সাওয়ান সোমবার হওয়ায় সকাল থেকেই সামারহিলের শিব মন্দিরে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। প্রবল বৃষ্টির কারণে সকাল সোয়া ৭টার দিকে ধাক্কাধাক্কিতে গাছসহ ভারী ধ্বস মন্দিরের ওপর পড়ে।
সোমবার সকালে রাজধানী সিমলার সামারহিলে ভূমিধসের কারণে নিচের দিকে নির্মিত শিবমন্দির ও ধারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়। সোমবার আটটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার এনডিআরএফ দল আবার উদ্ধার অভিযান জোরদার করেছে। মঙ্গলবার সকালে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সামারহিলে এখনও অন্তত ২০ জনের দেহ মাটির তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাওন সোমবার থাকায় এই ভক্তরা শিব মন্দিরে এসেছিলেন। তবে এ ছাড়া পথ থেকে আসা কতজন ভূমিধসের কবলে পড়েছেন তা জানা যায়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর এ তথ্য জানিয়েছেন। সিমলার সামারহিলে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারে চলছে উদ্ধার অভিযান। এনডিআরএফের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে গতি এসেছে। একটি ড্রেন থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাওয়ান সোমবার হওয়ায় সকাল থেকেই সামারহিলের শিব মন্দিরে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। প্রবল বৃষ্টির কারণে সকাল সোয়া ৭টার দিকে ধাক্কাধাক্কিতে গাছসহ ভারী ধ্বস মন্দিরের ওপর পড়ে। এ কারণে ধ্বংসস্তূপে পুরোপুরি চাপা পড়ে মন্দিরটি। যারা মন্দিরে পৌঁছেছিল তারাও পালানোর সুযোগ পায়নি।
আশপাশের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে সবাই ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। প্রশাসনকেও জানানো হয়। প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড সহ SDRF টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি কয়েক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জওয়ানরা হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু করেন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী সুখু
সোমবার রাত পর্যন্ত একে একে আটটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু, উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী এবং একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কও ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ কাজের খতিয়ে দেখেন।
এদিকে, হিমাচল প্রদেশে প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে সিমলা, মান্ডি এবং অন্যান্য এলাকায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে এবং ভূমিধসের ফলে শত শত রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত কয়েক ডজন লোক মারা গেছে। বহু জায়গায় রেললাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কালকা-সিমলা রেললাইনের নীচে থেকে অনেক জায়গায় মাটি ভেসে গেছে, যার কারণে পুরো ট্র্যাকটি প্রায় খাদের ওপর ঝুলে রয়েছে। সোমবারও সোলান সহ অনেক এলাকায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সোমবার শিমলায় শিব মন্দির ধসে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।
সিমলায় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত তিনদিনের বৃষ্টির কারণে মান্ডি জেলায় ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। মান্ডির বালহ উপত্যকার অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং অনেক বাড়িঘর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং কয়েক ডজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় NDRF এবং SDRF টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
ধর্মপুর এলাকায় উদ্ধার অভিযানের সময় মারা যান সমাজকর্মী প্রভাস রানা। তিনি দুই পরিবারের সাতজনের জীবন বাঁচাতে সফল হলেও ভূমিধসের ঘটনায় তারা এই বাড়িতে আটকা পড়েছিলেন।মালওয়ানা গ্রামেও মেঘ ফেটে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সাকোর গ্রাম ও নিহরি গ্রামে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন।
গোটা হিমাচলের কয়েকশ রাস্তা ভেসে গেছে, যার কারণে মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় খাদ্য, দুধ ও পানীয় জলের সমস্যায় পড়েছেন মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যে জনগণের জন্য সম্ভাব্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা উচিত।