চলে গেলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীন বিজেপি নেতা কল্যাণ সিং। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
চলে গেলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজস্থানের প্রাক্তন রাজ্যপাল কল্যাণ সিং। শনিবার লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী পিজি ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মৃত্যুর কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে সেপসিস এবং মাল্টি-অর্গান ফেইলিওর। গত ৪ জুলাই সংক্রমণ নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রথম থেকেই তিনি আইসিইউ-তে ছিলেন এবং তার চেতনা প্রায় ছিল না বললেই চলে। শুক্রবারই, হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা গুরুতর এবং তাকে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা ব্যবস্থার সাহায্য় দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রবীন ই বিজেপি নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। টুইট করে তিনি বলেছেন, 'তিনি (কল্যান সিং) উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছিলেন। তাঁর পুত্র শ্রী রাজবীর সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সমবেদনা জানিয়েছি। ওম শান্তি'। চলতি মাসেই কল্যান সিং-ের স্বাস্থ্যের খবরাখবর নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং েবং অন্য়ান্য বিজেপি শীর্ষনেতারা। শুক্রবারই েসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
১৯৯১ সালে কল্যাণ সিং প্রথম উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় তিনিই ছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। বাবরি ধ্বংসের পর সিপিেম নেতা জ্যোতি বসুর লিখিত অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও উত্তরপ্রদেশে ৩৫৬ ধারা জারি করেন। ইস্তফা দিতে বাধ্য হন কল্যান সিং। পরে অবশ্য তিনি বারবারই দাবি করেছেন ওইদিন তিনি অনেকের প্রাণ বাচিয়েছিলেন। তিনি জানান, অযোধ্যা যাওয়ার পথে সাকেত কলেজের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পথ আটকেছিল করসেবকেরা। কল্যান সিং-ের কাছে গুলি চালানোর আদেশ চাওয়া হয়েছিল। তিনি তা দেননি। তাতে অনেক করসেবকের প্রাণ বেচেছিল বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
বিতর্কিত প্রথমবারের পর, ১৯৯৭ সালে বিজেপি-বিএসপি ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তিতে ফের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কল্যাণ সিং। বিএসপি সমর্থন প্রত্যাহার করার পর, কংগ্রেসের একটি অংশ তাকে সমর্থন করায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে যান। ১৯৯৮ সালে তারাও সমর্থন প্রত্যাহার করার পর কল্যাণ সিং সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বিজেপির সঙ্গে কল্যাণ সিংয়ের সম্পর্কেও অনেক চড়াই -উতরাই ছিল। স্কুলজীবন থেকেই আরএসএস-ের সদস্য ছিলেন তিনি। ভারতীয় জনসংঘ, জনতা পার্টি করে তারপর বিজেপির সদস্য হয়েছিলেন। তারপরও বারবারই দল থেকে বেরিয়েছেন, আবার ফিরে েসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদেই তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতেই তিনি বিজেপি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় ক্রান্তি পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করেছিলেন। ২০০৪ সালে আবার বিজেপিতে ফিরে আসেন। ৫ বথর পর ২০০৯ সালে আবার তিনি গেরুয়া শিবির ত্যাগ করেন। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবেই ইটা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ২০১০ সালে তিনি জন ক্রান্তি পার্টি গঠন করেছিলেন। চার বছর পর আবার তিনি বিজেপিতে ফিরে আসেন। ওই বছরই তাকে রাজস্থানের রাজ্যপাল করা হয়েথছিল। ২০১৯ সালেই রাজ্যপাল হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হয়েছিল।