ইসরায়েলের সফটওয়ার পেগাসাস ব্যবাহারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানিয়েছে দেশের নাগরিকদের গোপনীয়তা বাজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে কলুষিত করার জন্য এজাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানান হয়েছে।
ইসরায়েলের সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থা এনএসও (NSO) গ্রুপ পেগাসাস তৈরি করেছে। ২০১৬ সাল থেকেই এটি সক্রিয়। এটি একটি সফটওয়ার। ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা পেগাসাস ব্যবহার করে তথ্য ফাঁস করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে একগুচ্ছ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানান হয়েছে ভারত সরকার দেশের নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিব্ধ। মনগড়া গল্প প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক বলেছে, পূর্ব ধারণাযুক্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্টে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপে পেগাসাস ব্যবহার করার বিষয় এজাতী. দাবি করা হয়েছিল। এই রিপোর্টগুলির কোনও সত্যতা নেই বলেও দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও হোয়াটসঅ্যাপ তা অস্বীকার করেছিল।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ানসহ প্রায় ১৬টি মিডিয়া পেগাসাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ফোন থেকে তথ্য চুরি করা হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় এক ডজনেরও বেশি দেশ এই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারী চালাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে জানান হয়েছে। সবকটি রিপোর্টেই প্রায় সংশ্লিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। তবে ভারত সরকার এই অভিযোগ মানতে নারাজ। কেন্দ্র বলেছেন অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন। ইতিমধ্যেই সংসদে বিতর্কের জাবাবও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার অবৈধ কিছু করেনি বলেও জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য স্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্ববধানে জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলিতে এধরনের হস্তক্ষেপ করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে যোগাযোগের আইনি পর্যবেক্ষণ জাতীয় সুরক্ষা ও জনসুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
ভারতে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি রয়েছে যারমাধ্যমে জাতীয় সুরক্ষার লক্ষ্যে বৈদ্যুতিন যোগাযোগের আইনিভাবে বাধা দেওয়া যায়। পাবলিক জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে জনসাধরণের সুরক্ষা স্বার্থে কেন্দ্রের এজেন্সিগুলি ও রাজ্য এজাতীয় আইন প্রয়োগ করতে পারে। আইনি হস্তক্ষেপের জন্য ১৮৮৫ সালের টেলিগ্রাফ আইন রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি সংশোধন আইন ২০০০। কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুমোদনের পরেই পর্যবেক্ষ লক্ষ্য রাখা হয়। রাজ্য সরকারগুলিও ২০০৯ সালের আইটি আইন অনুযায়ী এজাতীয় ক্ষমতা পেয়ে থাকে। আর সেই কারণেই গোটা প্রক্রিয়াটি বৈধ করেও দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।
একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় ফোন থেকে তথ্য চুরির জন্য পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছিল। তালিকায় রয়েছে সাংবাদিক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, সমাজকর্মীরাও। ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত এই সফ্টওয়্যার বিক্রি সীমাবদ্ধ ছিল। এনএসও গ্রুপের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে সংস্থাটি এমন একটি সফ্টওয়্যার বানিয়েছে সেটি সরকারি সংস্থাকে সন্ত্রাসবাদ, অপরধার প্রতিহত করতে সাহায্য করবে।
পেগাসাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রতিপক্ষের ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ, কল, ভয়েস কল, মাইক্রোফোন, ক্যালেন্ডার ইভেন্টসবকিছুর অ্যাক্সেস পেতে পারে। তবে এনএসও এজাতীয় সফ্টওয়্য়ার তৈরি করে কোনও অন্যায় করছে এটা মানতে নারাজ। ইসরায়ের এজাতীয় সফ্টওয়্য়ার ব্যবাহর করে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করার ইতিহাস রয়েছে। পেগাসাস কেবলমাত্র পরীক্ষিত আর বৈধ সরকারি সংস্থাগুলিকেই বিক্রি করা হয় বলেও সংস্থার পক্ষ দাবি করা হয়েছে।