লোকসভা ভোটে বাংলায় গেরুয়া ঝড়ের ধাক্কা সামলানোর জন্য কি দু' বছর সময় পাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? নাকি তার আগেই রাজ্য সরকার ফেলে দিয়ে বিধানসভা ভোট করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে বিজেপি?
দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা যে যথেষ্টই রয়েছে, বিজেপি নেতাদের কথাতেই তা স্পষ্ট। এতদিন হয়তো বিজেপি নেতাদের হুমকি, হুঁশিয়ারিকে মমতা বা তাঁর দল খুব একটা পাত্তা দিতেন না, কিন্তু বৃহস্পতিবারের ফলের পরে সেই বিলাসিতা আর রইল না মমতার। বিজেপি নেতা মুকুল রায় তো বলেই দিয়েছেন, "বিজেপি এবং বাকি দুই বিরোধী দলের মিলিত ভোট অনুযায়ী, রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের জনসমর্থন হারিয়েছে তৃণমূল। এর পরে আর তৃণমূলের বাংলার ক্ষমতায় থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই।" শুধু লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জেতা নয়, রাজ্যের আটটি বিধানসভার উপনির্বাচনে চারটি আসন দখল করে নিয়েছে বিজেপি।
মমতার কাছে আরও আশঙ্কার কারণ হল তৃণমূলের দল ভাঙানো নিয়ে বিজেপি নেতাদের হুমকি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো ভোট প্রচারে এসেই বলে গিয়েছিলেন যে চল্লিশজন তৃণমূল বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিজেপি-র এই বিপুল সাফল্যের পরে যে দলের বিধায়কদের বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা আরও বাড়বে, তা মমতার থেকে ভাল কেউ জানেন না। মমতার সমস্যা হচ্ছে, কাদের মন উড়ু উড়ু, সেই সঠিক খবরটা তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়ার মতো উপযুক্ত লোক এখন তৃণমূলে আছে কি না। কারণ এই কাজটা তৃণমূলে থাকলে যিনি সবথেকে ভাল করতে পারতেন, নেতা-কর্মীদের হাঁড়ির খবর রাখা সেই মুকুল রায়ই এখন মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ছক কষছেন বিরোধী শিবিরে বসে।
মমতার উদ্বেগ বা়ড়িয়ে মুকুল তো বলেই দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের অনেক নেতা, কর্মীই বিজেপি-র হয়ে কাজ করেছেন। এবার তাঁদের প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও জানিয়ে দিয়েছেন, এবার তাঁদের পাখির চোখ তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
তবে মুখে বললেও কাজটা এখনও যথেষ্ট কঠিন বিজেপি-র কাছে। কারণ এখনও রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল একাই ২১১টি আসনে জিতেছিল। তার পরে অন্য দল ভাঙিয়ে বেশ কিছু বিধায়ককে নিজেদের দিকে টেনেছে তারা। কিন্তু রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয়। জয়ের পরেও নিজের ভাষণে বার বার বাংলার নাম নিয়ে অমিত শাহও বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবার তাঁদের আসল লক্ষ্য কী! কেন্দ্র এবং রাজ্য স্তর থেকে বিজেপি-র এই প্রবল চাপ মমতা কীভাবে সামলান, সেটাই ঠিক করে দেবে তাঁর সরকার এবং দলের ভবিষ্যৎ।
মমতার ভয়ের কারণ অবশ্য আরও অনেক রয়েছে। অসমে এনআরসি নিয়ে সবথেকে বেশি সরব হয়েছিল তৃণমূল। ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে সেই অসমেও দারুণ ফল করেছে বিজেপি। আর ক্ষমতায় ফিরলে যে বাংলাতেও এনআরসি চালু করা হবে, বার বার সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহরা। শোনা যাচ্ছে, এবার নতুন সরকারে নরেন্দ্র মোদীর হাত আরও শক্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন অমিত শাহ। সেক্ষেত্রে বাংলা দখলে মরিয়া বিজেপি আরও আগ্রাসী হতে পারে বিজেপি-র ভূমিকা।