একাধিক বাধা টলাতে পারেনি তাকে, জানুন ফেন্সিংয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভবানী দেবীর লড়াইয়ের কাহিনি
প্রথম ভারতীয় ফেন্সার হিসেবে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করাই নয়, প্রথম ম্য়াচ জিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন ভবানী দেবী। দ্বিতীয় রাউন্ডে হারলেও, ভবানী দেবীর লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে দেশবাসী. ভারতীয় ফেন্সিংয়ের এই ঐতিহাসিক দিনে জানুন ভবানী দেবীর লড়াইয়ের কাহিনি।
Sudip Paul | Published : Jul 26, 2021 12:20 PM IST
১৯৯৩ সালের ২৭ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন ভবানী দেবী। তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন পুরোহিত এবং তার মা গৃহবধূ।
তিনি চেন্নাইয়ের মুরুগা ধনুষ্কোটি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্কুল পড়াশোনা করেন এবং তারপরে চেন্নাইয়ের সেন্ট জোসেফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করেন।
ছোট বেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল ভবানী দেবীর। তবে ষষ্ঠ শ্রেমিতে পড়াকালীন ফেন্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে তার। ভারতের একেবারেই জনপ্রিয় না হলেও, এই খেলাটি তার ভালে লাগে।
ফেন্সিং সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করেন ভবানী দেবী। এরপর স্কুল জীবন শেষ হতেই কেরালার থ্যালাসেরিতে স্পোর্টস অথরিটি অ বইন্ডিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে যোগ দেন তিনি। দেশের কয়েকটি কেন্দ্রই রয়েছে যেখানে ফেন্সিং সেখানোর পরিকাঠামো রয়েছে। তার মধ্যে একটি কেরালার থ্যালাসেরি।
১৪ বছর বয়সে তিনি তুরস্কের প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তিন মিনিট দেরি হওয়ার কারণে ভবানী দেবীকে ব্ল্যাক কার্ড দেখানো হয়েছিল।
এরপর একাধিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছেন ভবানী দেবী। ২০০৯ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। পরে, তিনি ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক ওপেন, ২০১০ ক্যাডেট এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১২ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৫ অনূর্ধ্ব -২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৫ সালে ফ্লেমিশ ওপেনের মতো শীর্ষ প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
এছাড়া একাধিক নজির গড়েছে ভবানী দেবী, যা ভারতীয়দেরদের মধ্যে প্রথম। এছাড়া ২০১৯ সালে সিনিয়র কমনওয়েলথ ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পদক জিতে প্রথম ভারতীয় হয়ে ইতিহাসে নিজের নাম তুলেছিলেন ভবানী দেবী।
২০১৪ সালে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্যের পর তৎকালীন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয় ললিতা ভবানী দেবীকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুশীলের চেষ্টা করেছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের জন্য নিজের ব়্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ঘটনারো কিন্তু তা হয়নি।
তবে ভেঙে পড়েননি ভবানী দেবী। ২০২০ অলিম্পিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন তিনি। ইতালিতে ট্রেনিং কঠিন ট্রেনিং করেন। ও নিজের ব়্যাঙ্ক ৪৫ নিয়ে যান। মাঝে ৩৬ ব়্যাঙ্কেও পৌছেছিলেন তিনি। এবং প্রথম ভারতীয় ফেন্সার হিসেবে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি।
২৬ জুলাই সকালেই ইতিহাস তৈরি করেন ভবানী দেবী। অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবার ফেন্সিংয়ে কোনও ভারতীয় হিসেবে জয় তুলে নেন তিনি। প্রথম ম্যাচে তিউনিসিয়ার প্রতিযোগীকে ১৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন ভবানী।
টেবিল অফ ৩২-এ বিশ্বের তিন নম্বর ফ্রান্সের মেনন ব্রুনেটের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভবানী দেবী। অভিজ্ঞতার বিচারে অসম হলেও, আরও একবার ইতিহাস তৈরির আশায় ছিল দেশবাসী। কিন্তু ব্রুনেটের বিরুদ্ধে ৭-১৫ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেন তিনি।
ইতিহাস তৈরি করার পর ভবানী দেবী সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, আজকের দিনটা আমার কাছে উচ্ছ্বাস ও আবেগের। আমি নিজের সেরাটা দেওযার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক শেষের একটা শুরু রয়েছে। আমি আমার কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাব ও পরের অলিম্পিকে পদক জিতে দেশকে গর্বি করব। ভবানী দেবীর লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সমগ্র দেশ।