পুজোর ভিড়ে নেই দিলীপ ঘোষ, চললেন নৈনিতাল, পুজোর আড্ডায় অকপট বিজেপি নেতা

সারাবছরের কাজের ব্যস্ততা থেকে সময় বের করে পুজোর চারদিন প্রতিবছরই ঘুরতে যাবার চেষ্টা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ - সভাপতি দিলীপ ঘোষ । এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় দিলীপ ঘোষ।

সাংবাদিকতার সূত্রেই দেবের সাথে আলাপ হয়েছিল আমার অনেকদিন আগে। শুনেছিলাম বিজেপির সর্বভারতীয় সহ - সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার  অনুমোদন নাকি খুবই প্রয়োজন ।  তাই খানিক ধান্দাতেই তার সঙ্গে যেচে করেছিলাম আলাপ । তারপর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক অভিমত নিতে দিলীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী দেবের  অনুমোদন নিয়েই প্রায়ই গেছি ৬ নম্বর মুরলীধর সেন স্ট্রিটের পার্টি অফিসে।  কিন্তু এবারের গল্পটা একটু অন্যরকম ছিল।  বিজেপির  সর্বভারতীয় সহ - সভাপতি সর্বক্ষণের এই ছায়াসঙ্গীটিকে যখন ফোন করে  বললাম, টেলিফোনিক ইন্টারভিউ নিতে চাই দিলীবাবুর। দেব প্রথমেই বলেছিলেন,'খুব ব্যস্ত। এখন হবে না। '..কিন্তু এটা  যে কোনও  তথাকথিত রাজনৈতিক ইন্টারভিউ নয় সেটা আমি জানিয়েছিলাম ওনাকে সে দিন-ই।  বিজেপির সর্বভারতীয় সহ - সভাপতি  ব্যক্তিগত জীবনের পুজো সম্পর্কে জানতে চাই এইবিষয়টা ওনার খুব অদ্ভুত লেগেছিলো। সে কারণেই কিছু প্রোবেবল কোয়েশ্চেন করে উনি বুঝে নিতে চেয়েছিলেন ব্যাপারটা ঠিক কি ? তারপর গম্ভীর ভাবে বললেন 'কাল কল করুন।'

পরের দিন যথারীতি ঠিক সময়ে আবার কল করলাম ওনাকে।  উনি বললেন যে  ১০ মিনিটে ফাঁকা হয়ে যাবেন দিলীপবাবু।  তাই ১০ মিনিট পর কল করতে। ১০ মিনিট পর আবার কল করলে কলটি তুললেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষ । সংক্ষেপে অভিবাদন  জানিয়ে,নিজের পরিচয় দিলাম। তারপর কি কারণে কল করেছি তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শুরু করলাম ইন্টারভিউ। প্রতিবছর এই সময়টা কিভাবে কাটান নিজের মতো করে সেই গল্পই শোনালেন তিনি।   

Latest Videos

প্রশ্ন--  পুজোর কটা দিন কি রাজনীতিকে ভুলে থাকা যায়?

দিলীপ ঘোষ- দেখুন রাজনীতি আমাদের সবসময় চলতেই থাকে কোথাও কোনো সমস্যা হলে বিরোধী হিসাবে আমাদের আন্দোলনও করতে হয়। কিন্তু আগে তো সময় কম থাকতো  খুবই চাপ যেত কিন্তু এখন চেষ্টা করি পুজোর অর্ধেকটা এখানে থাকার আর পুজোর অর্ধেকটা বাইরে থাকার। বাইরে যাওয়া মানে কোনও তীর্থস্থান বা কোনও মনোরম স্থানে বেড়াতে যাওয়া। গত কয়েক বছর চেষ্টা করেছি সপ্তমি পর্যন্ত থেকে পুজো উদ্বোধন করে বাংলার বাইরে চলে যাই এই কদিন একটু শান্তিতে থাকার জন্য। ঝুট-ঝামেলা,মাইকের আওয়াজ, ভিড়ভাড় কম এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করি। এতে বিশ্রাম হয়ে যায়। আর এই যে এত বেশি উত্তেজনা থাকে আওয়াজ থাকে তার থেকে দূরে থাকা যায়। 

প্রশ্ন- তারমানে  পুজোর সময় ফুল-ফ্লেজেড ঘুরতে যাওয়া হয় আপনার ?

দিলীপ ঘোষ- মোটামুটি,সারাবছর তো আর সময় থাকে না। তাই এই পুজোর সময়টায় যাওয়ার চেষ্টা করি।  কয়েকদিন একটু ঘুরে আসি, তখন তো আর কোনও কাজও থাকে না বিশেষ। সবাই ব্যাস্তও থাকে না, পুজোর পরিবেশ থাকে এখানে তাই আমারও একটু ফ্রি টাইম থাকে।  

প্রশ্ন- এমন একটা পুজো যেখানে নিশ্চিন্তে ভুরিভোজ আর ঘুম দিয়েই দিন কেটে গিয়েছে

দিলীপ ঘোষ-  না ঘুম তো সেভাবে হয় না বেশি।  এমনিতেই ঘুম হয় না আর কাজ থাকলে তো আর ঘুমোনোর সুযোগও থাকে না। অভ্যাস হয়ে গেছে যে একটা লিমিটেড সময়ই ঘুম হয়।  কিন্তু আড্ডা গল্প খাওয়া-দাওয়া হয়। কোনও না কোনও জায়গায় হয়। যেমন কোনও একটা নতুন জায়গায় বা কারুর বাড়িতে  গেলাম একটা নতুন পরিবেশে এসব টেনশন ঝামেলা থেকে। এইভাবেই চেষ্টা করি, আর সেটা করিও।  গতবার এভাবেই করেছিলাম-- এখন থেকে সপ্তমীর দিন বেরিয়েছিলাম ট্রেনে করে দিল্লি হয়ে হরিদ্বার হয়ে তারপরের দিন ওখান থেকে হৃষিকেশ কেদারনাথ-বদ্রীনাথ সব দর্শন করে তারপর ফিরেছিলাম। তো ওটাই একপ্রকার দর্শনও হল,অন্য পরিবেশে একটু ঘোরা হল আর শান্তিতে থাকাও হল। 

 

প্রশ্ন-- এবারের পুজোয় কি  প্ল্যান ?  কোথাও  বেড়াতে যাচ্ছেন এবছর পুজোয় ?
দিলীপ ঘোষ-  এবারে ওই পুজো দেখা আর বেড়ানো দুটোই হবে এরকম সম্ভাবনা আছে একটু আমাদের একজন কর্মী নেতার বাড়ি আছে ভীমতালে। নৈনিতালের কাছে।  বহুবছর তারা ওখানে দুর্গাপুজো করেন। আমাকে বলেছেন বেশ কয়েকবার, এবার  ইচ্ছে আছে যাওয়ার। হিমালয়ের দেবী দুর্গার দর্শণও হবে পুজোতেও থাকা হবে। প্লাস আশপাশটা ঘোরাও হবে। 


 

প্রশ্ন- মণ্ডপে মণ্ডপে যান প্রতিমা দেখতে

দিলীপ ঘোষ-  সেটা একটা বয়সে করেছি। ছেলেদের নিয়ে গোটা রাত ধরে ঠাকুর দেখা প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে ঘোরা,হেঁটে-হেঁটে ক্লান্ত হয়ে স্কুলের বাচ্চারদের নিয়ে যখন সংঘের কাজে ছিলাম তখন বেরতাম। আর ইদানিং ওই এক দুটো জায়গায় গেলাম,ঠাকুর দেখলাম, ভিড়টা বেশি থাকলে যে সমস্যা হয়ে যায়। তবুও কালীপুজো, দূর্গাপুজোতে দু-একটা যেটা ভালো প্যান্ডেল করেছে গিয়ে দেখে আসি। এগুলো একটু-আধটু করার চেষ্টা  করি 

প্রশ্ন-  পুজোর দিনগুলো কোন রুটিনে দিনটা শুরু করেন?

দিলীপ ঘোষ- না আমার যে রুটিন থাকে সেটা খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। রোজ সকালে ৫ টার সময় বেরিয়ে হাঁটা-হাঁটি করা, এক্সারসাইজ করা, তারপর এক দু ঘন্টা বাইরে থাকা। মানুষজনের সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ  করা। খাওয়া-দাওয়া, চা -খাওয়া বা কোথাও বসে আড্ডা মারা।  তখন অনেকেই রিলাক্স মুডে থাকে। তাই ওই একটু গল্প-স্বল্প হয়। যেহেতু পুজোর সময়টা  অন্য কোথাও যাবার ব্যাপার থাকে না,  তারপর বিকালে দেখা করতে কেউ না কেউ আসেন, সেখানে আবার আড্ডা হয়। এরকমই একটু রিলাক্স মোডে কাটে। 


 প্রশ্ন- এমন কোনও পুজো! জাস্ট রাজনৈতিক কারণে অন্যদিকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে?

দিলীপ ঘোষ- হ্যাঁ, কোনও বিশেষ ঘটনা হয়ে গেছে হয়তো- সেক্ষেত্রে হয়েছে।   কোনও অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল বা কিছু হয়ে গেল আমাদের, সেখানে যেতে হয় কিছু করার চেষ্টা করতে হয় ।.সহযোগিতাও করা হল, সমস্যার সমাধানও হল। মানুষ যাতে বেশি বিভ্রান্ত না হন, বিব্রত না হন- পুজোর সময়  সেটা দেখার  চেষ্টা করি।  এক-আধবার সে রকমই হয়েছে। কখনও পুজোর সময় বন্যাও হয়েছে। ইদানিং তো অতটা বন্য হয় না। কিন্তু আগে আমরা দেখেছি দুর্গাপুজোর সময় বন্যা প্রায়ই হতো।  কয়েকবছর ওটা হয়নি, যদিও উত্তর বাংলায় দক্ষিণ বাংলায় কিছু জেলাতে বন্যার জল নামেনি।  দু তিন বছর আগেও ঘাটাল মেদিনীপুর সবং লাইনে বন্যা হয়েছিল। আমি গেছিলাম সেখানে পুজোর আগে।  এত জল জমে গিয়েছিল যে তখনও তা বুক সমান ছিল।  আরামবাগ- এইসব এলাকায় বৃষ্টির জন্য বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে। গত দু-বছর বৃষ্টি একটু কম।  এবছরও কম। জানি না ভগবান কি করবেন সময় আছে।  কিন্তু সেবারে কিন্তু খুব বন্যা হয়েছিল দুবার তিনবার করে বন্যা হয়েছিল সেই জায়গায়।  সেটা দেখতে গেছি। এইসব ব্যাপার থাকে , সেইসব লোকেদের চিন্তা থাকে যারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় আছেন পুজোর আনন্দ করতে পারছেন না তাদের জামাকাপড় বা অন্যান্য জিনিসের ব্যবস্থা করা এসবগুলো থাকে 

প্রশ্ন- পুজোর দিনে পুরনো দিনের বন্ধুদের সঙ্গে কি আড্ডাটা আজও হয়?

দিলীপ ঘোষ- হ্যাঁ,পুরনো বন্ধ-বান্ধব, কারুর বাড়িতে চলে গেলাম, ওখানে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করলাম। আরও ৫ জন এল। ওখানে গল্প হল।  এখানে থাকলে ওটাও হয়। 

প্রশ্ন- এক কথায় যদি জানতে চাই পুজো মানে আপনার জীবনে কি?

দিলীপ ঘোষ- দেখুন পুজোতে সার্বিকভাবে সমাজে একটা আনন্দের পরিবেশ তৈরী হয়। কিন্তু আমার একটু রিলাক্স করি।  কাজের চাপ কম ,চিন্তা বেশি নেই, দৌড়োদৌড়ি নেই।  আমরা এই কদিন একটু বিশ্রাম করি। ঠান্ডা মাথায় ফোন করলাম, দেখা করতে গেলাম কারুর সঙ্গে, বসে একটু খাওয়া-দাওয়া হল, আড্ডা হল- এটাই করার চেষ্টা করি। আর গত কয়েক বছর ধরে এটাই চলছে। 

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

ট্যাব কেলেঙ্কারিতে নয়া মোড়! এবার পুলিশের জালে দিনহাটার এক শিক্ষক, দেখুন | Bengal Tab Scam
'ভাইপোকে উপড়ে ফেলবো' রুদ্রমূর্তিতে শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari | BJP | TMC
'উল্টো ধুয়ে সোজা করব' রুদ্রমূর্তিতে শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari
‘মুখ্যমন্ত্রী গরীবদের আশ্বাস নিয়ে সেটা লুঠ করছেন’ ট্যাব দুর্নীতিতে মমতাকে আক্রমণ দিলীপ ঘোষের
ট্যাবের টাকা মুহূর্তে হাওয়া! কাদের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে , এবার গোসাবায় | Bengal Tab Scam | Gosaba