নিজস্ব গায়কিতে সঙ্গীত জগতে ছাপ ফেলে গিয়েছেন শিল্পী। শুধু তাই নয় প্রশিক্ষক হিসেবেও বহু ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছেন তিনি। আবার একই সঙ্গে সামলেছেন সংসার। তিনি কখনও শিল্পী, কখনও শিক্ষক, কখনো গৃহিনী হিসেবে ধরা দিয়েছেন।
দুঃসংবাদ দিয়েই শুরু হল নতুন বছর। সুরের আকাশকে শূন্য করে দিয়ে চলে গেলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। দীর্ঘ ৮৯ বছরের সুরের যাত্রায় নিজস্ব গায়কিতে সঙ্গীত জগতে ছাপ ফেলে গিয়েছেন শিল্পী। শুধু তাই নয় প্রশিক্ষক হিসেবেও বহু ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছেন তিনি। আবার একই সঙ্গে সামলেছেন সংসার। তিনি কখনও শিল্পী, কখনও শিক্ষক, কখনো গৃহিনী হিসেবে ধরা দিয়েছেন। বাংলা সঙ্গীতের দুনিয়াকে তিনি দিয়েছেন তার দুই 'ছাত্রী' ইন্দ্রাণী সেন ও শ্রাবনী সেনে। সারা জীবনে প্রায় দেড়শোরও বেশি রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করেছেন তিনি। গান করেছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র কিংবা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গেও। সুমিত্রা মিত্র যেন এক প্রজন্মের জন্য ছেড়ে গেলেন বর্ণময় এক ইতিহাস।
১৯৫১ সালে নজরুলগীতি 'গোঠের রাখাল বলে দে রে','বেদনার বেদী তলে' রেকর্ডিং-এর মধ্য দিয়ে প্রথম শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। এছাড়া গেয়েছেন পল্লিগীতি, আধুনিক গানও। ১৯৬০ সাল থেকে প্রথম প্লে-ব্যাক করা শুরু। এই সময়ই সুমিত্রা সেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন। সারা জীবনে রয়েছে দেড়শোরও বেশি রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড করেছেন তিনি। ষোলোটি ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্লে-ব্যাকও গেয়েছেন। ১৯৬০ সালে উত্তমকুমারের অনুরোধে ‘শুন বরনারী’ ছবি দিয়েই প্লে-ব্যাকে হাতেখড়ি। এরপর ‘শ্যামা’, ‘শাপমোচন’, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘বর্ষামঙ্গল’, ‘বসন্ত’, ‘মায়ার খেলা’ মতো একাধিক নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে গলা দিয়েছেন। গীতি আলেখ্য ‘যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়’-এও গান গেয়েছেন। একের পর এক হিট গানে গলা দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে পঙ্কজকুমার মল্লিকের পরিচালনায় গলা দেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে। আজও দেবীপক্ষে 'মাগো তব বীণে সঙ্গীত' আপামর বাঙলির ঘরে বাজে। সারা জীবনে কাজ করেছেন উস্তাদ আলি আকবর খান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রবীন চট্টোপাধ্যায়, ভি বালসারা, তিমির বরণ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে। সঙ্গীত জগতে অবদানের জন্য পেয়েছিলেন 'সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি' পুরস্কার। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 'সঙ্গীত মহাসম্মান' প্রদান করে। মিলেছে আরও অনেক স্বীকৃতি।
গত ২১ ডিসেম্বর ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসতালে ভর্তি হন সংগীত শিল্পী সুমি্ত্রা সেন। ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল তাঁর। ২ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরানো হয় বর্ষীয়ান শিল্পীকে। এর পরের দিনই মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নিজের বর্ণময় জীবনে দর্শকদেরকে একের পর এক হিট গান দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে, 'মেঘ বলেছে যাব যাব', 'বিপদে মরে রক্ষা করো', 'ঘরেতে ভ্রমর এল', 'সখি ভাবনা কাহারে বলে', 'রাঙিয়ে দিয়ে যাও' -এগুলি উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন -
থামল সুরের যাত্রা, মঙ্গলবার সকালে প্রয়াত বিশিষ্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন
ফের শোকের ছায়া টলিপাড়ায়, মাত্র ৪৪ বছর বয়সে প্রয়াত অঞ্জন চৌধুরীর পুত্র সন্দীপ চৌধুরী