্ব হল, এই ভোগে অন্ন থাকে না, প্রাচীন রীতি মেনে দেবীকে নৈবেদ্য হিসেবে লুচি, ছানা, মাখন দেওয়া হয়। 

গুড়া পাশলা রায়চৌধুরী পরিবারের অন্যতম সদস্য সুকুমার রায়চৌধুরী বলেন,”প্রতিমা বিসর্জনের পর এলাকার সমস্ত মানুষ মন্দির প্রাঙ্গনে হাজির হয়ে প্রণাম ও কোলাকুলি করে, তবেই বাড়ি ফেরেন , এটাই বুড়ি মায়ের মাহাত্ম্য।” দশমীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে পাশলা দীঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পর নিষ্ঠা ভরে গ্রামের মানুষ বুড়ি মায়ের থানে প্রণাম করেন। মাতৃমূর্তিকে জাগ্রত জ্ঞানে ভক্তি করার রেওয়াজ আজও অমলিন।

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'৩০ সেকেন্ডে যাদবপুর দখল করছিল মদন, এখন নিজের এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে', চরম কটাক্ষ অর্জুন সিংয়ের
IND vs NZ Final : দুবাইয়ের ফাইনালে ভারত-নিউজিল্যান্ড : শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে দুই দল | CT 2025 Final
'তৃণমূলের উত্থান Kolkata থেকে, পচনও শুরু কলকাতা থেকেই' অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ | Adhir Chowdhury | TMC
যাদবপুরে নৈরাজ্য! ব্রাত্যদের গ্রেফতারির দাবী জানিয়ে শুভেন্দুদের ধিক্কার মিছিল | Suvendu Adhikari
'ম্যায় হু না' দিল্লির মহিলাদের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা | Rekha Gupta Delhi CM