উদুপির পড়ুয়াদের তরফে এ দিন সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও কুন্দাপুরার পড়ুয়াদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী দেবদত্ত কামাথ। এদিন মামলাকারীদের যুক্তি শুনেছে হাইকোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি।
কলেজে হিজাব (Hijab) পরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শুরু হয় বিতর্ক। সেই ইস্যুই গড়িয়েছে আদালতে। আজ ছিল সেই মামলার তৃতীয় দিনের শুনানি। এই ইস্যুতে বেশ কিছু সাংবিধানিক প্রশ্ন রয়েছে বলে মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটক হাইকোর্টে (Karnataka High Court) প্রধান বিচারপতি ঋতু রাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণা এস দিক্ষীত ও বিচারপতি জেএম কাজির বেঞ্চে ছিল সেই মামলার শুনানি। সংবিধানে হিজাব পরার অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে কি না, হিজাব পরা কোনও জরুরি ধর্মীয় রীতি কি না, সে সব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে আদালতে। মামলার শুনানিচলাকালীন হাইকোর্ট বলে, হিজাব পরা মৌলিক অধিকার কিনা তা আমরা দেখব। উদুপির পড়ুয়াদের তরফে এ দিন সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও কুন্দাপুরার পড়ুয়াদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী দেবদত্ত কামাথ। এদিন মামলাকারীদের যুক্তি শুনেছে হাইকোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি।
স্কুলের পোশাকের নিয়ম লঙ্ঘন না করলে সেক্ষেত্রে শাস্তির কোনও উল্লেখ নেই
এই মামলা শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় নয়, এই মামলা মেয়েদের শিক্ষার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে। ইউনিফর্মের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য কোনও শাস্তির বিধান নেই। কর্ণাটক শিক্ষা আইনে যাই হোক না কেন যে শাস্তির বিধান করা হয়েছে, তা বেশিরভাগই ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়গুলির জন্য। (প্রধান বিচারপতি: আমরা আপনার বক্তব্য বুঝতে পেরেছি যে এই বিষয়ে কর্ণাটক শিক্ষা আইনে কোনও বিধান নেই।)
আরও পড়ুন- ধর্মীয় পোশাক কখনও স্কুলের ইউনিফর্মে বাধা হতে পারে না, ২০১৮ সালে-ই রায় আদালতের
আগে ইউনিফর্ম শুধুমাত্র স্কুলে ব্যবহার হত, কলেজে নয়
কর্ণাটক সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সঞ্জয় হেগড়ে। তিনি বলেন, "১৯৮৩ সালের কর্ণাটক শিক্ষা আইনে পোশাক বা ইউনিফর্ম নিয়ে বিশেষ করে কিছু উল্লেখ করা নেই।" এরপর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলি স্মরণ করে হেগড়ে বলেন, "আমি যখন কলেজে পড়তাম তখনও ইউনিফর্ম ছিল না। ইউনিফর্ম শুধুমাত্র স্কুলগুলিতে ব্যবহৃত হত। কলেজের জন্য ইউনিফর্ম অনেক পরে এসেছিল।"
পুত্তস্বামী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন
সঞ্জয় হেগড়ে গোপনীয়তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পুত্তস্বামী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন। এর সঙ্গে, তিনি কেরালা হাইকোর্টের রায়েরও উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, 'হিজাব একটি অপরিহার্য ধর্মীয় প্রতীক'।
নারীদের শিক্ষার প্রশ্ন
বৃহস্পতিবার আদালতে আইনজীবী হেগড়ে সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে প্রত্যেক ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, তিনি উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পর্দানসিন মহিলাদের কথাও বলা হয়েছে। তাঁর দাবি, এই মামলা শুধু ধর্মের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়, নারী শিক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "এটা একজন মহিলার ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়ের প্রশ্ন। আমাদের দেশে কোনও একটি মতকে মান্যতা দেওয়া হয় না। ভারত বিবিধ মতের দেশ।"
আরও পড়ুন- হিজাব ইস্যুতে শুনানি নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট
পিটিশন দায়ের করা মেয়েদের স্বস্তি দিক আদালত
এই মামলায় আদালতের উচিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া। যাতে ছাত্রীরা পিটিশন দায়ের করেছে তারা স্বস্তি পেতে পারে। পাশাপাশি এই সেমিস্টারে বাকি থাকা ৩টি মাস পড়ুয়ারা কলেজে যোগ দিতে পারে।
হিজাব নিয়ে বিতর্ক
বিতর্কের শুরু এক মাস খানেক আগে। উদুপির একটি কলেজে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর সেই জেলার পরপর চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ভাবে হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করে, হিজাব ছাড়া কলেজে আসতে হবে। সঠিক ইউনিফর্ম পরে তাদের কলেজে যেতে হবে। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। হিজাব বিতর্কের আঁচ গিয়ে পড়েছে রাজনীতিতেও। রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই এই ইস্যুতে আক্রমণ করেছে বিজেপিকে। কেউ রয়েছেন হিজাবের বিরুদ্ধে আবার কেউ হিজাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। একাধিক জায়গাতেই এই বিতর্কের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিষয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টে একটি পিটিশনও দায়ের করা হয়েছে, যার শুনানি ছিল আজ। তবে এই যুক্তি দেওয়ার পরও স্বস্তি মেলেনি মামলাকারী পড়ুয়াদের। কারণ হাইকোর্ট জানিয়েছে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনও শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য জোর করা উচিত নয়। তবে পরবর্তী শুনানি এখন ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে হবে।