২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট মোদী সরকার বাতিল করেছিল ৩৭০ ধারা। গত ২ বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে কী কী বড় পরিবর্তন ঘটল?
বৃহস্পতিবার, ৩৭০ ধারা বাতিল করার এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার দুই বছর পূর্ণ হলো। গুপকার জোট এদিনও এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের নিন্দা করে একে 'বিজেপির নয়া কাশ্মীরের ধাপ্পা' বলেছে। তারা আরও বলেছে, নতি স্বীকার না করে শান্তিপূর্ণ এবং আইনি উপায়ে তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। গত দুই বছরে অবশ্য বেশ কয়েকটি বড় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে উপত্যকায়, সেখান থেকে পিছনে ফেরা মনো হয় আর সম্ভব নয়। দেখে নেওয়া যাক কী কী -
জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কিনতে পারে বাইরের রাজ্যের মানুষ
২০২০ সালের অক্টোবরে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভারতের অন্য়ান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের জমি কেনার পথ পরিষ্কার করেছিল। একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীর উন্নয়ন আইনের ১৭ নম্বর ধারা (জমি নিষ্পত্তি সংক্রান্ত) থেকে 'রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা' বাক্যবন্ধটি বাদ দিয়েছিল। তবে, কৃষি জমি অকৃষিবিকাজের জন্য হস্তান্তর করা যাবে না।
আবাসিকের মর্যাদা পেয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মহিলাদের অ-স্থানীয় স্বামীরা
জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের পুরুষদের সঙ্গে বিবাহিত স্থানীয় মহিলাদের স্বামীরা এখন আবাসিক শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। চলতি বছরের জুলাই মাসেই এই সংক্রান্ত নিয়মের পরিবর্তন করা হয়েছে। আবাসিকের শংসা পেলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তারা জমি বা সম্পত্তি কিনতে পারবেন, সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। পরিবর্তিত আইন বলছে, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা অথবা সাত বছর ধরে সেখানে পড়াশোনা করেছেন যারা এবং সেখানকার কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দশম বা দ্বাদশ শ্রেনীর পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা এবং তাঁদের সন্তানরাও আবাসিক মর্যাদা পাবেন।
আরও পড়ুন - ১৫টি জায়গায় এনআইএ-র হানা - গ্রেফতার হল এক জঙ্গি, জম্মু ও কাশ্মীরে এল বিরাট সাফল্য
আরও পড়ুন - বিপর্যয়ের মুখে উত্তর ভারত - মেঘ ফাটা বৃষ্টিতে ভাসল অমরনাথ, হিমাচলে হড়পা বানে মৃত ৯
বাতিল হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের পৃথক পতাকা
৩৭০ ধারা ধারা বাতিলের পর শ্রীনগরের সরকারি সচিবালয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের পৃথক পতাকা নামিয়ে শুধুমাত্র ভারতীয় তেরঙা উত্তোলন করা হয়েছে।
সিকিওরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল পাথর ছুড়িয়েদের
নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে যারা পাথর ছোড়ে বা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসে জড়িতদের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিকিওরিটি ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না। চলতি বছরের ৩১ জুলাই এরকমই এক আদেশ জারি করেছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সিআইডি শাখা। সমস্ত বিভাগকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, ভোরেই জম্মু কাশ্মীর রাজ্যের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা এবং তার বাবা ফারুক আবদুল্লা-সহ কয়েকশো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। ২০২০ সালের মার্চে মুক্তি দেওয়া হয় ওমর এবং পারুক আবদুল্লাহকে। আর, মুফতি মুক্তি পান ২০২০ সলের অক্টোবরে। এরপরই জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। এতদিন যারা কাশ্মীরে পরস্পর বিরোধী ছিলেন, সেইরকম কাশ্মীরের মোট ছয়টি মূলধারার রাজনৈতিক দল একটি জোট গঠন করেছেন। লক্ষ্য, উপত্যকা এলাকার বিশেষ মর্যাদা পুনরুদ্ধার। প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই বারের জম্মু-কাশ্মীরের ভোট দারুণ আকর্ষণীয় হতে চলেছে।
সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে বড় পরিবর্তন
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপেও বড় পরিবর্তন এসেছে। গত দুই বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সক্রিয় প্রায় প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের একের পর এক কমান্ডারকে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেইসঙ্গে, সীম্নত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রেও বড় সাফল্য এসেছে। এর ফলে এখন ড্রোন মারফত হামলা বা অস্ত্রশস্ত্র পাচারের পাল্টা পথ খুঁজে বাধ্য হয়েছে পাক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মাথারা।