রাশিয়ায় পৌঁছেই অস্ত্র জোগাড়ে ময়দানে রাজনাথ, এস-৪০০ মিসাইলের দ্রুত সরবরাহের আর্জি পুতিন প্রশাসনকে

  • চিনের সঙ্গে উত্তেজনার মাঝেই রাশিয়ায় রাজনাথ
  • রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে কথা 
  • দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের সামরিক সম্পর্কের ইতিহাস
  • রুশ-ভারত সামরিক সহযোগিতা আরও চাঙ্গা করাই লক্ষ্য

Asianet News Bangla | Published : Jun 22, 2020 11:51 AM IST / Updated: Jun 22 2020, 10:05 PM IST


পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীন-ভারতীয় সেনাদের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের শহিদ  ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এরইমধ্যে তিনদিনের সরকারি সফরে রাশিয়ায় পৌঁছলেন  ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জামার্নির বিরুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে হাজির থাকবেন। তাবে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নামে রাশিয়ায় গেলেও সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে দেশের  অস্ত্রভান্ডারকে আরও শক্তিশালী করে তোলা রাজনাথের লক্ষ্য তা বলাই  বাহুল্য। তাই মস্কোয় পৌঁছেই রাজনাথ নেমে পড়লেন রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে।

শোনা যাচ্ছে রাজনাথের এই ৩ দিনের সফরেই  রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের দ্রুত ডেলিভারি চাইতে চলেছে ভারত। পাঁচটি অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ক্রয় করতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে মস্কোর সঙ্গে ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছিল দিল্লি। গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ফেডারেল সার্ভিস অফ মিলিটারি টেকনিক্যাল কার্পোরেশন অফ রাশিয়া’র ডেপুটি ডিরেক্টর ভ্লাদিমির দ্রঝভ জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই প্রথম এস-৪০০ সিস্টেম হাতে পাবে ভারত। তবে চিনের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নাকি তার আগেই তা ভারতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হচ্ছে রাশিয়াকে। ভূমি থেকে বায়ুতে আঘাত হানতে সক্ষম এস-৪০০-কে রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। একইসঙ্গে ফাইটার জেট , নৌসেনার জন্য যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং টি-৯০ যুদ্ধ ট্যাঙ্কেরও দ্রুত সরবরাহের দাবি জানিয়েছে ভারত। এতেই স্পষ্ট, যে কোনও পরিস্থিতির জন্য দেশের তিন বাহিনীকেই তৈরি রাখতে চাইছে ভারত। 

এদিকে রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগে তিন সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিন বাহিনীকেই প্রচুর অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। তিন বাহিনীকেই  ৫০০ কোটি টাকায় যে কোনও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের সংঘাতে আরও বেশি করে তেরি থাকতে পারে ভারত।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, তিন বাহিনী ভাইস চিফদের এই ৫০০ কোটি টাকার অস্ত্র কেনার অনুমোদন দেওয়া হবয়েছে। যে যে ক্ষেত্রে অভাব রয়েছে, তা পূরণ করার জন্য এই অস্ত্র কেনার কথা বলা হয়েছে। এর আগে উরি হামলা এবং বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পরও এরকমই আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে। সেইসময় প্রচুর অস্ত্র কেনা হয়। যার মধ্যে ছিল স্পাইস ২০০০ মিসাইল, স্ট্রাম আটক গ্রাউন্ড মিসাইল সহ একাধিক অস্ত্র। ইজরায়েল থেকে কেনা হয়েছিল স্পাইস অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চালু হওয়া লকডাউন চলাকালীন সময়ে এটাই কোনও কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিদেশ সফর বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে বিদেশ সফর করেছিলেন নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন উপলক্ষে ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি রিয়াধে গিয়েছিলেন। এর কয়েকদিন আগে ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানি ঘুরে এসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত বহাল থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক দশকের সামরিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই সফরে রওনা হয়েছেন বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা আরাও জানান, রুশ-ভারত সামরিক সহযোগিতা আরও চাঙ্গা করায় জোর দিয়ে শীর্ষ রুশ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনাও করতে পারেন রাজনাথ। এদিকে ২৪ জুনা মস্কোয় আয়োজিত ভিকট্রি ডে প্যারেডে রাজনাথের মত  আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও।  লাদাখ নিয়ে রক্তাক্ত সংঘর্ষের আবহে সেখানে দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলাদা করে বৈঠকে বসেন কিনা এখন সেদিকেই নজর সবার।
 

Share this article
click me!