স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে জোর মোদী সরকারের, বিভিন্ন প্রকল্পের হাত ধরে এগোচ্ছে জনস্বাস্থ্য

আদর্শ জাতি গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চার উপরে জোর দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ

নরেন্দ্র মোদী সরকারও দেশবাসীর স্বাস্থ্যসুরক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে

এক আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে

অন্য দিকে তেমনই এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ১৩৭ শতাংশ

amartya lahiri | Published : Apr 2, 2021 6:26 PM IST

শমিকা মাইতিঃ স্বাস্থ্যই সম্পদ। আদর্শ জাতি গড়ে তুলতে সবার আগে স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চার উপরে জোর দিতে বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রের বিজেপির সরকারও মনে করে, উন্নয়নের কাজে দেশবাসীর স্বাস্থ্যসুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। তাই দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনতে এক দিকে যেমন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে, অন্য দিকে তেমনই এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ১৩৭ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে যেখানে ৯৪,৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হযেছিল স্বাস্থ্যখাতে, ২০২১-২২-এ সেখানে ২,২৩,৮৪৬ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে কেবল টিকাকরণের কাজে ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সম্প্রতি একটা ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। আমরা স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনায় কতটা দায়বদ্ধ এ তারই প্রমাণ। কোভিড ১৯ আমাদের শিখিয়েছে ভবিষ্যতে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ এলে কী ভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে।’


প্রধানমন্ত্রীর মতে, ভারত যে ভাবে অতিমারীর মোকাবিলা করেছে তা দুনিয়া দেখেছে। ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপরে শ্রদ্ধা আর ভরসা অন্য মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে বিশ্ববাসীর কাছে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার যন্ত্রপাতি থেকে ওষুধপত্র, ভেন্টিলেটর থেকে ভ্যাকসিন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে পরিকাঠামো, ডাক্তার থেকে এপিডেমিওলজিস্ট- আমাদের প্রতিটা দিকে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে আগামী দিনে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা তার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে পারি।’ মোদী জানিয়েছেন, দেশবাসীর সুস্বাস্থ্য ও ভাল থাকার লক্ষ্যে চারটি ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।  প্রথমটা হল, রোগ প্রতিরোধ।দ্বিতীয় যেটার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, সেটা হল সস্তায় কার্যকরী চিকিৎসাব্যবস্থা যাতে দরিদ্রদের অসুবিধা না হয়। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্রগুলি এই দিকটার খেয়াল রাখছে। তৃতীয় যে দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেটি হল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর গুণগত ও পরিমাণগত মান উন্নয়ন। হেলথকেয়ার কর্মী, আধিকারিকদের মানোন্নয়নও এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ছে। চতুর্থটি হল, পরিকল্পনা করে অর্থাৎ মিশন বানিয়ে বিভিন্ন রোগসমস্যাগুলি প্রতিহত করা। মোদী জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত থেকে যক্ষারোগ সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।


প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি’তে ভারতের যে রোগগুলির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি তার একটা তালিকা বানাতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতি বছর ছয় কোটিরও বেশি মানুষ এই দেশে সর্বস্বান্ত হন। এই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটির ঘোষণা করে বিজেপি সরকার। এই প্রকল্পে  দু’টি খাতে কাজ শুরু হয়। প্রথমটি হল, দেশে দেড় লক্ষ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ে তোলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে বেছে সেগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করার কাজ চলছে ।

দ্বিতীয়টি হল, প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনায় দেশের ১০ কোটি পরিবারকে (অথবা ৫০ কোটি জনগণ) স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হলে প্রতি বছর চিকিৎসা খাতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাবে উপভোক্তারা। ভারতের তালিকাভুক্ত সমস্ত হাসপাতালে এই সুবিধা পাওয়া যাবে রাজ্য নির্বিশেষে। ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ২০টি রাজ্য এই প্রকল্পে যুক্ত হয় প্রাথমিক ভাবে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু নিজেদের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প থাকায় প্রথমে এই উদ্যোগে সামিল হয়নি। পরে অবশ্য তারা আয়ুষ্মান ভারতে যোগ দেয় এই শর্তে যে তাদের চালু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে হবে কেন্দ্রের প্রকল্পকে। কেরালাও একই শর্তে যোগ দেয়। পশ্চিমবঙ্গ আর তেলেঙ্গানাও এই শর্তে যোগ দিয়েছিল প্রথমে। পরে তারা বেরিয়ে আসে।

পশ্চিমবঙ্গে ২০২১-র বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, মমতা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য রাজ্যের মানুষকে বলির কাঠগড়ায় চড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে বিজেপি সবার আগে আয়ুষ্মান ভারত এই রাজ্যে চালু করবে।

 

 

Share this article
click me!