কয়েকজন বিজেপি নেতা প্ররোচনামূলক পোস্ট করা সত্ত্বেও সেগুলির বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনই অভিযোগ উঠেছে বিদেশের প্রথম সারির এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে ফেসবুকের পলিসি নির্ণয়াক আধিকারিককে উদ্ধিৃত করেই প্রকাশ করা হয়েছিল। যা নিয়ে এখন তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি।
হেট স্পিচ নিয়ে বিজেপি নেতাদের প্রতি একটু বেশিই সদয় ফেসবুক। বাণিজ্যিক কারণে বিজেপি নেতাদের প্ররোচনামূলক বক্তব্য সরানো হয়না ফেসবুক থেকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এবার তাই সাফাই দিতে নামতে হল ফেসবুককে। তাদের বক্তব্য, 'হেট স্পিচ' বা হিংসায় উস্কানি দিতে পারে এমন পোস্টের বিরুদ্ধে তাদের নীতি সবার জন্য সমান। রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা ব্যক্তির ওজন না দেখেই তারা এ ধরনের পোস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আগামী দিনে এই 'ব্যবস্থা'কে আরও উন্নত করার জন্য তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট।
যদিও নিরপেক্ষতা নিয়ে ফেসবুকের এই দাবিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধী শিবির। তাদের বক্তব্য, নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে আসল তথ্য বের করে আনতে হবে।এই ইস্যুতে আগেই যুগ্ম সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ে তদন্তের দাবি তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই সুরেই সুর মিলিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। তিনি টুইটারে লিখেছেন, 'বিজেপি এবং ফেসবুকের এই যোগসাজশকে সর্বসমক্ষে আনতে জেপিসি গঠন করা হোক। যতদিন না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসছে ততদিন সরকারি কোনও বিভাগ কিংবা নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেসবুকের কাজকর্ম নিষিদ্ধ করা হোক।'
কংগ্রেস যে বিষয়টির আরও গভীর যাবে তা গত কয়েকদিনেই বোঝা গিয়েছিল। এবার এই ঘটনায় সোজাসুজি জুকারবার্গকেই জড়াল কংগ্রেস। ফেসবুকের ভারতীয় আধিকারিক আঁখি দাস সহ অন্যান্যদের ভূমিকা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়ে সংস্থার শীর্ষ কর্তা মার্ক জুকারবার্গকে চিঠি দিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল।
মঙ্গলবার ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকেরবার্গকে পাঠানো ওই চিঠিতে সংস্থার ভারতীয় আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল। সেই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুকের ভারতীয় আধিকারিকদের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুকের ভারতীয় আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তাঁরা বিজেপি সদস্যদের মতোই আচরণ করছেন। বিজেপি নেতারা ফেসবুকের মাধ্যমে যে ঘৃণা ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাতে সরাসরি মদত জোগাচ্ছেন। বেশি মানুষের কাছে যাতে তা পৌঁছয়, তার জন্য পদক্ষেপ করছেন। উল্টোদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা বিজেপি নেতাদের ধর্মীয় বিষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে ফেসবুকে যে সব ব্যবহারকারী সরব হচ্ছেন, তাদের পোস্ট যাতে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছতে না পারে, তার জন্য পোস্ট ব্লকড করে দিচ্ছেন।
দিল্লি দাঙ্গার সময়েও অভিযোগ উঠেছিল, কপিল মিশ্র, তেজিন্দর পাল সিং বগ্গার মতো বিজেপি নেতাদের উসকানিমূলক-বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দাবানলের মতো ফেসবুকে ছড়িয়েছে। কিন্তু মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা তা ছড়ানো নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি। গত শুক্রবার 'দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' ফেসবুকের একাধিক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে তাদের লেখা দীর্ঘ প্রতিবেদনের দাবি করে, জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে বিজেপি নেতাদের হেট স্পিচের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে ফেসবুক। আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমের এই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ধুন্ধুমার বেধে গিয়েছে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে।
অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের অন্যতম আধিকারিক আঁখি দাস গোটা ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছেন। তবে শুধুমাত্র ভারতে ন, মার্কিন মুলুক সহ একাধিক দেশে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা চালানোর অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরেই। পাশাপাশি অশ্লীলতাকেও প্রশ্রয় দেওয়ার মতো কর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে।