'২০১৬-য় মমতার জয় ফেসবুকের হাত ধরে', বিজেপির পর তৃণমূল-এর সঙ্গেও আঁখি-যোগের অভিযোগ

ফেসবুক-এর সঙ্গে বিজেপি এবং আরএসএস-এর যোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। এই নিয়ে সংসদেও সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। গত ১৪ অগাস্ট ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে বিজেপিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কার্যনির্বাহী কর্তা আঁখি দাস। বিজেপির পর এবার তৃণমূল কংগ্রেস-এর প্রতিও পক্ষপাত-এর অভিযোগ উঠল ফেসবুকের নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা আঁখি-র বিরুদ্ধে।  

 

amartya lahiri | Published : Aug 21, 2020 10:53 AM IST / Updated: Aug 23 2020, 09:09 AM IST

17
'২০১৬-য় মমতার জয় ফেসবুকের হাত ধরে', বিজেপির পর তৃণমূল-এর সঙ্গেও আঁখি-যোগের অভিযোগ

সিপিএম-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে ২০১৬-র পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের দাবি ত-ণমূল সরকারের পাঁচ বছরের সাফল্য তুলে ধরে ৩৮টি ছোট আকারের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করার পিছনে আঁখি দাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯ মে ফল বের হওয়ার পর তৃণমূলের জয়ের পিছনে এই ৩৮টি ভাইরাল ভিডিও ভূমিকা ফলাও করে আঁখি দাস নিজেই একটি নিউজ পোর্টালে লিখেছিলেন। শুধু তাই নয়, সিপিএম-এর মুখপত্র এবং টুইটার হ্যান্ডেলে  দাবি করা হয়েছে, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে তৃণমূলকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আঁখি দাস-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

 

27

তবে শুধু ২০১৬-ই নয়, সিপিএম-এর অভিযোগ তারও আগে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের পিছনে ভূমিকা নিয়েছিলেন আঁখি দাস। তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়ার যাবতীয় বিষয়ের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি, এমনটাই সিপিএম-এর অভিযোগ। বর্ধমানের তৃণমূলের নির্বাচনী ওয়াররুমের তিনি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে। সেইবার বর্ধমানে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা নিরুপম সেনকে পরাজিত করেছিলেন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। সম্পর্কে তিনি আঁখি দাসের শ্বশুর।

 

37

আঁখি দাসকেই বিজেপি-তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ বলে তুলে ধরেছে সিপিএম। একদিকে যেমন ফেসবুক ইন্ডিয়ার নীতি নির্ধারক হিসাবে বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলের প্রতিই পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, অন্থদিকে পারিবারিক দিক থেকেও তাঁর যোগসূত্র রয়েছে দুই শিবিরেই। একদিকে তাঁর শ্বশুর ২ বারের তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, তাঁর দিদি রশ্মি দাস এবং স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা সৌম্য চট্টোপাধ্যায় আরএসএস ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ সিপিএম-এর। বস্তুত, রশ্মি দাস জেএনইু-পড়ার সময়ে এবিভিপি করতেন এবং সৌম্য চট্টোপাধ্যায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের এবিভিপি ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা। রশ্মি এখন একটি এনজিও চালান, যা দিল্লির আরএসএস ভবন থেকেই চলে বলে অভিযোগ সিপিএম-এর।

 

47

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ওই নিবন্ধ নিয়ে জাতীয় রাজনীতি এখন উত্তাল। কংগ্রেস এবং বামদলগুলি-সহ বহু বিজেপি বিরোধী দলই এই নিয়ে প্রশ্নে বিদ্ধ করছেন বিজেপি নেতৃত্বকে। কংগ্রেস দলের পক্ষে ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকেরবার্গকেও এই নিয়ে চিঠি দিয়েছে। ফেসবুকের অন্দরেও আঁখি দাস সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই সময় এই বিষয়ে একটি রা-ও কাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আঁখি দাসের 'সৌজন্যে' তৃণমূলেরও প্রতিও পক্ষপাত করে ফেসবুক ইন্ডিয়া, সেই কারণেই মুখ বন্ধ রেখেছে তৃণমূল, এমনটাই অভিযোগ সিপিএম-এর। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র টুইট করে কটাক্ষ করেছেন আরএসএস-বিজেপি-টিএমসি একটি একান্নবর্তী পরিবার।  

 

57

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই নিবন্ধটির শিরোনাম, ছিল 'ফেসবুক হেট-স্পিচ রুলস কোলাইড উইথ ইন্ডিয়ান পলিটিক্স', অর্থাৎ ঘৃণামূলক বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকের বিধি-র সঙ্গে খটাখটি লেগেছে ভারতীয় রাজনীতির। সাংবাদিক নিউলি পার্নেল এবং জেফ হরউইট্জ দাবি করেছিলেন, ফেসবুক বিজেপি ও আরএসএস নেতাদের ঘৃণামূলক বক্তব্য সেন্সর করে না। সরাসরি আঁখি দাস-এর নাম করে বলা হয়েছিল, 'ভারতে ফেসবুকের ব্যবসা মার খাবে', এই যুক্তি দিয়ে তিনি ফেসবুকের কর্মীদের বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রে তাদের ঘৃণাবাচন-এর নীতি ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

67

২০১১ সাল থেকেই ফেসবুকের ভারত এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর হলেন আঁখি দাস। এককথায় ভারতে ফেসবুকের সর্বময় কর্তা বলা যেতে পারে তাঁকে। ওয়াল স্টচ্রিট জার্নালের ওই নিবন্ধ প্রকাশ হওয়ার পর গত রবিবার রাতে ৪৯ বছর বয়সী এই তথ্য-প্রযুক্তি কর্মকর্তা দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ করেছিলেন, বেশ কিছু লোক 'অনলাইন পোস্টিং বা কনটেন্ট' প্রকাশ করে তাঁর 'প্রাণ ও দেহ'-এর বিরুদ্ধে 'হিংসাত্মক হুমকি' দিচ্ছে।

 

77

ফেসবুক-বিজেপি যোগ বিতর্ক নিয়ে প্রথম টুইট করেছিলেন রাহুল গান্ধী। সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন ফেসবুক ইন্ডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে আরএসএস বিজেপি। সেই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তবে তারপরেও কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির মুখ বন্ধ করা যায়নি। সংসদের বাদল অধিবেশনেও বিষয়টি ঝড় তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে তৃণমূল কী ভূমিকা নেয়, সেটাই এখন দেখার।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos