সম্প্রীতির ছবি উপত্যতায়- পাক অধিকৃত কাশ্মীরের টিটওয়াল গ্রামে শারদার মন্দির উদ্বোধনে মুসলিম সরপঞ্চ

আবদুল রসিদ খোকার বলেন, মন্দিরটির উদ্বোধনের দিন যেমন গ্রামের সমস্ত হিন্দু ও শিখরা উপস্থিত হয়েছিল , তেমনই বছরব্যাপী নির্মাণের সময়ও দুই সম্প্রদায়ের মানুষ নির্মাণ কাজ খতিয়ে দেখেছেন।

 

আবারও সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়ল কাশ্মীর উপত্যকায়। আবদুল রসিদ খোকার , যিনি উত্তর কাশ্মীরের টিটওয়াল গ্রামের নির্বাচিত প্রধান ( স্থানীয়দের কথায় সরপঞ্চ) তিনি বলেছেন, ২২ মার্চ দিনটি তাঁর কাছে বিশেষ। কারণ এই দিন তাঁর হারিয়ে যাওয়া ডান হাত আবার নতুন করে জুড়ে গেছে তাঁর শরীরের সঙ্গে। আপনাদের মনে হতেই পারে কেন এমনটা বললেন গ্রামের প্রধান। তাহলে শুনুন আসল কথা, আওয়াজ দ্যা ভয়েসের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই দিনে তিনি উত্তর কাশ্মীরের একটি শারদা মন্দিরের উদ্বোধন করেন। তাঁকে উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন স্থানীয় হিন্দু , বিশেষত কাশ্মীরি পণ্ডিতরা।

৭৪ বছর বসয়ী সরপঞ্চ জানিয়েছেন এই মন্দিরের উদ্বোধন তাঁর কাছে বিশেষ সম্মানের। কারণ গত এক যুগ ধরেই তিনি বাস করছেন হিন্দু, মুসলিম ও শিখ প্রতিবেশীদের সঙ্গে। তিনি আরও জানিয়েছেন তিনি টিটওয়ালের নির্বাচিকত প্রধান। উত্তর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ৬ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে পাঁচটি গ্রাম। সেই গ্রামগুলিতে পাহাড়ি ও গুজ্জর উপজাতি সম্প্রদায়ের মুসলিমদের বাস।

Latest Videos

আবদুল রসিদ খোকার বলেন, মন্দিরটির উদ্বোধনের দিন যেমন গ্রামের সমস্ত হিন্দু ও শিখরা উপস্থিত হয়েছিল , তেমনই বছরব্যাপী নির্মাণের সময়ও দুই সম্প্রদায়ের মানুষ নির্মাণ কাজ খতিয়ে দেখেছেন। এটি ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা। তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে বলেছিলেন এই এলাকায় প্রচুর অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। তিনি আরও জানিয়েছেন'আমি উদ্বোধনের দিনে আমাদের গ্রামে তীর্থযাত্রী এবং কর্মকর্তাদের স্বাগত জানিয়ে ছয় মিটার চওড়া ব্যানার প্রদর্শন করেছি। আমি এবং অন্যান্য গ্রামবাসীরা ড্রামের তালে নাচতাম এবং আমরাও অনুষ্ঠানটি উদযাপন করতে আতশবাজি ফাটিয়েছিলাম'।

আবদুল রশিদ খোকার বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদাররা রাজ্যে আক্রমণ করার আগে টিটওয়াল জম্মু ও কাশ্মীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল। এটি ছিল সদরদফতর। এই এলাকার একটি অংশ বর্তমানে পাকিস্তানের সেনার দখলে। যা বর্তমানে পাক- অধিকৃত কাশ্মীর নামে পরিচিত। গ্রামটি নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিন গুণতে গুণতে অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রামের এক দিকে পাকিস্তান- অন্যদিকে ভারত। এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মাঝে মাঝেই গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হয় গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও তিন বছর আগেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাশ্মীরের প্রধান দেবতাকে উৎসর্গ করা একটি প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্স শারদাপীঠের বার্ষিক তীর্থযাত্রার বেসক্যাম্প ছিল টিটওয়ালে।

পিওকে-র শাদেই গ্রামে অবস্থিত অষ্টম শতাব্দী মন্দিরের প্রতিরূপ আজও রয়েছে। সেখানে তীর্থযাত্রীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। মন্দিরের পাশের গুরুদ্বার ও মসজিদ ছি, ল যেখানে তীর্থযাত্রীরা আশ্রয় নিতেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সেনা বাহিনীর আক্রমণে গুরুদ্বার ও মসজিদ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রশিদ আরও বলেছেন, বর্তমানে গুরুদ্বারের পুনর্গঠন প্রায় শেষের দিকে। LOC বা লাইন অব কন্ট্রোলে মন্দির-মসজিদ - গুরুদ্বারা তৈরির কাজ চলছে। তবে মন্দির নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে জমি দখল করা হয়েছে। সরপঞ্চ বলেন, ২০১৩ সালের শারদেই সফরকে ঐতিহাসিক ও তার ঐতিহ্যের সঙ্গে তার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আবদুল আরও বলেছেন, তিনি তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মুজাফরাবাদ ও ইসলামাবাদে বাস করছেন ২০১৩ সাল থেকে। টিটওয়াল সেক্টরের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে সীমান্ত পার করেছিলেন। অন্যদিকে, তিনি চিন নির্মিত রাস্তা দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভাইপের মোটরসাইকেল ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। তিনি ছিলেন শারদেইতে।

শারদা মন্দির উদ্বোধনের দিনে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন টিটওয়াল গ্রামের বাসিন্দারা। সরপঞ্চ বলেছিলেন, একটি বন, কিষেণগঙ্গা, মধুমতী নদী ঘেরে একটি সুন্দর গ্রামেই শারদার মন্দির তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়রা হিন্দু-মুসলিম সকলেই শারদা মাতার ওপর আস্থাশীল। পঞ্জাবের কার্তারপুর করিডোরের মত স্থানীয়রাও একটি তীর্থযাত্রার রুট তৈরির আশা করছেন। সরপঞ্চ শারদা প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে অবস্থিত স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেছেন এটি একটা সময় বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে তহলিসের সদর দফতর-সহ একাধিক কার্যলায়ের সঙ্গে এলাকার ভাগ করেই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করে রয়েছে। এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বেশ কয়েকটি নির্মাণ কাঠামো হয়েছে। তিনি বলেছেন মন্দিরটি পাকিস্তানের সেনা বাহিনীও দেখাশোনা করে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন আগে যে মন্দিরটি ছিল সেটি কাবালি বা কাশ্মীর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান সেনা বাহিনী যে উপজাতিদের নিয়োগ করেছিল তারা লুঠ করেছে। কিন্তু প্রতিমা নিয়ে যেতে পারেনি। দেবীর মূর্তিটি কিষাণগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। গ্রামের অনেক পরিবারই মন্দির থেকে মূর্তি খুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখা দিয়েছিল। যদিও সরপঞ্চ জানিয়েছেন, স্থানীয়রা বলেছেন তাঁরা মূর্তিগুলি ফিরিয়ে দেবেন। যদি মন্দিরটি তীর্থযাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যদিও আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন হিন্দুতীর্থযাত্রীরা শারদাপীঠ যেতে পারেন। তিনি আরও বলেছেন পাকিস্তান থেকে ফিরে তিনি শারদাপীঠ তীর্থযাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রকের কাছে।

আলপাইন বনে ঘেরা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার ডানদিকে অবস্থিত টিটওয়ালকে কাশ্মীরের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অতীতে, এটি প্রায়শই ভারতীয় ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

তিনি একটি ১০০০-কানাল তৃণভূমিও দেখেছিলেন যা ঘোড়াগুলির জন্য ব্যবহৃত হত যা ধনী তীর্থযাত্রীদের টিটওয়াল থেকে শারদেই পর্যন্ত নিয়ে যায়। "এটি ঘাসচরাই জমি হিসাবে মনোনীত।" তিনি শারদাপীঠে তীর্থযাত্রার সময় তাঁর থাকার জন্য নেপালের মহারাজা কর্তৃক নির্মিত একটি ভবনও দেখেছিলেন।

“আমি আরও জেনেছি যে শারদা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার সময়ের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে একটি বড় গ্রন্থাগার ছিল এবং এর পাণ্ডুলিপিগুলি এখনও একটি ফার্সি (ফার্সি) বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায় ।

মন্দির নির্মাণ এলাকার পরিবর্তনঃ

রশিদ খোকার, বলেছেন, তাঁর তিন ছেসে ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে তিনি বাস করেন। তিনি বলেছেন, যে ভবিষ্যতে তীর্থযাত্রীদের প্রত্যাশিত আগমণের কারণে তিনি চাকরি তৈরির অনেক সম্ভাবনা দেখেছেন। তিনি বলেন, এটি শান্তির একটি চিহ্ন। তাঁর পরবর্তী প্রজন্মে এই এলাকায় শান্তির সঙ্গে বসবাস করতে পারে, শান্তির মধ্যেই বেড়ে উঠতে পারবে। তিনি বলেছেন'আমাদের সন্তানদের স্বার্থে কাশ্মীরের গ্রামগুলিকে পাকিস্তান থেকে লুকিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে রূপান্তর করার জন্য পাকিস্তানকে মহিমান্বিত করে এবং তরুণদের মনকে প্রভাবিত করে এমন উপাদানগুলিকে দূরে রাখার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা শান্তি নষ্ট করতে চাই না এবং আগামী প্রজন্মের জন্য গ্রামটি শান্তিপূর্ণ থাকতে চাই'।

পাকিস্তানের গুলিতে তিনি তার ভাগ্নে-কাম জামাইকে হারিয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি সর্বদা দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রবাহ কামনা করেন।

যদিও আজকাল গ্রামে তীর্থযাত্রীদের খুব বেশি আশাযাওয়া নেই, তবে তিনি বলেছেন ইতিমধ্যে ৩০টি বাড়ি অতিরিক্ত জায়গা তৈরি করেছে এবং অতিথি হিসাবে ৪০০০ তীর্থযাত্রীকে জায়গা করে দিতে পারে। টিটওয়ালকে তীর্থস্থানে পরিণত করার জন্য অনেক কিছু করা বাকি আছে, তিনি বলেছেন।

তিনি সরকারকে শ্রীনগর থেকে তেতওয়াল পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করতে বলেছেন। “বর্তমানে ব্যক্তিগত ভাবে টাটা-সুমোতে শ্রীনগর থেকে টিটওয়াল যাত্রার জন্য যাত্রী প্রতি ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। বাস পরিষেবার জন্য প্রায় ২৫০ টাকা খরচ হবে এবং সাধারণ মানুষকে গ্রামে যেতে উত্সাহিত করবে।” এলাকার উন্নয়নের জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। মোবাইল সংযোগের জন্য টাওয়ার বসানো হয়েছে।

টিটওয়াল পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বেশিরভারই কৃষিজীবী। অমিত শাহ গ্রামবাসীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করার পরে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিটওয়ালে মন্দির খোলার কথা উল্লেখ করার পরে, খোকার গ্রামের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তা তালিকাভুক্ত করে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ স্নহার কাছে দাবিগুলির একটি তালিকা পাঠিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছেন পঞ্চায়েত জন্য ২৩ লক্ষ টাকার বাজেট ধরা হয়েছে। যা উন্নয়নের জন্যই খরচ করা হবে।

আরও পড়ুনঃ

কাল থেকে কলকাতায় মমতার কেন্দ্র বিরোধী ধর্না , দিল্লিতে প্রতিবাদ আন্দোলন তৃণমূল সাংসদদের

'আইনি জট কাটিয়ে দ্রুত সংসদে ফিরবেন রাহুল গান্ধী', আশাবাদী কংগ্রেস নেতা

বিজেপি একমাত্র প্যান-ইন্ডিয়া রাজনৈতিক দল, বাকিগুলি পরিবারতন্ত্র পরিচালিত- বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

 

Share this article
click me!

Latest Videos

'জয় শ্রীরাম' ধ্বনিতে মুখরিত বাংলাদেশ! হিন্দু নেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উত্তাল Bangladesh
দেখা যাক ২৬-এর মসনদ কার দখলে যায়? Mamata-কে চ্যালেঞ্জ Agnimitra-র
'Firhad Hakim ও Kalyan Banerjee কে ফের একবার তীব্র আক্রমণ Humayun Kabir-এর, দেখুন কী বললেন
'বাংলাদেশের তালিবান ইউনূস হুঁশিয়ার' চরম হুমকি শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari on Bangladesh
চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে বিধানসভায় বিক্ষোভ Suvendu-র! | Suvendu Adhikari