Published : May 07, 2020, 02:29 PM ISTUpdated : May 07, 2020, 02:32 PM IST
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৩৬ বছর। আজও পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহ শিল্পদূষণের ফলে ঘটে যাওয়া অন্যতম দুর্ঘটনা হিসেবে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার কথা বলা হয়। ১৯৮৪ সালের ৩ ডিসেম্বর ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বেরোতে থাকে। মিশে যায় বাতাসে। দ্রুত হাজার হাজার মানুষ ভয়ঙ্কর শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন। সব মিলিয়ে ২০,০০০-এরও বেশি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন সেদিন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আইএলও-এর এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৮৪ সালে অন্তত ৩০ টন মিথাইল আইসো সায়ানেট গ্যাস বাতাসে মিশে গিয়েছিল ইউনিয়ন কার্বাইডের রাসায়নিক কারখানা থেকে। প্রায় ৬ লক্ষেরও বেশি কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তিন যুগ পরে বিশাখাপত্তনমে রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাসের নিঃসরণ আবার সেই ঘটনাকেই মানুষের মনে তাজা করে দিল।
১৯৮৪ সালের ৩রা ডিসেম্বর গভীর রাতে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল শহরের ইউনিয়ন কার্বাইড রাসায়নিক ফ্যাক্টরির প্ল্যান্ট নাম্বার সি’ থেকে গ্যাস লিক করে৷ সেই বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে গিয়ে ঘুমের মধ্যে কেড়ে নেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ৷
210
ইউনিয়ন কার্বাইডের ফ্যাক্টরি থেকে ৪০ টন বিষাক্ত মিথাইল আইসোসানাইট গ্যাস লিক করে সেদিন৷ বাতাসে এই গ্যাস মিশে গেলে সেই বায়ু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু নিশ্চিত৷ সেই রাতে ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল৷
310
দুর্ঘটনার পর তদন্ত করে জানা যায়, প্ল্যান্ট নাম্বার সি’তে জলের সঙ্গে মিথাইল আইসোসানাইট গ্যাস মেশানো হয়েছিল৷ মিশ্রণের কারণে গ্যাস ঘনীভূত হতে থাকে৷ একটা সময়ে গ্যাসের পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে ট্যাঙ্কে প্রবল চাপ তৈরি করে৷ এরপরই গ্যাস লিক করতে থাকে৷ বাতাসের মধ্যে সেই গ্যাস মিশে গিয়ে ভোপালের বহুলাংশে ছড়িয়ে পড়ে৷ মধ্য রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান হাজার হাজার মানুষ৷
410
সরকারি হিসেব অনুযায়ী সেই দুর্ঘটনায় ৩৭৮৭ জন মারা যান৷ যদিও বিভিন্ন সংগঠনের দাবি অনুযায়ী মৃত্যু সংখ্যা ২০ হাজারের গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ এছাড়া সেই দুর্ঘটনার জেরে শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন বহু মানুষ৷
510
২০০৬ সালে হলফ নামায় তৎকালীন মধ্যপ্রদেশ সরকার জানায়, গ্যাস লিকের কারণে ৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ যার মধ্যে ৩৯০০ জন আংশিক ও পুরোপুরিভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যান৷
610
গ্যাস লিকের কয়েক ঘণ্টার পরই শহরে যেন মৃত্যু নগরীতে পরিণত হতে থাকে৷ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়৷ শ্বাসকষ্ট, চোখ ও ত্বকের সমস্যা, বুকে জ্বালায় শহরবাসী ছটফট করতে থাকে৷ ডাক্তাররাও প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি এই রোগের কারণ। রাজধানীর দুটি সরকারি হাসপাতালে প্রথম দু’দিনে ৫০ হাজার মানুষ ভর্তি হন৷ পরে সরকারের তরফ থেকে দূর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারকে মোট ৭১৫ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়৷
710
এই গ্যাস দূর্ঘটনায় প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও ধরা পড়ে৷ প্ল্যান্টের অ্যালার্ম সিস্টেম ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকেজো হয়ে পড়েছিল৷ ফ্যাক্টরি ম্যানেজারও কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেননি৷
810
একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ১৯১৯ পরবর্তী সময়ে গত ১০০ বছরে প্রধানতম শিল্পদূষণের ফলে হওয়া দুর্ঘটনার অন্যতম ভোপাল দুর্ঘটনা।
910
ইউনিয়ন কার্বাইড বিভাগের সিইও মার্কিন নাগরিক ওয়ারেন অ্যান্ডারসন ওই দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাঁকে কখনওই আদালতে হাজির করা যায়নি। পরে ২০১৩ সালে আমেরিকাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
1010
গত তিন দশকে ২০,০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর বিচার চেয়ে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন বহু সমাজকর্মী। তাঁদের আরও অভিযোগ ছিল বহু শিশু ওই গ্যাস দুর্ঘটনার কারণে আজও জন্মানোর সময় জন্মগত ত্রুটি, সেরিব্রাল পালসি এমনতী ক্যানসার নিয়েও জন্মায়।