পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। এই কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কয় জন এতে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলি। কারণ, নির্দিষ্ট কোনও লক্ষে পরিশ্রম দেয় সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার রসদ। ৬০ পেরিয়েও এই বাক্যকে মাথায় রেখে চলেছেন নাম না জানা এক বৃদ্ধা। মুম্বই লোকালের ফেরিওয়ালি এই চকোলেট দিদিমা এখন ভাইরাল নেটদুনিয়ায়।
পরণে সালোয়ার কামিজ। খানিকটা মলিন, কিন্তু বেশ পরিপাটি। চোখে-মুখে দীপ্ততার ছাপ। সঙ্কোচ রয়েছে কিন্তু নেই যেটা সেটা হল নিজের পেশাকে লোকানোর চেষ্টা। বয়স! শারীরিক এবং চেহারাগত দিক বিচার করে যেটুকু আন্দাজ করা যায় তাতে ষাটের উপরে। এক হাতের পাঁচ আঙুলকে অনেকটা দক্ষ জিমন্যাস্টের মতো করে দুটো প্লাস্টিকের ডাব্বা ধরা, অন্যহাতে শোয়ানো একটা চকোলেটের প্যাকেট। স্থান-মুম্বই-এর লোকাল ট্রেন। এমনই এক বৃদ্ধার ভিডিও এখন ভাইরাল নেটদুনিয়ায়।
দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল এই ভিডিও-টি তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন। আর তারপরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। লাখ খানেকের উপরে ভিউস-এর সংখ্যা পার করে দিয়েছে এই ভিডিওটি। নাম-পরিচয় উহ্য থাকা এই মহিলার পরিশ্রম নেটদুনিয়াকে আবেহে বিহ্বল করে দিয়েছে। স্বাতী তাঁর পোস্টে লিখেছেন- এই প্রবীণ মহিলা মতো আরও হাজার হাজার মানুষ এমনই দিনরাত পরিশ্রম করে নিত্য জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। দুবেলা দুমুঠো খাওয়ারের জন্য এরা এভাবেই পরিশ্রম করে চলেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে এদের কাছ থেকে জিনিস কিনুন।
স্বাতী-র এই ভাইরাল ভিডিও-টি উৎস মোনা এফ খান নামে এক মহিলা। যিনি মুম্বই-এর বাসিন্দা। তিনি ইনস্টাগ্রামে এই ভিডিওটি প্রথম শেয়ার করেছিলেন। মুম্বই লোকালে যাতায়াতের পথে এই বৃদ্ধার মুখোমুখি হয়েছিলেন মোনা। সেখান থেকেই তিনি ভিডিওটি মোবাইলবন্দি করেছিলেন। মোনাও তাঁর ইনস্টা পোস্টে লিখেছিলেন উনি ভিক্ষে চাইছেন না, পরিশ্রম করছেন, সম্ভব হলে ওনাকে সাহায্য করুন। রিয়্যালিটি নামে একটি হ্যাসট্যাগের আন্ডারে এই ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন।
এই ভিডিও-টি দেখে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। কেউ এই বৃদ্ধার ঠিকানা চেয়ে কমেন্ট পোস্ট করেছেন। কেউ আবার বৃদ্ধাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তার জন্য সকলেকে একত্রিত হতে বলেছেন। অনেকে আবার লিখেছেন, কারও কাছে যাতে হাত না পাততে হয় তার জন্য তিনি এই বয়সেও পরিশ্রম করে চলেছেন। এটা সত্যি এক অনুপ্রেরণা জোগায়। কেউ আবার লিখেছেন এই বৃদ্ধা দেশের যুব সমাজের কাছে আদর্শ হয়ে ওঠা উচিত। যে নিষ্ঠা এবং কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে তিনি এই কাজ করে চলেছেন তা সত্যিকারেই প্রশংসার দাবি রাখে। কেউ লিখেছেন মাঝে মাঝে আমাদের কিছু কেনা উচিত, প্রয়োজন থাকলে তবেই কিনতে হবে- এই ধরনের ঘটনায় এমন মানসিকতা ত্যাগ করা দরকার। আবার কেউ লিখেছেন, এই বৃদ্ধাকে দেখে স্যালুট করতে ইচ্ছে করছে। আবার কিছু নেটিজেনের গলায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার কোনও অল্টারনেটিভ হতে পারে না।