প্রতিভা অনেকেরই থাকে। কিন্তু সবাই জীবনে সফল হতে পারে না। তার কারণ শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না, তাকে মেলে ধরার কৌশলও জানতে হয়। বিশ্বরূপ সেনগুপ্ত যাকে গোটা টলিউড যিশু সেনগুপ্ত নামেই চেনে। ‘অপয়া’ এই শব্দটি তার কাছে খুবই পরিচিত। কেরিয়ারের শুরুতে এই শব্দটি ছিল তার জীবনের নিত্য সঙ্গী। একাধিক সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। একের পর এক ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছে বক্স-অফিসে। সেই সময় অপয়া অপবাদ দিয়ে কোন পরিচালকই তাকে নিতে চাইতেন না। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেই তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে, এমন মতই দিয়েছিলেন অনেকে। আজ সেই যিশু সেনগুপ্ত টলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও অভিনয় দক্ষতায় মন কাড়ছেন দর্শকদের। টলিউডের সকল প্রথম সারির পরিচালকদের পছন্দের অভিনেতা তিনি। কীভাবে এতটা বদলে গেলেন তিনি? এর পিছনে রয়েছে একটি লম্বা কাহিনী।
যিশু সেনগুপ্ত হিরামচন্দ্র কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সান্তক ডিগ্রি পাস করেন। এর পর কিছু দিন তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেন। তবে তার বাবা উজ্জল সেনগুপ্ত বাংলা ছলচিত্রের অভিনেতা ছিলেন। তাই খানিক পারিবারিক সূত্রেই সিনেমার জগতে আকৃষ্ট হন তিনি।
210
যিশু তার অভিনয় কেরিয়ার শুরু করেন, ‘মাহাপ্রভু’ নামে একটি টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে। ওই সিরিয়ালে তিনি মহাপ্রভু চৈতনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এর পর তিনি নিজের প্রযোজনায় ‘অপরাজিত’ নামের একটি সিরিয়ালে অভিনয় করেন।
310
পর পর দুটি সিরিয়ালে অভিনয় করা সত্ত্বেও, তেমন ভাবে ডাক পাছিলেন না তিনি। এর পর তিনি ১৯৯৯ সালে প্রিয়জন সিনেমা দিয়ে তার চলচিত্র জীবনের যাত্রা শুরু করেন। তবে সিনেমাটি সফলতা অর্জন করতে ব্যার্থ হয়।
410
এর পরবর্তী সময় একের পর এক সিনেমা করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ হয়েছেন। কেউ কেউ প্রশংসা করলেই হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখার গরজ অনুভব করেননি।
510
রোম্যান্টিক, অ্যাকশন, কমেডি সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেন। এমনকি অন্য ধারার বেশ কিছু সিনেমায়ও কাজ করেন। তবে বক্স-অফিসে সফলতা আসছিলই না। যার ফলে বেশ কিছুটা ভেঙ্গে পরেন তিনি।
610
দেখতে সুন্দর, অভিনয়টাও দারুণ করেন। তবে কেন সফলতা আসছে না তার উত্তর জানা ছিলো না অভিনেতার। তার পাশাপাশি কেরিয়ার শুরু করে অনেকেই ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিলেন। সেই সময় তাকে শুনতে হয়েছিলো তিনি নাকি ‘নায়ক মেটেরিয়াল নন’।
710
২০০৮ সালে কয়েল মল্লিকের বিপরীতে ‘বড় আসবে এখুনি’ সিনেমাটি বেশ আলোচিত হয়। এরপর ঋতুপর্ণ ঘোষের সব ছরিত্র কাল্পনিক, নৌকাডুবি, আবহমান পর পর তিনটি ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। এই তিনটি ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়।
810
এর পর ২০১৪ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘জাতিস্মর’ এ রোহিত চরিত্রটি এক কথায় অসাধারণ। বলা যায় এই ছবিটিই ছিল তার কেরিয়ারের টারনিং পয়েন্ট। এর পরবর্তীতে অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ চরিত্রে তার অভিনয় চারিদিকে সাড়া ফেলে দেয়।
910
এরপর আর তাকে পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি। রাজকাহিনী, নির্বাক, উমা, জুলফিগার, পোস্ত থেকে শুরু করে একাধিক হিন্দি সিনেমা যেমন, বারফি, মারদানি, পিকুতে অভিনয় করেন। টলিউডের পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে।
1010
এর পাশাপাশি সঞ্চালক হিসেবেও তার নাম এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। জিশু প্রমাণ করে দেন নিষ্ঠা এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সফলাতা একদিন না একদিন আসবেই।