রাজ্যসভার তোলপাড়ের ঘটনা নিয়ে সরকার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সূত্রের খবর সেই রিপোর্টে গোটা ঘটনার জন্য বিরোধীদের দায়ি করা হয়েছে।
বুধবার ১১ অগাস্ট বিমা বিল পাশকে কেন্দ্র করে রাজ্যসভায় তোলপাড় নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে মোদী সরকার। সূত্রের খবর আর সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে সিপিআই(এম) সাংসদ এলমারন করিম এক পুরুষ মার্শালকে মারধর করেন। সেই মার্শালের গলাও টিপে ধরে ছিলেন। অন্যদিকে কংগ্রেস সাংসদ ফুলোদেবী নেতাম আর ছায়া বর্মা এক মহিলা মার্শালকে ধরে টানা হেঁচড়া করেছিলেন। বুধবার রাজ্যসভায় তোলপাড়ের ঘটনাকে কেন্দ্র সরকার বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল জাতীয় রাজধানী। শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু গোটা ঘটনায় সংসদের যে অবমাননা হয়েছে তা পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছে দুই পক্ষই।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে শাসক বিরোধী দুই পক্ষই দেখা করেছে। একাধিক অভিযোগ জানিয়ে রিপোর্টও দিয়েছে। সরকার আর বিরোধী দুই পক্ষই দাবি করেছে বুধবারের উচ্চকক্ষের হট্টোগল - রাজ্যসভার মর্যাদাকে কলঙ্কিত করেছে।
সূত্রের খবর সরকার যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে তৃণমূল কংগ্রেস সাসদদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আর সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর পথ আটকে দুজনকেই ধাক্কা দিয়েছেন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাউডুর চেম্বার থেকে বার হওয়ার সময় দুজনকে তৃণমূল সাংসদের বাধার সামনে পড়তে হয়েছিল।
বুধবারের ঘটনার সূত্রপাত বিমা বিল নিয়ে। বিম সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার পরেই বিরোধীরা প্রবল প্রতিবাদ জানান। তাঁদের দাবি ছিল সংশোধনী বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি সরকার। তারপরই বিরোধীরা প্রবল হৈচৈ শুরু করে দেন। তাঁরা ওয়েলে নেমে এসে প্রতিবাদ জানান। সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছে বিরোধী সদস্যরা টেবিলের ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। সেই সময় পার্লামেন্টের সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের চেয়ারের চারদিকে অবস্থান করছিল। প্রতিবাদী সাংসদদের রুখতে আনা হয়েছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মীও। কিন্তু বিরোধীদের নাকি আটকানো যায়নি। তারা কাগজপত্র ছিঁড়ে ফ্যালে। মার্শালদের বেষ্টনী ভেঙে ফেলতে উদ্যোগ নেয়। রাজ্যসভায় একটি টিভির স্ট্যান্ডেও উঠে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রিপুন বেরা।
সরকার পক্ষের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই গোলমালের সময় কংগ্রেস ও সিপিএম সাংসদরা দুই মার্শালকে অপমান করেছিলেন। এক মহিলা মার্শাল আঘাতও পেয়েছেন। আক্রান্ত মহিলা মার্শালের মেডিক্যাল রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে। পুরুষ মার্শাল অভিযোগ করেন তাঁর শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছে সেদিন সংসদের নিরাপত্তা কর্মীদেরও ডাকা হয়েছিল। বাইরে থেকে কাউকে ডাকা হয়নি। মার্শালরা সাংসদদের সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ করেনি বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। রিপোর্টে সিসিটিভি ফুটেজ আর স্ক্রিনগ্র্যাব জমা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ সরকারপক্ষ মার্শালদের ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠরোধ করেছ। বিরোধীদের আরও দাবি মার্শালদের আক্রমণে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিরোধী মহিলা সাংসদ। বহিরাগতদের সাংসদের আনা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। মল্লিকার্জুন খাড়গের অভিযোগ মহিলা সাংসদদের বিরুদ্ধে পুরুষ মার্শাল ব্যবহার করা হয়েছে। সংসদকে একটি দূর্গের সঙ্গেও তুলনা করে গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন তিনি। বিরোধীদের বুধবারকে সংসদের কালো দিন হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।