জালিয়ানওয়ালাবাগ বিতর্কে এবার মুখ খুললেন রাহুল গান্ধী। আগেই ইরফান হাবিবের মত ঐতিহাসিকরা সমালোচনা করেছেন।
জালিয়ানওয়ালাবাগের সংস্কারের বিরোধিতায় এবার সরব হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে মঙ্গলবার তিনি সরাসরি নিশানা করেন বিজেপিকে। হিন্দি আর ইংরাজি-- দুটি ভাষাতেই পরপর টুইট করেন তিনি। সেই টুইটে নিজেকে শহীদ পুত্র বলার পাশাপাশি সরাসরি আবারও বিজেপির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে দল অংশ নেয়নি তারা বুঝতে পারবে না তারা ঠিক কী করেছে। হিন্দি টুইটে রাহুল গান্ধী বলেছেন, একজন শহিদপুত্র হিসেবে তিনি কোনও দিনও এই অপমান সহ্য করবেন না।তিনি বলেছেন জালিয়ানওয়ালাবাগের শহিদদের পরিবারের যে অপমান করতে পারে তাদের তিনি মানবেন না। তাদের অভদ্র ও ক্রুরতার বিরোধিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগের সংস্কার করেছে। নতুনভাবে সাজানো হয়েছে গোটা চত্ত্বরটিকে। ১০২ বছর আগে ব্রিটিশ সেনাপতি জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্ব শান্তিপূর্ণভাবে আবস্থান বিক্ষোভে অংশনেওয়া কয়েক হাজার নারী ও পুরুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিলের এই ঘটনার প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেছিলেন এই ঘটনার পরিপ্রেতক্ষিতে। শতাব্দী প্রাচীন এই স্মারক কেন্দ্রের সংস্কার আগেও একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবারও বেশ কিছু স্থান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। যেমন জালিয়ানওয়ালাবাগে ঢোকার সরু গলি আর ইঁটের দেওয়াল। যেটা এই এলাকায় ঢোকার একমাত্র পথ ছিল। বর্তমানে সেই ইঁটের দেওয়াল গায়েব। সেই জায়গায় বসানো হয়েছে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীদের তৈরি করা মূর্ত। বদলে ফেলা হয়েছে সেই কুঁয়ো। যেখানে প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিয়ে মৃত্যুর মুখে তলিয়ে গিয়েছিল বহু মানুষ। সেই কুঁয়ো বর্তমানে কাচের দেওয়াল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যা মেনে নিতে পারেননি দেশের ও বিদেশের ইতিহাসবিদরাও। দামি আর ঝকঝকে রঙচনে আলো দিয়েও সাজানো হয়েছে। লাইট সাউন্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভিডিও গেমে আশক্তি কাটাতে কঠোর উদ্যোগ, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সময় বাঁধল সরকার
নাবালককে অবৈধভাবে বিয়ে করে যৌন হেনস্থা, গ্রেফতার ১৯ বছরের তরুণী
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ কিম ওয়াগনার বলেছেন স্মৃতিস্তম্ভগুলির কর্পোরেটাইজেশন হয়েছে। যেখানে ঐতিহ্যের মূল্য শেষ হয়ে গিয়েছি। শুরু হয়েছে আধুনিক স্তম্ভ। এজাতীয় স্মারকস্তম্ভগুলিতে হস্তক্ষেপ না করে যন্তের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেছেন এজাতীয় কাজে এই ঘটনার শেষ চিহ্নুগুলিও মুছে ফেলা হয়েছে।
অন্যদিকে জালিয়ানওয়ালাবাগ নিয়ে রীতিমত সরব কংগ্রেস। দেশ স্বাধীনতার আগেই এই এলাকা কিনে নিয়ে স্মারক তৈরি করেছিল শতাব্দী প্রাচীন দলটি। কিন্তু কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরই আইন করে জালিয়ানওয়ালাবাগের ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেসের নাম কাটা হয়। বর্তমানে ট্রাস্টের প্রধান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসের তরফ থেকে গৌরব গগৈ, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও মুখ খুলেছেন। গৌরব গগৈ সরাসরি বলেছেন, স্মারক মাঠে ডিস্কো আলো তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এতে শহীদ পরিবারগুলিকে অপমান করা হয়েছে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী বলেছেন আলোকসজ্জা খুবই ভালো, কিন্তু স্মারকমাঠে এই আলোকসজ্জা ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিব বন্ধ ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ। সিপিএস নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন যারা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল তারা আত্মবলিদানের মানে জানে না বলে শুধু এজাতীয় কলঙ্ক করতে পারেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তারপর থেকেই ঐতিহাসিক এই স্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।