গ্যালান্ট্রি সম্মানে সম্মানিত করা হচ্ছে ভারতীয় নৌসেনার ৬ জন অফিসারকে। তাঁদের মধ্যে শৌর্য চক্র দেওয়া হবে ক্যাপ্টেন শচীন আর সিকুইরাকে।
পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন তাঁদের দমানো খুবই কঠিন। শক্রর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। যে কোনও পরিস্থিতিতেই দেশকে বাঁচাতে বা সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। আর এই বীরত্বের জন্য এবার তাঁদের সম্মান জানাচ্ছে কেন্দ্র। গ্যালান্ট্রি সম্মানে সম্মানিত করা হচ্ছে ভারতীয় নৌসেনার ৬ জন অফিসারকে। তাঁদের মধ্যে শৌর্য চক্র দেওয়া হবে ক্যাপ্টেন শচীন আর সিকুইরাকে। এছাড়া নৌসেনা মেডেল দেওয়া হবে ক্যাপ্টেন প্রশান্ত হান্ডু, কমান্ডার সুনীল এস কোরতি, কমান্ডার বিপিন পানিকর, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাজ কৃষ্ণ মানু ও প্রহ্লাদ (এমসিএ ২)।
এই মুহূর্তে আইএনএস কোচির কমান্ডিং অফিসার পদে নিযুক্ত রয়েছেন ক্যাপ্টেন শচীন আর সিকুইরা। তাউতের মতো অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে উত্তর আরব সাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছিল আইএনএস কোচি। ওই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়ছিলেন তাঁরা। ওই পরিস্থিতিতে উত্তাল সমুদ্র থেকে সবাইকে উদ্ধার করা তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, সাহসিকতার উপর ভর করে ক্ষতিগ্রস্ত বার্জ পি৩০৫ থেকে ১২৫জনকে নিরাপদে উদ্ধার করেছিল আইএনএস কোচি।
চলতি বছরের ১৭ মে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তাউতে আছড়ে পড়েছিল মুম্বই উপকূলে। সেই সময় আরব সাগরে খারাপ হয়ে যায় বার্জ পি-৩০৫। এরপর ওই বার্জ থেকে সবাইকে উদ্ধার করার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধ জাহাজ আইএনএস কোচিকে। সেই মতো শুরু হয় উদ্ধারকাজ। কিন্তু, প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছিল নৌবাহিনী। সেই সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ১০ মিটার। আর তার সঙ্গে হচ্ছিল ভারী বৃষ্টি। দৃশ্যমানতাও অত্যন্ত কম ছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অফিসার। যুদ্ধজাহাজকে সোজা ক্ষতিগ্রস্ত বার্জের কাছে নিয়ে যান তিনি। এরপর সরাসরি সমুদ্র থেকেই সবাইকে উদ্ধার করেন। তবে ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এই কাজ একেবারেই সহজ ছিল না। কারণ সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজ এক জায়গায় রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে বার্জ থেকে সবাইকে উদ্ধার করার জন্য একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছিল আইএনএস কোচিকে। জাল, ঝুলন্ত মইয়ের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছিল সবাইকে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে নিরলস প্রতিশ্রম করে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ওই বার্জ থেকে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করেছিল আইএনএস কোচি। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন শচীন।
আরও পড়ুন- ভারত ছাড়া আরও কিছু দেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৫ অগাস্ট, দেখে নিন সেই দেশগুলি
ক্যাপ্টেনের সাহসী কাজ, ক্রুদের অনুপ্রেরণা দেওয়া ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ১২৫ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল আইএনএস কোচি। তার মধ্যে প্রায় ৬৫ জনকে অন্ধকারের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই অভিযানে কারও প্রাণহানি হয়নি। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযান সফল হয়েছে শুধুমাত্র তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব দান, পেশাদারিত্বের মাধ্যমে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে সাহসিকতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার জন্য ক্যাপ্টেন শচীনকে শৌর্য চক্র সম্মানে সম্মানিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্টের বিশেষ দিনে কাছের মানুষদের পাঠান এই শুভেচ্ছা বার্তাগুলি