
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও মন্দিরের নাম সেই মন্দিরে স্থাপিত দেবতার মূর্তি বা সেই স্থান বা মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপর ভিত্তি করে হয়। কিন্তু, হরিদ্বারে (Haridwar) এমন একটি কালি মন্দির আছে, যেখানে মায়ের মূর্তি পূর্ব দিকে মুখ করে থাকলেও, মন্দিরটির নাম দক্ষিণ কালী মন্দির (Siddhpeeth Shri Dakshin Kali Mandir)। এই ধরনের দক্ষিণ কালী মন্দির সারা ভারতে মাত্র দুটি রয়েছে। একটি এই হরিদ্বারের অদ্ভূত মন্দিরটি, আর অপরটি আমাদের কলকাতার দক্ষিণেশ্বর মন্দির (Dakshineswar Kali Temple)। ২০২১ সালের কালিপুজোর (Kalipuja 2021) প্রাক্কালে আসুন জেনে নিই এই মন্দিরে মাহাত্ব সম্পর্কে।
উত্তরাখণ্ডকে (Uttarakhand) বলা হয় দেবভূমি। প্রধানত মহাদেবের ধাম হলেও, অন্যান্য বহু দেবদেবীদের মন্দিরই রয়েছে উত্তর ভারতের এই রাজ্যে। তাদের অন্যতম হরিদ্বারের এই দক্ষিণ কালী মন্দির। হরিদ্বারে চণ্ডীঘাটের কাছেই অবস্থিত এই দক্ষিণ কালী মন্দির। হরিদ্বার-নজিবাবাদ হাইওয়ে থেকে চিলা যাওয়ার রাস্তায় পড়ে। দেবীর মূর্তি পূর্বদিকে মুখ করে থাকলেও, এখানে গঙ্গা বয়ে চলেছে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে। সেই থেকেই এই কালী মন্দিরের নাম হয়েছে দক্ষিণ কালী মন্দির।
এটি দেশের অন্যতম সিদ্ধপীঠ, অর্থাৎ এখানে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ ও সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। মন্দিরের সেবায়েত এবং স্থানীয়দের দাবি হরিদ্বারের এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গুরু কামরাজ। কথিত আছে, মা কালী স্বপ্নে বাবা কামরাজকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তাঁরই আহ্বানে গঙ্গার তীরের এই মন্দিরে গিয়ে বসবাস করা শুরু করেছিলেন অলহা ও তাঁর স্ত্রী মছলা। বাবা কামরাজ এই মন্দিরে তাঁদের দীক্ষাও দিয়েছিলেন।
এছাড়া, ভক্তদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মন্দিরে বাস করে সাদা এবং কালো রঙের একজোড়া নাগ-নাগিনী। আর থাকে একটি অজগর সাপ। তবে কেউই তাদের দেখতে পায় না। লোককথা অনুযায়ী শুধুমাত্র শ্রাবণ মাসেই কেউ কেউ তাদের দেখতে পায়। তবে নাগ-নাগিন বা অজগরকে কেউ যেমন এখনও পর্যন্ত দেখতে পায়নি, তেমনই তারাও কারোর কোনও ক্ষতি করেনি।
হরিদ্বারের এই দক্ষিণ কালী মন্দিরে প্রতিদিন শয়ে শয়ে ভক্ত আসেন পুজো দিতে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ-ও এসেছিলেন এই মন্দিরে পুজো দিতে। শনিবার করে হয় বিশেষ পুজো। নবরাত্রিতেও মায়ের বিশেষ পুজো করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করলে রোগ-যন্ত্রণা বা অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি-সহ সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। দেবীর উদ্দেশে অর্পণ করা হয় নারকেল, গোলাপ ফুল, কালোজাম আর মিষ্টি পান। বিশেষ পুজোর দিনে মা কালীকে ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় খিচুড়ি। কলকাতার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সঙ্গেও এই মন্দিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।