লাল রঙের বেনারসি, কপালে চন্দনের আলপনা, পায়ে রাঙা আলতার নিখুঁত কারুকাজ। ভাবছেন বাঙালি ঘরের নববধূর কথা বলছি? সেই রক্ষণশীলতার ঘুম ভাঙাতেই ফ্যাশন শিল্পী রুদ্র সাহা নিয়ে ফেললেন এক অভিনব উদ্যোগ।
বেনারসি মানেই বাঙালি মেয়েদের আবেগ। রাঙা বেনারসি আর চন্দনের কলকায় যুগে যুগে বাঙালি মেয়েরা হয়ে উঠেছেন লক্ষ্মীপ্রতিমা। কিন্তু, সেই বেনারসি যখন শোভা পায় পুরুষের শরীরে? তখন কি সমাজ ‘ছি’ ‘ছি’ করে ওঠে? নাকি, বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে দেখে অপরূপ সৌন্দর্যের আভা?
বিখ্যাত কবি ও লেখিকা তসলিমা নাসরিন কিন্তু সমাজের এই দ্বিতীয় অংশে পড়েন। অথবা, সমাজ থেকে একটু দূরে গিয়েই তাঁর দর্শন। টুইটারে শাড়ি পরিহিত সেই মোহময় পুরুষের ছবি শেয়ার করে তিনি লিখে দিলেন, “বাহ চমৎকার! পুরুষদের পরনে শাড়ি। এবারের পুজোর ফ্যাশন।” আর পুরুষরা কী বলছেন? কেউ বলছেন, ‘এটা নেহাতই পাগলামো’, কেউ কেউ আবার আক্ষেপ করে বলছেন, ‘এখন আমাদের এসবও দেখতে হবে!’
তাতে কি কেয়ার করছেন সাজশিল্পী রুদ্র সাহা, মডেল আতিফ খান, রূপটান শিল্পী রাখী অগ্রবাল, সাধ্বিকা দেবশর্মা, অথবা কেশসজ্জার শিল্পী রোহিনী আইচ, সহযোগী শিল্পী পৌলমী সাহা, ঈশিতা দত্ত, কিংবা সৌম্য সিংহের মতো দুর্দান্ত চিত্রগ্রাহকরা? সমাজের চোখের রাঙানি লাল হয়ে ফুটে উঠেছে আতিফ খানের শাড়ি আর পায়ের পাতার আলপনায়।
পুজোর আগে বেনারসি শাড়িকে নবরূপে উপস্থাপন করলেন পোশাকশিল্পী রুদ্র সাহা। শাড়ি মানুষের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী চেহারার পরিস্ফুটন ঘটায়। তাই শুধু নারী নয়, পুজোর ফ্যাশনের সাজে পুরুষকেও উদ্বুদ্ধ করা হল বারোহাতি বস্ত্রখণ্ডের সাজে।
সাজই পারে নারী-পুরুষকে একাকার করে ফেলতে। তৈলাক্ত বুক, কোমর থেকে ধুতির মতো জড়িয়ে সোনালি সুতোর কাজ করা লাল টুকটুকে বেনারসি। এবছরের দুর্গাপুজোর আগে এমনই সাজে সেজে উঠেছেন মডেল আতিফ।
লিঙ্গভেদের কালো পর্দা ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া এই পরিকল্পনাটির নেপথ্যে থাকা পোশাকশিল্পী রুদ্র বলেছেন, “আমরা চেয়েছিলাম এমন কোনও সাজ তৈরি করতে, যা পুজোর আগে মানুষের মননে লেগে থাকবে। আশা করি সেটা পেরেছি।”
পুরুষের দেহে শাড়ি লেপটে দেওয়ার বার্তাটি খুব স্পষ্ট। নারী বা পুরুষ নয়, শাড়ি হয়ে উঠুক আপামর বাঙালির অহঙ্কার। এই পরিচ্ছদ সারা বাংলার অহঙ্কার। বাঙালির হাত ধরেই শাড়ি পৌঁছে যাক গোটা বিশ্বের দরবারে।