বাঙালি-র ছোট পর্দার 'সুচিত্রা সেন' কি মধুমিতা, তাঁর জন্মদিনে ১০ কাহিনি
বাঙালির অভিনয় জগতে বরাবরই চাঁদের সৌন্দর্য লালন-পালন করে এসেছেন একাধিক অভিনেত্রী। এই তালিকায় রয়েছে তাবড়-তাবড় নাম। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে অভিনয়ের জগতে বাঙালির এই চাঁদপানা সৌন্দর্যের বড়ই আকাল বলে মনে হয়। অনেকেই অনেক হা-হুতাশও করেন- কোথায় সেই সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়াদেবী-দের মতো অভিনেত্রীরা। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে মধুমিতা সরকারের নামটা এই তালিকায় অনায়াসেই ঢুকে যেতে পারে। কারণ, বাঙালির সাধের সৌন্দর্যের হাহাকারে মধুমিতা-ই তো সবেধন নীলমণি। যে অভিনেত্রী তাঁর ষোলআনা বাঙালি সৌন্দর্য এবং টেলি-বক্স অফিসের ধুন্ধুমার হিট নিয়ে এপার-বাংলা থেকে ওপার-বাংলা কাঁপাচ্ছেন তাঁকে তো বাঙালি আঁকড়ে ধরবেই।
debojyoti AN | Published : Oct 26, 2019 8:52 AM IST / Updated: Oct 26 2019, 02:43 PM IST
তথ্য বলছে ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর জন্ম মধুমিতার। সুতরাং, সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ২০১৯-এর ২৬ অক্টোবর তিনি ২৫ বছর পূর্ণ করলেন। কিন্তু, এই বয়সেই মধুমিতা তাঁর অভিনয় দক্ষতায় যে জনপ্রিয়তার সিঁড়ি ভেঙে শিখরে পৌঁছেছেন তাঁকে স্যালুট জানাতে পারলে সিরিয়ালপ্রিয় বাঙালিরা গর্বিত বোধ করতেই পারেন।
শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে। সিরিয়ালের নাম সবিনয়ে নিবেদন। সতেরোর্ধ্ব বাঙালি কন্যা সেখানে আবার অবাঙালি তরুণীর চরিত্রে। তাঁর হিন্দি উচ্চারণ আর চোখ-ধাঁধানো সৌন্দর্যে বাঙালিও বিশ্বাস করে নিয়েছিল যে এ নির্ঘাত কোনও মারোয়াড়ি কন্যা! ভুলটা অবশ্য ভেঙেছিল কয়েক বছরের মধ্যেই। কেয়ার করি না বলে একটি সিরিয়ালে এক্কেবারে উচ্চাকাঙ্খি ডাক্তারবাবা-র এক্কেবারে নাকউঁচু ডাক্তারি পড়ুয়া কন্যা। মেডিক্যাল কলেজে এমন চাঁদপানা সৌন্দর্যের ডাক্তারি কন্যার ফ্রক পরে ক্লাসে আসায় প্রায় উৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এরপরের গল্পটা অনেকটা ওই ডালিমকুমারের মতো। সোনারকাঠি-রুপোরকাঠি দিয়ে অবশেষে ডাক্তারি রাজকন্যার ঘুম ভাঙালো কে তা যারা সিরিয়ালটি শেষ অবধি দেখেছিলেন তাঁরা জানেন। কিন্তু, এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে মধুমিতা বাংলা অভিনয়ে রানি হতেই এসেছেন।
মধুমিতার জনপ্রিয়তা এতটাই চড়চড় করে বেড়়েছিল যে রাতদিন গুগল সার্চে তিনি। নানা জিজ্ঞাসা তাঁকে ঘিরে। কেউ জানতে চান মধুমিতার বিয়ে হয়েছে কি না। কারোর আবার একটু গোপন জিজ্ঞাসা। মানে ওই ফিগার স্ট্যাটিস্টিক্স! কেউ আবার জানতে চান- কোনও বয়ফ্রেন্ড রয়েছে কিনা। তথ্যসন্ধান বলছে, এই মুহূর্তে মধুমিতার স্বামী হিসাবে নাম রয়েছে সৌরভ চক্রবর্তীর। তবে, এই পরিচয় কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে একটা কানাঘুষো চলছে। কোনও কোনও মধুমিতা অনুরাগীর দাবি, বিচ্ছেদ-এর আইনি ব্যাপার-স্যাপারগুলো ফাইনাল হলো বলে। তবে, যারা ভাবছেন ফাঁকা গোলে বল নিয়ে ঢুকে পড়বেন, তাঁদের সে আশা আদৌ পূরণ হবে কি না তার দায়ভার আমরা নিতে চাইছি না।
মধুমিতার সঙ্গে সৌরভের পরিচয় সবিনয় নিবেদনের সেটেই। দুজনেরই সেটা ছিল ডেবিউ। আর সেখানেই চার-চোখের মিলন এবং প্রেম। অবশেষে সাতপাকে বাঁধা পড়া। সৌরভ-ও বাংলা অভিনয় জগতে যথেষ্ট একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। সিনেমা-র পর্দায় নিজেকে চেনাবেন বলে ছোট পর্দা ছেড়েছিলেন। বর্তমানে স্ত্রী মধুমিতার সঙ্গে একটি প্রোডাকশন হাউসও খুলেছেন সৌরভ। বলতে গেলে, তাঁদের জুটি এক্কেবারে রাজযোটক।
আমরা যা বাস্তবে পাই না, সেটাই তো আমরা পর্দায় দেখতে চাই। সেখানে চাই সুন্দর মুখের ভিড় এবং সব ভালোর জগৎ। শয়তানের শয়তানি থাকবে কিন্তু তা থেকে উত্তোরণ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটবে চরিত্রের। মধুমিতার অভিনীত বোঝে না সে বোঝে না -নামে ব্লকবাস্টার হিট টেলি সিরিয়ালের সারমর্ম এটাই ছিল। বলতে গেলে রাতারাতি এক লাফে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মধুমিতা। বাঙালি তাঁকে গ্রহণ করেছিল টেলি দুনিয়ার 'সুচিত্রা সেন' বলেই।
শোনা যায় মধুমিতার জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পদ্মাপারে মানে বাংলাদেশে মেয়েরা বোঝে না সে বোঝে না-র পাখির মতো ড্রেস কিনতে বাজারে হামলে পড়েছিল। এমনকী, অনেকে আবার সেই ড্রেস কিনতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছিল বলে খবর চাউর হয়। যদিও, এর তেমন কোনও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে মধুমিতার জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে সেখানে একটি সিরিয়ালেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। এনটিভি বাংলাদেশের সেই সিরিয়ালের নাম ছিল মেঘবালিকা।
২০১৬ সালে ফের এপার বাংলার টেলি পর্দায় আবির্ভূতা হয়েছিলেন মধুমিতা। কুসুম দোলা নামে সেই সিরিয়ালের তিনি অভিনয় করেন ডক্টর ইমন চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায়। গ্রামের এক সহজ-সরল মেয়ে কীভাবে এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং কীভাবে ডাক্তারি পাস করেন সে কাহিনি এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। এই কাহিনি চলার পথে ইমনের জীবনের ওঠা-পড়া, সাফল্য পরতে পরতে ডানা মেলেছিল।
মধুমিতা মানে-ই এক প্রাণ ঢালা সৌন্দর্য। মন ভালো করে দেওয়া এক মুখশ্রী। কিন্তু, তাঁর এই পরিচয়ের বাইরেও নিজেকে চেনাতে ভালোবাসেন মধুমিতা। তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট যাঁরা ফলো করেন তাঁরা ভালো করেই তাঁর মেজাজ-মর্জির পরিচয় পান।
মধুমিতার মূল মন্ত্র-ই হল জিয়ো অর জিনে দো। আসলে জীবনের প্রাণ-প্রাচুর্যে উপভোগ কর। গতে বাঁধা জীবন নিয়ে, বরং শিঁকড়টা আঁকড়ে ধরেই নিজেকে চেনার সফরে পাড়ি দেওয়াটাই মধুমিতার বেশি পছন্দের।