সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে মঙ্গলবার ফের একবার বৈঠকে বসেছেন দুই দেশের সেনা কর্তারা। তার মধ্যেই সামনে এল গালওয়ান উপত্যকার নতুন উপগ্রহ চিত্র। যা উদ্বেগ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে দিল্লির। নতুন এই উপগ্রিহ চিত্রে গালওয়ান উপত্যকার পাশাপাশি প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার পয়েন্টগুলিতেও লাল ফৌজের আগ্রাসনের ছবি ধরা পড়েছে। ২৮ জুনের ওই ছবি সামনে আসতেই আরও তৎপরতা শুরু হয়েছে নয়াদিল্লির অন্দরে।
উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ফিঙ্গার ৪ এবং ফিঙ্গার ৫ এর মাঝে বিশালাকার চিনা লিপি ও প্রতীক আঁকা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দুই ফিঙ্গার পয়েন্টের মাঝে প্রচুর অস্থায়ী ছাউনিও তৈরি করে ফেলেছে চিনা সেনা। সেখানে মজুত করেছে অস্ত্রশস্ত্র।
ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে মাসের গোড়ায় প্যাংগং লেক বরাবর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিন সেনা মজুতের পর থেকেই ফিঙ্গার ফোর এর পরে আর টহল দিতেও দেওয়া হচ্ছে না ভারতীয় বাহিনীকে।
নতুন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার ৪ এবং ফিঙ্গার ৫ এর মধ্যে অন্তত ৮১ মিটার লম্বা ও ২৫ মিটার দীর্ঘ এলাকায় চিনা হরফে লেখা এবং প্রতীকচিহ্ন আঁকা হয়েছে। আরও দেখা যাচ্ছে, শুধু প্যাংগং লেকের ধার বরাবর নয়, আরও অন্তত ৮ কিলোমিটার ভারতের দিকে ঢুকে ঘাঁটি গেড়েছে চিনা বাহিনী। গড়ে তোলা হয়েছে ১৮৬টি ছোট বড় অস্থায়ী তাঁবু ও ছাউনি। ফিঙ্গার ৫ এর কাছে একটি নজরদারি বিমানও দেখা গিয়েছে।
পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের ধার বরাবর চিনের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই ফিঙ্গারপয়েন্টগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে বৈঠক শুরু হলেও বিতর্কিত এলাকাকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে ফের একবার উত্তেজনার ধিকিধিকি আগুনকে উসকে দিল চিন, বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
আগ্রাসী চিন এখন চাইছে যেকোনও ভাবেই হোক ভারতীয় জমি অধিগ্রহণ করতে। টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই। ১৫ জুন, এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ বাঁধে। পরে উভয় পক্ষের সীমানা যেখানে কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্যকে কাঁটাতারের সাথে জড়িত লাঠির মতো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে চিন যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।
উপগ্রহ চিত্র থেকে এযে ছবিগুলি পাওয়া গিয়েছে তাতেও দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলে চিনের সেনাবাহিনী অনেক বেশি সংখ্যায় মোতায়েন রয়েছে। তাঁরাই ভারতীয় সেনাদের টহল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ওই ফিঙ্গার ৪-ই কার্যত সীমান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দেশের। ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত এসে নির্মাণ কাজও শুরু করেছে চিনের পিপল্স লিবারেশন আর্মি । তবে ফিঙ্গার ১ এবং ফিঙ্গার ২ পর্যন্ত এখনও চিনা বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।