১৬ জনের হার না মানা লড়াইয়ে কেটেছে ৪১ বছরের খরা, চিনে নিন ভারতীয় হকি দলের নক্ষত্রদের
অলিম্পিকে হকিতে কেটেছে ৪১ বছরের পদক জয়ের খরা। টোকিও অলিম্পিক্সের ব্রোঞ্জ মেডেল জয়ের ম্যাচে জার্মানিকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ করেছে মনপ্রীত সিং ও তার দল। ১৬ জন ভারতীয় হকি প্লেয়ারের অদম্য জেদ, হার না মানা মনোভাবের ফসল হিসেবেই টোকিওতে ব্রোঞ্জ জয় ভারতের। ঐতিহাসিক দিনেচিনে ১৬ সুপার স্টারকে।
Sudip Paul | Published : Aug 5, 2021 3:29 PM IST / Updated: Aug 06 2021, 09:20 AM IST
মনপ্রীত সিং- মনপ্রীত সিং সন্ধু ভারতীয় পুরুষ হকি দলের অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে ভারত ৪১ বছর পর এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল এশিয়া কাপ এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সোনা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রূপো এবং ২০১৮ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছে। মনপ্রীত সিং ১০ বছর বয়স থেকে হকি খেলা খেলা শুরু করেন। ভারতী হকি দলের খারাপ সময় থেকে মনপ্রীতের হাত ধরেই এই সাফল্য।
মনদীপ সিং- মনদীপ সিং একজন ভারতীয় পেশাদার হকি খেলোয়াড়। যিনি বর্তমানে একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলছেন। জলন্ধরের ২৫ বছর বয়সী মনদীপও গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অলিম্পিকে ভারতীয় সগলের সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারি তিনি।
বরুণ কুমার- ভারতীয় হকি দলের অপর নির্ভরযোগ্য প্লেয়ার হলেন বরুণ কুমার। যিনি একজন ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি হকি খেলা শুরু করেন। ২০১২ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি দুর্দান্ত খেলেছিলেন। রক্ষণে তিনি টিম ইন্ডিয়ার অন্যতম স্তম্ভ।
সুরেন্দর কুমার- সুরেন্দর কুমারও ভারতীয় হকি দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার হিসেবে খেলছেন। তিনি ২০১৬ অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী জাতীয় দলের অংশ ছিলেন। ছোটবেলায় সুরেন্দর তার বাবার কাছে হকি স্টিক দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি হকি স্টিক কিনে দিতে রাজি হননি। এর পর তার প্রতিবেশী ৫০০ টাকা দিয়ে হকি স্টিক কিনে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই হকি খেলা শুরু করেন সুরেন্দর কুমার।
সুমিত- সুমিত হকি দলের হয়ে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলছেন। তিনি ২০১৬ সালের পুরুষ হকি জুনিয়র বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের অংশ ছিলেন। সুমিতের হকি খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন অনেক কঠিন ছিল। যে সময় সনিপাতের কুড়াদ গ্রামের হকি খেলোয়াড় সুমিত কুমার এই স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সময়ে ঘরে খাবারের জন্যও টাকা ছিল না। ২০০৪-২০০৫ এর সময়, সুমিতের বড় ভাই অমিত তাকে জুতা নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের হকি অ্যাকাডেমির মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন। কোচ যখন জুতা এবং হকি স্টিক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই লোভে সুমিত প্রতিদিন মাঠে যাওয়া শুরু করে। শীঘ্রহকি খেলা সুমিতের স্বপ্ন হয়ে ওঠে। টোকিও অলিনম্পিকে পদক জিতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করলেন সুমিত।
সিমরনজিৎ সিং- ভারতীয় হকি দলের নির্ভরযোগ্য প্লেয়ার সিমরনজিৎ সিং। তিনি ভারতের হয়ে জার্মানির বিপক্ষে ব্রোঞ্জ মেডেল জয়ের ম্যাচে প্রথম গোল করে দলকে সমতায় ফেরান। যদিও বাটালার বাসিন্দা সিমরনজিতের পরিবার এখন উত্তরপ্রদেশে থাকে। ছেলের সাফল্যে খুশি পুরো পরিবার।
দিলপ্রীত সিং- দিলপ্রীত সিং হকি দলের একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলছেন। দিলপ্রীতের বাবা তাকে ৩ বছর বয়স থেকে হকি মাঠে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন এবং সেখান থেকেই তিনি এই খেলায় আগ্রহী হন। তিনি তার হকি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অনূর্ধ্ব -২১ দলের সঙ্গে। এর পরে, ২০১৮ সালে, তিনি সিনিয়র দলে জায়গা পান।
শামসের সিং- শামসের সিং হকি দলে একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলছেন। তিনি কখনো ভাবেননি যে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হকিতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তার বাবা হরদেব সিং ছিলেন একজন কৃষক এবং মা ছিলেন একজন গৃহিণী। পাকিস্তান-ভারতের অমৃতসর সীমান্তের আত্তারী গ্রামের বাসিন্দা শামসের শখ হিসেবে হকি খেলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই গেমের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং তিনি এটাকে তার প্যাশন হিসেবে গড়ে তোলেন।
হরমনপ্রীত সিং হরমনপ্রীত সিং অমৃতসরের ছোট্ট গ্রাম টিমোয়ালের বাসিন্দা। ভারতীয় দলের ড্র্যাগ ফ্লিকার জার্মানির বিপক্ষে একটি পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে ভারতকে ৩-৩ সমতায় ফেরান। সমতায় ফেরার পর ভারত এখান থেকে এগিয়ে যায় ও ম্য়াচ জিতে ব্রোঞ্জ জেতেন। হরমনপ্রীত সিং দেশের হয়ে ১২০টি ম্যাচ খেলেছেন। যখন তার বয়স ১০ বছর, সে তার বাবার সাথে খামারে ট্রাক্টর চালানো শুরু করে। ট্রাক্টর চালানোর কারণে তার হাত খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে তার জন্য একটি দুর্দান্ত ড্রাগফ্লিকার হওয়ার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হার্দিক সিং- ভারতীয় হকি দলের অন্যতম সেরা প্লেয়ার হার্দিক সিংহ। হার্দিক সিংও জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত গোল করেছেন। তিনি পাঞ্জাবের জলন্ধরের বাসিন্দা। তার পুরো পরিবার হকির সঙ্গে যুক্ত। তিনি তার আত্মীয় প্রাক্তন ড্র্যাগ-ফ্লিকার যুগরাজ সিংয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
নীলকান্ত শর্মা- ভারতীয় হকি দলের মিডফিল্ডে বড় ভরসা হলেন নীলকান্ত শর্মা। নীলকান্তের বাবা একজন পণ্ডিত ছিলেন এবং বাড়িতে অনেক টানাপোড়েন ছিল। তিনি ১৬ বছর বয়সে হকি খেলার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন এবং যাই হোক না কেন খালি হাতে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল নালকান্তের।
রুপিন্দর পাল সিং- জার্মানির বিপক্ষে একটি দুর্দান্ত গোল করেছেন এবং টোকিও ২০২০ -তে মোট ৪ টি গোল করেছেন রুপিন্দর পাল সিং। সেরা ড্র্যাগফ্লিকার রূপিন্দর টাকা বাঁচাতে একসময় দিনে একবার খাবার খেতেন। সব কষ্ট এবং তার ভাইয়ের আত্মত্যাগকে বৃথা যেতে দেননি। কঠোর পরিশ্রম করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন। বর্তমানে তিনি দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন।
বিবেক প্রসাদ- বিবেক সাগর প্রসাদ মিডফিল্ডার হিসেবে ভারতীয় দলে খেলছেন। জানুয়ারী ২০১৮ সালে, তিনি ১৭ বছর, ১০মাস এবং ২২ দিনে ভারতের হয়ে অভিষেক হওয়া দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়েছিলেন। বিবেক, যিনি এমপি থেকে এসেছেন, ২০১৯ সালে রাইজিং স্টার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।
শ্রীজেশ পি আর- শ্রীজেশ ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য গোলরক্ষক ও প্রাক্তন অধিনায়ক। জার্মানির বিপক্ষে, তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাক-টু-ব্যাক পেনাল্টি কর্নার বাঁচিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিৎ করেন। গোটা প্রতিযোগিতায় শ্রীজেশ অতন্দ্র প্রহরীর মত সামলেছেন তেকাঠি। শ্রীজেশ কৃষক পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি ২০০৬ থেকে ভারতীয় হকি দলের একজন নিয়মিত সদস্য। অলিম্পিক পদক জয়ের স্বপ্নপূরণ হওয়ায় খুশি শ্রীজেশ।
গুরজন্ত সিং- গুরজন্ত সিং ভারতীয় দলে একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলছেন। গুরজন্ত সিংয়ের পরিবারের কেউ হকি খেলতেন না। যদিও তার মাতামহের মধ্যে হকির প্রতি অনেক ভালোবাস ছিল। তিনি যখন তার মাতামহের কাছে বাটালায় যেতেন, তখন তিনি সেখানে তার ভাইদের খেলা দেখতেন। একবার তিনি সেখানে গিয়ে তিন মাস হকি খেলেন এবং সেখান থেকে তিনি এটিকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন।
অলিম্পিকে হকিতে কেটেছে ৪১ বছরের পদক জয়ের খরা। টোকিও অলিম্পিক্সের ব্রোঞ্জ মেডেল জয়ের ম্যাচে জার্মানিকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ করেছে মনপ্রীত সিং ও তার দল। ১৬ জন ভারতীয় হকি প্লেয়ারের অদম্য জেদ, হার না মানা মনোভাবের ফসল হিসেবেই টোকিওতে ব্রোঞ্জ জয় ভারতের। ঐতিহাসিক দিনেচিনে ১৬ সুপার স্টারকে।