‘মিষ্টির তাগিদেই লেখা, ও নেই! কী লিখব?’ পোস্ট, ফেসবুক পেজ সব মুছলেন সব্যসাচী, সাক্ষী সৌরভ

সব্যসাচী বলেছে, ‘মিষ্টির জন্যই তো লেখা। ও নেই। আমার দায়িত্ব শেষ। তাই কলমও বন্ধ করলাম। আর জীবনে কলম ধরব না। ফেসবুক পেজটাও মুছে দিলাম।’

Mukherjee Upali | Published : Nov 20, 2022 10:24 AM IST / Updated: Nov 20 2022, 03:57 PM IST

সবাই শোকে কাঁদে। সব্যসাচী চৌধুরী শোকে পুড়ছেন। ব্যাংককে বসে সেই পোড়ার আঁচ পাচ্ছেন তাঁর হরিহর আত্মা সৌরভ দাস। ভাই-এর মুখ চেয়ে কান্না ভুলেছেন। দূর থেকে পালন করছেন যাবতীয় কর্তব্য। এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় সেই ছবি লেখায় লেখায় আঁকলেন ‘মণ্টু পাইলট’...

সতীর দেহত্যাগ। শোকে পাগলপারা মহাদেব। পুরাণে এমনই বর্ণনা আছে। তারই বাস্তব রূপ দেখছে শহর কলকাতা। শনিবারের রাত, রবিবারের সকাল। শনিবার রাতে সব্যসাচী সমস্ত পোস্ট মুছে দিয়েছে। রবিবার ঐন্দ্রিলা চলে যাওয়ার পরে পাতাটাই উড়িয়ে দিল। আসলে মিষ্টি (ঐন্দ্রিলা) চাইত বলেই সব্য ওর খুঁটিনাটি ফেসবুক পেজে তুলে ধরত। সব্য বরাবর ভাল লেখে। কিন্তু সেই লেখা বই আকারে প্রকাশ করার পিছনে মিষ্টির চাওয়া ছিল। সব্য বরাবরই মিষ্টিময়! ওর সঙ্গে সঙ্গে আমার ভাইয়ের আজ ‘অর্ধেক’টা চলে গেল। ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, ‘মিষ্টির জন্যই তো লেখা। ও নেই। আমার দায়িত্ব শেষ। তাই কলমও বন্ধ করলাম। আর জীবনে কলম ধরব না। ফেসবুক পেজটাও মুছে দিলাম।’ এই অনুভূতি থেকেই এক সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী বলতে পেরেছিল, ঐন্দ্রিলা ‘আমার’।

সবাই শোকে কাঁদেন। অনেকে পাথর হয়ে যান। আমার ‘ভাই’ পুড়ছে। ব্যাংককে বসে ওর সেই পুড়ে যাওয়ার আঁচ পাচ্ছি। আর হাউহাউ করে কাঁদছি। কারণ, ফোনে যখন কথা বলছি তখন তো সেই অবকাশ নেই। সব্য যদিও কাঁদছে না। ওকে দেখলে কেউ বুঝবেনও না, ও কী হারাল! ভিতরে ভিতরে পুরো খোখলা হয়ে গেল বরাবরের মতো। সব্য কায়া হলে ঐন্দ্রিলা তার ছায়া। আজ ও আফসোস করে বলছে, ‘বহু শকুনের নজর ছিল ঐন্দ্রিলার উপরে। তারা তো কবেই মেরে ফেলেছিল ওকে। আমি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। যাতে ও ফিরে আসে। আমার লড়াইয়ের যোগ্য দোসর মিষ্টি। নইলে ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়ার পরেও ও এ ভাবে ফিরে আসতে পারে? তার পরেও শেষরক্ষা হল কই? মিষ্টিকে কেড়ে নিল শকুনদের নজর। আজ আমি কত একা হয়ে গেলাম, কে বুঝবে?’

একে অন্যকে যেন চোখে হারাত। পাবজি খেলা দিয়ে সব্যসাচীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। তখন প্রায়ই ঐন্দ্রিলা অনুযোগ করত, ‘এত খেলতে দিচ্ছ কেন ওকে? বারণ করতে পারো না বন্ধুকে?’ কখনও সব্য বলত, ‘ওকে বোঝা। নিয়ম মানছে না। এ রকম বেনিয়ম করলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়বে।’ দু’জনের চোখেই দু’জনে ভীষণ বাচ্চা। ফলে, সারা ক্ষণ একে অন্যকে আগলাতেই ব্যস্ত। আমি কথা দিয়েছি মিষ্টিকে, ‘তোর কোনও চিন্তা নেই। আমি আছ। আমি তোর সব্যকে সামলে রাখব। তোর ছেড়ে যাওয়া সব কিছুর দেখভাল করব। তুই শুধু ভাল থাকিস। আমরাও তো একদিন না একদিন যাবই তোর কাছে।’

 

Share this article
click me!