গণ্ডীবদ্ধ মনোভাব ছেড়ে ইসলাম ধর্মীয় মানুষদের কীভাবে জ্ঞানের আলোকে নিয়ে আসতে পারেন উলেমারা?

রাজনৈতিক দিক থেকে ধর্মীয় মেরুকরণ করা হলে আদতে মানুষেরই হার হয়। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, ধর্মতান্ত্রিক নয়। সেরা প্রার্থীর জয় হোক — এটাই গণতন্ত্রের দিকনির্দেশক নীতি হওয়া উচিত।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমস্ত ধর্মের মানুষদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের মানুষদের কৃতিত্বও অস্বীকার্য নয়। শিক্ষায়, খেলাধূলায় প্রসারে, মুসলমান মানুষদের ভূমিকাও হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, ইত্যাদি আরও বহু ধর্মের মানুষদের মতোই চিরস্মরণীয়। কিন্তু, বর্তমান যুগে, ইসলাম অধ্যুষিত দেশগুলিতে ঘটে চলা হিংসার ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ভারতে এর কুপ্রভাব রোধ করতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন মুসলমান পণ্ডিত বা ‘উলেমা’-রা।

ইসলামী ইতিহাস অনুসারে, উলেমা (মুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিতদের) ধারণাটি শুরু হয়েছিল হযরত ওমরের সময়, যিনি ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম খলিফা ছিলেন। তিনি পণ্ডিতদের একটি সংগঠনকে অর্থায়ন করার জন্য তাঁর দায়বদ্ধ দায়িত্ব উপলব্ধি করেছিলেন, যারা কেবল ইসলামের অধ্যয়নে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় ব্যয় করবে। তিনি সময়ে সময়ে তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। মুসলিম শাসকরা তাঁদের প্রভাবের ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণরূপে ইসলামী আইন ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পরিচালনা করতেন। কিন্তু, ভারত দেশটি বৈচিত্রে পরিপূর্ণ। উত্তর-আধুনিক বিশ্বে দেশগুলি শরিয়া আইন দ্বারা শাসিত নয়। জাতি -রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ দ্বারা শাসিত হয়।

Latest Videos

ভারতীয় উলেমাদের জন্য শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, মুসলিম শিক্ষার জন্য একটি উপযুক্ত পদ্ধতি খুঁজে বের করা, একটি বৃহৎ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে জ্ঞানের আলোয় নিয়ে আসা। তাঁদের বোঝাতে হবে, কোনও দেশের দুটি ভিন্ন প্রকারের আইন থাকতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে একটি একক দৃষ্টি থাকতে হবে। বিভ্রান্তি বাদ দিয়ে রাখতে হবে সংবিধিবদ্ধ ব্যবস্থার প্রতি অটুট আস্থা।

পড়াশোনাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় অধ্যয়নের মধ্যে বেঁধে রাখা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বৈজ্ঞানিক মেজাজ জাগ্রত করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। প্রশাসনের ব্যবস্থার প্রতি মানুষকে সচেতন এবং সংবেদনশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে, আস্থা রাখার কথা বলা উচিত। মানুষকে সকল ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং ধর্মের রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে উৎসাহিত করতে হবে। খিলাফতের কল্পনায় না থেকে চলতি সময়ের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

রাজনৈতিক দিক থেকে ধর্মীয় মেরুকরণ করা হলে আদতে মানুষেরই হার হয়। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, ধর্মতান্ত্রিক নয়। এখানে সেরা প্রার্থীর জয় হোক — এটাই গণতন্ত্রের দিকনির্দেশক নীতি হওয়া উচিত। সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। কোনও ব্যক্তি যদি সাহিত্যকর্মের ভুল ব্যাখ্যা করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে শুধরে দিতে হবে এবং জনসাধারণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে।

উলেমাদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নারীর অধিকার রক্ষা করা। তামিম আনসারী, একজন প্রখ্যাত ইসলামী ইতিহাস পণ্ডিত তার ডেসটিনি ডিসট্রাপ্টেড বইয়ে লিখেছেন যে হজরত ওমরের সময়ে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। পুরুষের পাশাপাশি কাজ করেছেন নারীরা। তাঁরা জনজীবনে অংশ নিয়েছিলেন, বক্তৃতা দিতেন, উপদেশ দিতেন, কবিতা রচনা করতেন, ত্রাণকর্মী হিসেবে যুদ্ধেও গিয়েছিলেন এবং কখনও কখনও লড়াইয়েও অংশ নিতেন। মদিনার বাজারের প্রধান হিসেবে মহিলাদের নিযুক্ত করা হয়েছিল, যা ছিল মহান নাগরিক দায়িত্বের একটি অবস্থান। মুসলিম মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে, যা তাঁদের কাজ পেতে এবং নিজেদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তাঁরা ভাইবোনের শিক্ষার ব্যয় , বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ও চালাতে পারবেন।

আরও পড়ুন-

Weather News: জেলায় জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির তাণ্ডব, আবহাওয়ায় বিশেষ সতর্কতা জারি
জঙ্গিদের মেয়েদের সুস্থভাবে বড় করছেন অধিক কদম, সন্ত্রাসবহুল কাশ্মীরে এক দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ!
‘মোদী সরকার মুসলমানদের ঘেন্না করে’, ইসলাম ধর্মীয়দের ‘মন কি বাত’ শোনার আর্জি জামে মসজিদের শাহী ইমামের

Share this article
click me!

Latest Videos

'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
Dev Adhikari : এবার কী আসছে খাদান ২? খাদান সাফল্য পেতেই বড়সড় ঘোষণা দেব-যীশুদের