গত ১৫ জুন গালওয়ান ভ্যালিতে চিন ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষর পর উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দুই দেশই কূটনৈতিক বৈঠকে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী বলে জানালেও বাস্তবের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সেনা সরানো হবে বললেও লাল ফৌজ এখনও রয়ে গিয়েছে গালওয়ানে। এই অবস্থায় অনেকই যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। তারমধ্যে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশ চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
একদিকে জম্মু কাশ্মীর প্রশাসন দুই মাসের জন্য এলপিজি সিলেন্ডারের স্টক বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও সেনার জন্য স্কুলগুলো খালি করার আদেশ জারি করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজনার মধ্যেজম্মু কাশ্মীর প্রশাসন এই দুটি আদেশ জারি করেছে। এর কারণে উপত্যকার বাসিন্দাদের চিন্তা আরও বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ফের উপত্যকায় বড়সড় সাফল্য বাহিনীর, সাতসকালে অনন্তনাগে এনকাউন্টারে খতম ৩ জঙ্গি
একটি আদেশে কাশ্মীরের মানুষদের মানুষদের কমপক্ষে দুই মাসের গ্যাস সিলেন্ডার মজুত করার কথা বলা হয়েছে। অন্য আরেকটি আদেশে জম্মু কাশ্মীরের গান্দরবল জেলায় সেনার জন্য স্কুল বিল্ডিং গুলোকে খালি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরে গান্দরবল জেলা লাদাখ আর কার্গিলের খুব কাছে।
বিষয়টি নিয়ে জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ইতিমধ্যে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, সরকারের এই আদেশ কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
এদিকে নতুন দুটি নির্দেশ জারির পর উপত্যকাবাসী এবার ভারত-চিন সংঘাতের মাঝে পড়ে নতুন দুর্ভোগের আতঙ্কে রয়েছেন। সরকারের তরফে ভিন্ন কারণ জানানো হলেও, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই কাশ্মীরবাসী বড় ধরনের সংঘাতের প্রমাদ গুনছেন।
গত ২৩ জুন এসব নির্দেশ জারি করেন কাশ্মীরের উপরাজ্যপালের একজন সচিব । জরুরি ভিত্তিতে এসব আদেশ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভূমিধসের কারণে জাতীয় সড়কে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায়- কাশ্মীর উপত্যকায় যেন এলপিজি গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে তা নিশ্চিত করতেই এই আদেশ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে খাদ্য, বেসামরিক সরবরাহ এবং ভোক্তা অধিকার দফতরের আধিকারিকের জারি করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে, জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোকে দুই মাসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ এলপিজি গ্যাস তাদের গুদাম এবং সিলিন্ডার ভর্তি করার কারখানায় মজুত রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রথম গ্রীষ্মের মাঝামাঝি স্থানীয় প্রশাসন এলপিজি গ্যাস মজুত বৃদ্ধির নির্দেশ দিল। সাধারণত, অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে তীব্র শীতকালে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার নজির রয়েছে। তুষারপাতের কারণে জাতীয়সড়কে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই ওই ঋতুতে মজুতের পরিমাণ বাড়ানো হয়।
আরেকটি নির্দেশনা জারি করা হয় গান্ডারবাল পুলিশ সুপারের দফতর থেকে। এর আওতায় ওই জেলার ১৬টি স্কুল-কলেজ খালি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের অমরনাথ তীর্থযাত্রাকে সামনে রেখে এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আধা-সামরিক বাহিনীর কোম্পানিগুলোর জন্য এসব স্কুলবাড়ি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান হয়েছে আদেশনামাটিতে।
পাকিস্তানের বালাকোটে গত বছর ভারতের বিমান হামলা, এরপর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরও- এই ধরনের জরুরি নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সম্প্রতি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। তাই কাশ্মীরিদের যুদ্ধ আশঙ্কা একেবারেরই অমূলক নয়।