সত্যজিৎ রায় এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যাঁর চরিত্রের অনেক দিক ছিল। যাঁরা কাছ থেকে এই বরেণ্য বাঙালিকে দেখেছেন, তাঁরা এখনও সেই সব কথা স্মরণ করতে গিয়ে শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন।
সত্যজিৎ রায়কে বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্রকর হিসেবে চেনে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন তিনি? কী পছন্দ করতেন? কীভাবে কাজ করতেন? বাড়িতে অবসর সময়ে কী করতেন? পারিবারিক জীবনে কেমন ছিলেন? সেসব নিয়ে এখনও চলচ্চিত্র ও সাহিত্যপ্রেমীদের আগ্রহ রয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বিশ্ববরেণ্য বাঙালির জন্মদিবসে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় অনেক অজানা কাহিনি জানালেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অশোক ঘোষাল। তাঁর কথায় এমন কিছু বিষয় উঠে এল, যা এর আগে কখনও সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়নি। এই বরেণ্য বাঙালির জীবনের কিছু রহস্য উন্মোচিত হল।
কীভাবে কাজ করতেন সত্যজিৎ রায়?
অশোকবাবু জানালেন, 'মানিক কাকাকে আমি কোনওদিন খালি হাতে বসে থাকতে দেখিনি। রাতে ছাড়া তাঁকে কেউ কোনওদিন ঘুমোতে দেখেনি। অবশ্য অসুস্থ থাকলে অন্য ব্যাপার ছিল। তিনি সবসময় কিছু না কিছু কাজ করতেন। রবিবার দুপুরে হাতে বই নিয়ে বিশ্রাম করতেন। সবসময় সাহিত্য বা চলচ্চিত্র নিয়ে পরিকল্পনা, কাজ করতে তিনি। একদিন বৃষ্টির সন্ধেবেলা আমি ওঁর ৩ নম্বর, লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাবু (সন্দীপ রায়) তখন অসুস্থ। ও ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। মানিক কাকা আমার সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা গল্প করেছিলেন। সেই সময়ই তিনি কথা বলতে বলতে অরণ্যের দিনরাত্রির বিভিন্ন চরিত্রের স্কেচ করে ফেললেন।'
ফেলুদা আর সত্যজিৎ রায় কি একই চরিত্র?
সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম আলোচিত চরিত্র 'ফেলুদা'। এখনও পর্দায় বা বইয়ের পাতায় ফেলুদা মানেই বাঙালির চূড়ান্ত আগ্রহ। এই চরিত্রের সঙ্গে কি সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিগত জীবনের মিল ছিল? অশোকবাবু জানালেন, 'শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন মানিক কাকা। তিনি ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ফেলুদা চরিত্র সৃষ্টি করেন। মানিক কাকার কিছু অভ্যাস, যেমন ডালমুট, পান ফেলুদারও না হলে চলে না। শানিত বুদ্ধিও দু'জনেরই ছিল। ফেলুদা কাহিনির বিভিন্ন চরিত্রের নাম খোঁজার জন্য মানিক কাকা টেলিফোন ডিরেক্টরি ঘাঁটতেন। উনি টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকেই মগনলাল মেঘরাজ নাম খুঁজে পেয়েছিলেন।'
ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন সত্যজিৎ রায়?
অশোকবাবু জানালেন, 'মানিক কাকার জীবনে সবসময় বাঙালিয়ানা বজায় থাকত। উনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। দুর্গাপুজোর পর থেকে ওঁদের বাড়িতে গেলে সবসময় পায়েস, নাড়ু, পিঠের মতো খাবার পেতাম। সব অতিথিকেই এই খাবার দেওয়া হত। সেই সময় বাবুর জন্মদিন বা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান থাকলে আমরা সবাই মেঝেতে আসন পেতে বসে খেতাম। সেই সময় সেটাই রীতি ছিল। উনি যা খেতেন সব খাবারই বাড়িতে বানানো হত। এমনকী ডালমুটও। উনি বাইরের খাবার পছন্দ করতেন না। বিদেশে পুরস্কার নিতে যাওয়ার সময়ও বাঙালির পোশাকই পরতেন।'
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
মাত্র ৩ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়েছেন! তারপর কেমন কেটেছে সত্যজিৎ রায়ের জীবন?
কখনও একসঙ্গে কাজ করেননি সত্যজিৎ রায়-সুচিত্রা সেন! এর পেছনে কোনও বিশেষ কারণ ছিল কি?
IFFI 2023: সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, উৎসবে মঞ্চে জানালেন মাইকেল ডগলাস