হিংসার দিল্লিতে সম্প্রীতির ছবি। মুসলিম প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রয়েছে ব্রাহ্মণ পরিবার। তাই নিরাপত্তার জন্য নিজের পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জানিয়ে দিয়েছেন দিল্লির মুসলিম অধ্যুসিত এলাকা নতুন মুস্তফাবাদের বাসিন্দা রাম সেবক শর্মা। গত ৩৫ বছর ধরে শর্মা পরিবার এই এলাকার বাসিন্দা। সুখে-দুঃখে তাঁরা একে অপরের পাশে থেকেছেন। কখনই সংখ্যালঘু প্রতিবেশীদের শত্রু মনে হয়নি। তাই দিল্লির আকাশ যখন হিংসা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল সেই সময় তাঁর ও তার পরিবারে এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়নি নিজের পাড়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যেতে হবে। শনিবার সাংবাদিকদের সামনে এসে এমনই দাবি করেছেন রামসেবক শর্মা।
রামসেবক শর্মা জানিয়েছেন গত তিন চার দিন ধরে হিংসায় উন্মত্ত একদল জনতা ক্রমাগত দাপিয়ে বেড়িয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির নতুম মুস্তফাবাদ এলাকায়। সেই সময় রামসেবক শর্মার বাড়িতে থাকত ভয়ের আবহ। কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য শর্মা পরিবারকে হিংসার মুখে ঠেলে দেয়নি তাঁদের দীর্ঘ দিনের পরিচিত মুসলিম প্রতিবেশীরা। শর্মা পরিবারে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। বাড়িয়ে দিয়েছিল সাহায্যের হাত। সব রকমভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করেছিল প্রতিবেশীরা। তাই যখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে দিল্লির জনজীবন তখনই সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রতিবেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিবারের কর্তা রামসেবক শর্মা। ব্রাহ্মণ পরিবারটির কথায় তাঁদেরা পাড়ায় কোনও সাম্প্রদায়িক বিভাজন হয়নি। গত ৩৫ বছর ধরে তাঁরা যেমন একে অপরের পাশে থেকেছেন এখনও তেমনই আছেন। হিংসার দিনগুলিতে প্রতিবেশী মুসলিম পরিবার তাঁদের বাড়িতে এসে সাহস যুগিয়েছিলেন। পাশে থাকার কথা বলেছিলেন।
দিল্লির আরও বেশ কয়েকটি মুসলিম মহল্লায় দেখা গেছে সম্প্রীতির ছবি। কোথায় মুসলিম ভাইদের কড়া পাহারায় বিয়ে হচ্ছে হিন্দু বোনের। কোথাও আবার উন্মত জনতার হাত থেকে হিন্দু প্রতিবেশীকে রান্না ঘরে লুকিয়ে রেখেছে মুসলিম পরিবার। সবমিলিয়ে চরম এই হিংসাতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে মরে যায়নি সৌভাতৃত্ব বোধ।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যে হলেও বাস্তব নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে সমর্থক ও বিরোধীদের লড়াই দেখল রাজধানী। অকালে ঝরে গেল ৪২টি প্রাণ। লুঠপাঠ চলল দেদার। অনেকেরই রুজিরুটি বন্ধের মুখে।