২.৩৫ লাখ কোটি টাকার জিএসটি ঘাটতি, ঈশ্বরের বিধানেই সংকুচিত অর্থনীতি যুক্তি নির্মলার

  • চলতি অর্থবর্ষে জিএসটি ঘাটতি ২.৩৫ লাখ টাকায় ঠেকবে
  • করোনা অতিমারিকে ‘দৈবদুর্বিপাক’ আখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী
  • তাঁর আশঙ্কা, এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে
  • তবে  কেন্দ্রের পক্ষে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য করা সম্ভব নয় জানিয়ে দিলেন

Asianet News Bangla | Published : Aug 28, 2020 5:07 AM IST / Updated: Aug 28 2020, 10:42 AM IST

জিএসটি ঘাটতির জন্য় কার্যত করোনাকেই দায়ী করলেন দেশের অর্থমন্ত্রী  নির্মলা সীতারমন। জিএসটি কাউন্সিলের ৪১তম বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ঈশ্বরের বিধানের জন্য়ই এবার দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে। তাঁর আশঙ্কা, এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পৌরহিত্যে জিএসটি কাউন্সিলের ৪১ তম বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজ্যগুলির আয় কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হলেও মোদী সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে নির্মলা জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের পক্ষে অর্থ সাহায্য করা সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্রের নিজেরই ভাড়ার শূন্য।

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের পক্ষে জিএসটি ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয়। প্রত্যাশা মতো চলতি বছর ১৪ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় বাড়বে না, তার জন্য করোনা পরিস্থিতিকেই দায়ি করেছেন নির্মলা।

আরও পড়ুন: চিনকে শায়েস্ত করতে ভারতের 'ব্রহ্মাস্ত্রের' উপরেই ভরসা ভিয়েতনামের, জানুন বিধ্বংসী এই মিসাইল সম্পর্কে

চলতি অর্থবর্ষে জিএসটি ঘাটতি ২.৩৫ লাখ টাকায় ঠেকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে দুটি বিকল্প দিল জিএসটি কাউন্সিল। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্যগুলিকে সাতদিনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হল বৈঠকে।  পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব অজয় ভূষণ জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য জিএসটি আদায় ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে যে আর্থিক ঘাটতি অনুমান করা হচ্ছে, তার মধ্যে জিএসটি প্রণয়নের কারণে ৯৭,০০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাকি পরিমাণ ঘাটতির জন্য দায়ী করোনা মহামারী। 

কেন্দ্রের  হিসেব অনুসারে, চলতি আর্থিক বছরের জন্য রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ দরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৫,০০০ কোটি টাকা মিলবে জিএসটির অন্তর্গত সেস থেকে। যার ফলে এক্ষেত্রে মোট ঘাটতি হতে পারে ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। রাজস্ব সচিব অজয় ভূষণ পান্ডে জানিয়েছেন, এরমধ্যে ৯৭,০০০ কোটি টাকা জিএসটির জন্য ঘাটতি হবে আর বাকিটা করোনার প্রভাবে অর্থনীতির অবস্থান জন্য।

আরও পড়ুন: খোদ নিজের দেশেই মোদীকে নিয়ে নাজেহাল জিনপিং, চিনে জনপ্রিয়তায় সমানে সমানে টক্কর দুই রাষ্ট্রপ্রধানের

এখন রাজ্যের সামনে দু’টি বিকল্প। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা কেন্দ্র দিতে পারছে না, হয় সেটুকু তারা বাজার থেকে ধার করুক। অথবা জিএসটি থেকে যতখানি আয় কমেছে, তার পুরোটাই ধার করুক। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজ্যগুলি বেশি পরিমাণ ধারের পথে হাঁটলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে রাজ্যকে ঋণ দিতে পারে।

পান্ডে জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেএকটি বিশেষ জানলা ব্যবস্থা করা হচ্ছে রাজ্য গুলির জন্য। যাতে একটি যুক্তিসংগত সুদের হারে ৯৭,০০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। এই অর্থ পরিশোধ করা হবে জিএসটি চালুর পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ দিকে সেস আদায়ের মাধ্যমে।দ্বিতীয় যে বিকল্পটি রাজ্যগুলির সামনে রাখা হয়েছে তাতে পুরো ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ঘাটতির জন্য বিশেষ জানালা ব্যবস্থা হচ্ছে। পান্ডে জানিয়েছেন, রাজ্য গুলিকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে এই প্রস্তাব ভেবে দেখার জন্য।

এদিকে বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকের আগের দিন বুধবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়তে দেখা গিয়েছিল। বিশেষত কেন্দ্রের এই ক্ষতিপূরণ মেটানোর কোন দায় নেই বলে অর্থমন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের কাছে মত চাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। জিএসটি পরিষদের বৈঠকের আগের দিনে সাতটি বিরোধী শাসিত মুখ্যমন্ত্রীরা এই ব্যাপারে ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী সরকার তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করছে না বলে অভিযোগ তোলা হয়। এমন পরিস্থিতি চললে ভবিষ্যতে জিএসটি পরিষদ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা সরে আসবেন বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। 

বিরোধী অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিজেপির অর্থমন্ত্রীরাও দাবি তোলেন, কেন্দ্র ধার করে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিক। কেন্দ্র ঋণ নিলে সুদও কম লাগবে। কিন্তু নির্মলা জানান, অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলবে যাতে রাজ্যগুলি কম সুদে ধার পায়। একইসঙ্গে তিনি জানান, কেন্দ্রের প্রস্তাবে ঐকমত্য তৈরি হলেই বকেয়া জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া হবে। বিরোধী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্র চাপ দিয়ে রাজি করানোর কৌশল নিচ্ছে।

তবে অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব, রাজ্য যে বাড়তি ধার করবে, তা সুদে-আসলে সেস থেকেই শোধ হবে। রাজ্যের বোঝা বাড়বে না। প্রয়োজনে সেসের হার বাড়ানো হবে বা আরও বেশি পণ্যের উপর সেস চাপবে। যার অর্থ, গাড়ি, নরম পানীয়, সিগারেট, তামাক, পানমশলা বা কয়লার উপরে জিএসটি-র অতিরিক্ত যে সেস চাপে, তা ২০২২-এর জুনের পরেও বহাল থাকবে। বিরোধীদের অভিযোগ, আখেরে আমজনতার বোঝাই বাড়বে।

২০১৭-র জুলাই থেকে জিএসটি চালুর সময় ঠিক হয়েছিল, রাজ্যগুলির রাজস্ব ১৪ শতাংশ হারে না-বাড়লে কেন্দ্র পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেবে। ২০২২-এর জুন পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য, শরীর ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যে জিএসটি অতিরিক্ত সেস বসানো হবে। সেই সেস বাবদ আয়ের তহবিল থেকেই ক্ষতিপূরণ মেটানো হবে। কেন্দ্রের এই প্রতিশ্রুতি সংবিধানেও ঢোকানো হয়। ‘দৈবদুর্বিপাক’-এ এর থেকে ছাড় পাওয়ার শর্ত আইনে রাখা হয়নি। লকডাউনের আগে থেকেই কেন্দ্র সময়মতো জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাচ্ছিল না। পরে এপ্রিল-মে, জুন-জুলাই, দুই কিস্তিতে মোট চার মাস রাজ্যগুলি ক্ষতিপূরণ পায়নি। মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা।

Share this article
click me!