করোনা আক্রান্ত বিশ্বকে পথ দেখাল উহান, লকডাউনের ৭৬ দিন পর একেবারে স্বাভাবিক জীবনে শহরবাসী
বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে দুনিয়ার ২০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। আক্রান্ত ১৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে অধিকাংশ দেশই লকডাউনের পথে হেঁটেছে। আর এর মাঝেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চিনের হুবেইয়ের রাজধানী উহান। এই শহর থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। এবার সেখানেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন শহরবাসী। গত বছর ডিসেম্বরের শেষদিকে এই শহর থেকেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হলে গত ২৩ জানুয়ারি পুরো উহান লকডাউন করে দেওয়া হয় উহান। তারপর ৭৬ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর বুধবার থেকে সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এখানে । মানুষ এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে এই শহরে।
সারা বিশ্বের ধারণা চিনের উহান শহর মারণ ভাইরাস করোনার কেন্দ্রবিন্দু। চিন সেকথা বারেবারে অস্বীকার করলেও উহানেই যে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এরই মধ্যে ছন্দে ফিরেছে চিন। দেশের অধিকাংশ জায়গায় লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এবার উহান থেকেও পুরোপুরি লকডাউন তুলে নিল বেজিং।
৮ এপ্রিল থেকে চিনের উহান শহর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এর আগে রাজধানী উহান বাদে হুবেই প্রদেশে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই বেজিং কর্তৃপক্ষ শহরটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ঘরবন্দি করে রাখে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে।
এদিন থেকে উহানে ট্রেন, সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের পরিবহন এবং অন্যান্য রেল সংযোগ পুনরায় চালু করে দেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে বিমান পরিষেবাও। উহানের বাসিন্দারা এখন চাইলেই শহর ছেড়ে অন্য যে কোনোও স্থানে যেতে পারবেন। তবে তার জন্য হেলথ অ্যাপের সবুজ সংকেত পেতে হবে। যারা তা পাবেন সেইসব সুস্থ বাসিন্দা ও পর্যটকরাই চলাচল করতে পারবেন।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে উহানের ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
পুরো উহান ছিল অচল আর ভুতুড়ে এক নগরী। বাইরের কেউ শহরটিতে ঢুকতে পারতো না, সেখান থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারেনি এতদিন। বন্ধ ছিল সব ধরনের যান চলাচল।
জানা গিয়েছে লকডাউন ওঠার পরেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে প্রচুর মানুষ। কয়েক লাখ মানুষের ভিড় হয়েছে বাস, রেল স্টেশন ও বিমান বন্দরগুলিতে। মূলত যারা এতদিন উহানে এসে আটকে পড়েছিলেন তারাই প্রথম অবস্থাতেই নিজেদের জায়গায় ফিরতে চাইছেন।
তবে লকডাউন তোলা হলেও সমস্ত রকম বিধিনিষেধ এখনও এই শহরের থেকে তোলেনি বেজিং। শহর ছাড়তে এখনও কিউআর কোড প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হুবেই প্রদেশের স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে আগেই একটি কিউআর কোড দেওয়া হয়েছিল শহরের লোকেদের। ওই কোডটি স্ক্যান করে ভ্রমণকারীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারবেন টহলরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া উহান থেকে সরাসরি যারা রাজধানী বেজিংয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে উহানে সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে। ২৪ মার্চ এক সপ্তাহ ধরে উহানে নতুন কোন আক্রান্তের ঘটনা না ঘটায় শর্তসাপেক্ষে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে শহর কর্তৃপক্ষ। এর ১১ দিন পর এবার লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হল।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত চিনের মূল ভূখণ্ডে ৩ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই রাজধানী উহান সহ হুবেই প্রদেশের। এছাড়া প্রায় ৮২ হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি। করোনা মোকাবিলায় চিন সফল বলেও মনে করা হচ্ছে।
নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথমবারের মতো এই সংক্রমণে কোনো মৃত্যু ছাড়াই একটি দিন পার করতে পেরেছে চিন। দিনটি ছিল গত সোমবার। ওইদিন গোটা চিনে করোনা আক্রান্ত কেউ মারা যায়নি। যা একটা বড় সাফল্য।
তবে দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত বিদেশফেরত ও উপসর্গবিহীন রোগী বাড়তে থাকায় ফের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে দেশটিতে।