Published : Jun 19, 2021, 02:32 PM ISTUpdated : Jun 19, 2021, 04:12 PM IST
ক্ষুধার অনুভূতি তীব্র ও প্রচণ্ড। দারিদ্রের নির্মম কষাঘাত ও পেটের জ্বাল মানুষের জীবনকে নির্মম, দুর্বিসহ করে তোলে। মানুষের দৃষ্টি ও হৃদয় থেকে রূপ-সৌন্দর্য্য ও প্রেমের নান্দনিক বোধগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু যখন কঠিন পরীক্ষার পর যখন যখন জীবনে উন্নতি আসে , নিবৃত্তি ঘটে ক্ষুধার তখনও রূপ, রং, প্রেম, সাফল্য জীনকে আন্দোলিত করে তোলে। কিন্তু জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে সবাই জয়ী হতে পারে না। কারণ সবাই মিলখা সিং নয়। দেশভাগের যন্ত্রণা, প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা তো ছিলই। কিন্তু তারসঙ্গে ক্ষুধার তীব্র তাড়না সাধারণ মিলখা সিংকে করে তুলেছিল কিংবদন্তী 'ফ্লাইং শিখ'। তাঁর জীবনযুদ্ধ একদিনে যেমন কুর্নিশযোগ্য তেমনই সকলের কাছে অনুপ্রেরণাও।
১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের ও এখনকার পাকিস্তানের মুজফফরগড় জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে এক শিখ রাজপুত পরিবারে জন্ম হয় মিলখা সিংয়ের। মিলখারা মোট ১৫ জন ভাইবোন ছিলেন।
220
১৯৪৭-এর দেশভাগের অশান্তির সময় চোখের সামনে নিজের মা-বাবাকে খুব হতে দেখেছিলেন ছোট্ট মিলখা। প্রণ হারাতে হয়েছিল ৮ জন ভাই বোনকে। তারপর ভারতে চলে আসেন মিলখা সিং।
320
দিল্লিতে এক দিদির কাছে আশ্রয় পায় মিলখা। দারিদ্র ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ক্ষুধার জ্বালা তখন অনুভব করেছিলেন ছোট্ট মিলখা। সেখান থেকেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধে ছোট্ট মিলখা থেকে ফ্লাইং শিখ হয়ে ওঠার দৌড়।
420
১৯৫২ সালে চতুর্থবারে চেষ্টার সেনা বাহিনীতি চাকরি পান মিলখা সিং। সেনায় থাকাকালীন বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টে অংশ নেন মিলখা। দৌড়, খেলাধুলার প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল মিলখার।
520
দৌড়ে মিলখার ধারেকাছে যে সেনাবাহিনীর অন্য জওয়ানরা কেউ ধারে কাছে আসতে পারত না, এই বিষয়টি সেনা কর্তাদের নজরে আসে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় মিলখার দৌড়বিদ হওয়ার যাত্রা।
620
১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন মিলখা সিং। কিন্তু প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যান তিনি। কিন্তু সাফল্য পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি মিলখাকে। ১৯৫৬ এশিয়ান গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটারে সোনা জেতেন।
720
১৯৫৮ সালে কার্ডিফে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন মিলখা সিংখা। শুধু প্রথম ভারতীয় হিসেবে কমনওয়েলথে সোনা জয় নয়, এমন রেকর্ড গড়েল মিলখা যা অক্ষত ছিল ৫২ বছর।
820
৪৬.৬ সেকেন্ড দৌড় শেষ করেন মিলখা সিং। হারান সেই সময়কার তারকা আফ্রিকান স্প্রিনটার ম্যালকম স্পেন্সকে। ২০১০ সালে দিল্লি কমনওয়েথল গেমসে ডিসকাস থ্রো-তে কৃষ্ণা পুনিয়া সোনা জিতে মিলখার মাইলফলক স্পর্শ করেন।
920
১৯৫৬ এশিয়ান গেমস ও ১৯৫৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ের সুবাদে ১৯৫৮ সালে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় মিলখা সিংকে। একইসঙ্গে ১৯৬০ অলিম্পিকসে পদক জয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করে গোটা দেশ।
1020
কিন্তু সামান্য ভুলের জন্য ১৯৬০ অলিম্পিকসে পদক হাতছাড়া হয় মিলখা সিংয়ের। চতুর্থ হন ভারতীয় স্প্রিনটার। ২৫মিটারে পৌছে জিতেছেন ধরে নিয়ে স্পিড কমাতেই, পদকের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় মিলখার।
1120
সেই বছর পাকিস্তানে আয়োজিত ‘ডুয়াল চ্যাম্পিয়নশিপ'-এ সেদেশের স্প্রিনটার ও চিরপ্রতীদ্বন্দ্বী আয়ূব খানের বিরুদ্ধে দুরন্ত গতিতে দৌড়ে প্রথম হন মিলখা। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান মিলখার দৌড় দেখে তাকে 'ফ্লাইং শিখ' তকমা দেন।
1220
এছাড়া ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌড় এবং ৪০০ মিটার রিলে রেসে সোনা পান তিনি। ১৯৬৪ সালের কলকাতা ন্যাশনাল গেমসেও ৪০০ মিটার দৌড় বিভাগে রূপো জয় করেন মিলখা।
1320
১৯৬২ সালেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিলখা সিং। বিয়ে করেন ভারতীয় মহিলা ভলিবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নির্মল কৌরকে। তাদের একটি পুত্র ও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
1420
২০১৩ সালে মিলখা সিংয়ের জীবনীর উপর ছবি তৈরি করেন পরিচালক ওমপ্রকাশ মেহেরা। মিলখার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারহান আখতার। ছবিতে তাঁর জীবন দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন মিলখা সিং।
1520
২০১৭ সালে পৃথিবীর বিখ্যাক মিউজিয়াম মাদাম তুসো তার মূর্তি বসানো হয়। সেই মূর্তি দেখতে যান মিলখা সিং। নিজের দৌড়ানোর ভঙ্গিতে ছবিও তোলেন কিংবদন্তী দৌড়বিদ।
1620
কিংবদন্তী অ্যাথলিটকে সম্মান জানাতে ২০১৮ সালে 'খেল রত্ন' সম্মানে সম্মানিত করা হয় মিলখা সিংকে। জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন ছিল তাঁর কাছে।
1720
কিন্তু করোনা অতিমারীর কারমে ৯১ বছর বয়সে থামল মিলখা সিংয়ের দৌড়। ২০ মে বাড়ির এক পরিচারিকার থেকে করোনা সংক্রামিত হন মিলখা সিং ও তাঁর স্ত্রী নির্মল কৌর। ১৩ জুন মৃত্যু হয় নির্ম কৌরের।
1820
অপরদিকে,৩০ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ৩ জুন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মিলখা সিংকে। অবশষে চিকিৎসকজের যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। মিলখা সিংয়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়া জগৎ।
1920
শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ক্রীড়া, রাজনৈতিক, বিনোদন জগৎ সহ সর্ব স্তরের মানুষ।
2020
এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথে সোনা জিতলেও, অলিম্পিকে চতুর্থ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মিলখা সিংকে। কিন্তু ভারতীয় স্পোর্টসের ভবিষ্যৎকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন কিংবদন্তী দৌড়বিদ। 'ফ্লাইং শিখ' মিলখা সিংয়ের জীবনযুদ্ধ সত্যিই আগামির অনুপ্রেরণা হওয়া উচিৎ।