একাধিক পরিচয় থেকে পিতার নামেও বিভ্রাট, অভিষেক পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে

দু একটি ঘটনায় তার নাম শোনা গেলেও, এতদিন পর্যন্ত খুব একটায় চর্চায় থাকতেন না তৃণমূল সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রী ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু ভোটবঙ্গে এবার যাবতীয় চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে অভিষেক জায়া। কয়ালা পাচার কাণ্ডে এবার সিবিআই ব়্যাডারে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়লা দুর্নীতি কাণ্ডে অভিষেক পত্নীর ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টের লেনদেন নিয়েই যাবতীয় সন্দেহ দানা বেধেছে সিবিআইয়ের। ফলে  রাজ্য জুড়ে এখন সকলের মুখেই একটা নাম রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়? কিন্তু কে এই রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসল পরিচয়ই বা কি? অভিষেকের সঙ্গে আলাপ কীভাবে? কীভাবে তার নাম জড়াল কয়লা পাচার কাণ্ডে? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে উৎসুখ সকলেই। চলুন জানা যাক রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অজানা সব তথ্য।

Sudip Paul | Published : Feb 23, 2021 2:28 PM IST

115
একাধিক পরিচয় থেকে পিতার নামেও বিভ্রাট, অভিষেক পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে
রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ের আগে নাম ছিল রুজিরা নারুলা। জন্ম থাইল্যান্ডে। রুজিরা আদতে থাইল্যান্ডের নাগরিক। বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে নারুলা পরিবারের ব্যাংককে হোটেল ব্যবসা ছিল। পরে আমদান-রফতানি-সহ অন্য আরও ব্যবসায় যুক্ত নারুলা পরিবার। সেই সঙ্গে অলঙ্কার ও সোনার ব্যবসাও রয়েছে তাঁদের।
215
পরে অবশ্য রুজিরার পরিবার দিল্লিতে চলে আসে। দিল্লির রাজৌরি গার্ডেন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বর্তমানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্নী। সেখানে তাদের একটি পারিবারিক মোবাইলের দোকানের ব্যবসা ছিল। যা বেশ জনপ্রিয়। পরে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও করত রুজিরার পরিবার। যাতায়াত ছিল থাইল্যান্ডেও।
315
দিল্লিতে পড়তে গিয়ে রুজিরার সঙ্গে আলাপ হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। উচ্চমাধ্যমিকের পর আইআইপিএম থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়তে দিল্লি গিয়েছিলেন অভিষেক। জানা যায় সেখানেই তাঁর সহপাঠী ছিলেন  রুজিরা। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় পরিণত হয়। কলেজ থেকে সুইজারল্যান্ডে ট্রেনিংয়ে গিয়ে অভিষেক-রুজিরার সম্পর্ক আরও গভীর হয় বলে জানা যায়। তারপর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
415
এরপর ২০১২ সালের ফেব্রয়ারি মাসে রুজিরাকে বিয়ে করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যায় দিল্লিতে অভিষেক ও রুজিরার বিয়ের এলাহি আসর বসেছিল। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকতে না পরালেও তাঁর দলের অনেক নেতাই হাজির হয়েছিলেন সেই রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। অভিষেকের বিয়ের খরচ নিয়েও বারবার তোপ দাগেন বিরোধীরা।
515

এমনও শোনা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক শুরুতে মেনে নিতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। পরে অবশ্য প্রিয় ভাইপোর জেদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল পিসিকে। তবে বর্তমানে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বর্তমানে রুজিরার সম্পর্ক মধূর।
 

615

রুজিরা তার পরিবারের কাছে খুবই প্রিয়।  অভিষেককেও খুবই ভালোবাসেন শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। মেয়ের সঙ্গে দেখা করার দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারীতে একটি বাড়িও রুজিরার পরিবার কেনে বলে জানা যায়। এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার ব্যাঙ্ককে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
 

715

নানা বিতর্কে জড়ানোর আগে সুখেই সংসার চলছিল রুজিরার। দুটি সন্তানও রয়েছে তাদের। রুজিরা ও অভিষেকর পরিবারে প্রথম হয় কন্যা সন্তান। নাম আজানিয়া। ২০১৯ সাল ফের তাদের পুত্র সন্তান হয়। ছেলের নাম আয়ানাশ।
 

815
এবার আসা যাক রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে বিতর্কিত বিষয়ে। রুজিরার বাবার নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ২০০৯ সেলের ১৪ নভেম্বর প্যানকার্ড পান রুজিরা। বিয়ের পর ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া কার্ডের (ওসিআই) জন্য আবেদন করেন তিনি। তবে ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি রুজিরার পিআইও কার্ড দিয়েছিল তাইল্যান্ডের ভারতীয় দূতাবাস। সেখানে তাঁর বাবার নামের জায়গায় লেখা আছে নিফন নারুলা।
915

২০১৭ সালে রুজিরার বাবার আসল নাম কী তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাধে। পিআইও কার্ডটিকে ওভারসিজ ইন্ডিয়ান সিটিজেন বা ওসিআই কার্ডে রূপান্তরিত করার জন্য কলকাতার ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে আবেদন করেন রুজিরা। কার্ড পেয়েও যান তিনি। 
 

1015

কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়, নিয়মমাফিক ওসিআই কার্ড পাওয়ার জন্য বিয়ের সার্টিফিকেট জমা জমা দিয়েছিলেন রুজিরাবন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সার্টিফিকেটে আবার দিল্লির বাসিন্দা গুরশরণ সিং আহুজা নামে এক ব্যক্তিকে বাবা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দু জায়গায় বাবার নাম ভিন্ন হওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শোকজের মুখে পড়তে হয় রুজিরা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে।

1115

রুজিরার নাম প্রথমবার শিরোনামে আসে ২০১৯-এর মার্চে, লোকসভা ভোটের আবহে। রুজিরার বিরুদ্ধে মামলা করে শুল্ক দফতর। অভিযোগ, ২০১৯ সালের ১৫-১৬ মার্চের মধ্যরাতে এয়ারওয়েজের বিমানে কলকাতায় নামেন রুজিরা। সঙ্গে ছিলেন বোন মেনকা গম্ভীর। শুল্ক অফিসাররা তাঁদের মালপত্র তল্লাশি করতে চাইলে বাধার অভিযোগ ওঠে। বিরোধীরা অভিযোগ করেন নিয়ম বহির্ভূতাবে তাঁর কাছে সোনা পেয়েছিলেন কাস্টমসের অফিসাররা। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, পুলিশ গিয়ে রুজিরাদের ছাড়িয়ে আনে।

1215


ঘটনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার। ভোটের শেষ পর্বের প্রচারে ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। বলেছিলেন, "অভিষেকের স্ত্রীর ব্যাগে ছিল দুটো বালা, তাই নিয়েও মোদীর এত জ্বালা। " তার আগে মেটিয়াবুরুজের সভা থেকে বলেছিলেন, "ওরা অভিষেককেও ছাড়ছে না। ওঁর ছোট্ট বউটাকেও ছাড়ছে না।" 
 

1315
তবে এবার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে সংবাদ শিরোনামে চলে এসেছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের স্ত্রী। কয়লা পাচার কাণ্ডে রাজ্যে যে সিবিআই তদন্ত চলছে তাতে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন অভিযোগ বারবার করেছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষেরা। রুজিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়েছে বলেও অভিযোগ করেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
1415
তাই এবার সিবিআই জেরার মুখে পড়তে হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে। তদন্তকারীদের নজরে তাদের বিদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও তার লেনদেন। যদিও এখনও পর্যন্ত সমস্ত অভিোগ অস্বীকার করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
1515
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত ও তাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের নাম জড়ানো যে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হতে চলেছে বিরোধীদের কাছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos