পুলিশের গুলি ফুঁড়ে দিল কাশ্মীরি মহিলার দেহ, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর প্রথমবার

ফের কাশ্মীরে গুলিবিদ্ধ এক নাগরিক

৩৭০ ধারা বাতিলের পর এই প্রথম

এক জঙ্গির দেহ উদ্ধার নিয়ে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ বাধে

কাশ্মীরি রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয় করাতেই বিপদ বাড়ছে বলে অভিযোগ

amartya lahiri | Published : Apr 29, 2020 3:22 PM IST / Updated: Apr 29 2020, 08:57 PM IST

নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত এক জিহাদির লাশ উদ্ধার করা নিয়ে বুধবার অনেকদিন পর ফের জনতা বনাম পুলিশ তীব্র সংঘর্ষ হল কাশ্মীর উপত্যকায়। হিংস্র জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালালো পুলিশ। আর তাতেই গত বছর অগাস্ট মাসে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে পুলিশের সরাসরি গুলিতে আহত হলেন এক অসামরিক মহিলা। স্থানীয় বাসিন্দা শাহনাওয়াজা কোকা, দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সরকারি সূত্র।  

এই মাসের শুরুতেই, জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনির সঙ্গে যুদ্ধে নিহত সন্ত্রাসবাদীদের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পরিবর্তে, সরকারের পক্ষ থেকেই সেই দেহ সৎকার করার নীতি নেওয়া হয়েছে। জিহাদির দেহকে কেন্দ্র করে জিহাদিপন্থীরা যাতে সমাবেশ করতে না পারে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এদিন দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় মেলহোড়া গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনির গুলিতে নিহত হয় কাশ্মীরে আল কায়দার আঞ্চলিক সহযোগী গোষ্ঠী আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ-এর এক কমান্ডার বুরহান মাজিদ কোকা। সে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। তার মরদেহ সরিয়ে নিয়ে যেতে গেলেই নিরাপত্তা বাহিনিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে গ্রামবাসীরা।

সেই সময়ই, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ও পেলেট ছোড়ে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহনাওয়াজা কোকা ছাড়াও মহম্মদ আসিফ নামে আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দার দেহের উপরাংশ, শটগান থেকে ছোড়া পেলেটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছে।
 
পুলিশের দাবি, দক্ষিণ কাশ্মীরেরই একটি কবরস্থানে পুরো ধর্মীয় আচার মেনেই আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ কমান্ডার বুরহান মাজিদ কোকা-কে সমাধিস্থ করা হয়েছে। মেলহোরা গ্রামে মরদেহ ছাড়াই প্রায় ১,৫০০ লোক উপস্থিত হয়ে আলাদাভাবে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। সেখান থেকেই এদিন দক্ষিণ কাশ্মীরে অনেক জায়গাতেই হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। শোপিয়ানের কাছে নায়না বাটপোরায় একটি রেল ক্রসিংয়ের কাছেও উন্মত্ত জনতা অনেকগুলি গাড়ি-বাস ভাঙচুর করেছে।

গত অক্টোবরে আবদুল হামিদ লোন-এর মৃত্যুর পর আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের প্রধান পদে উন্নিত হয়েছিল এই কোকা। তারা দুজনেই আনসার প্রতিষ্ঠাতা জাকির ভাট বা জাকির মুসার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করত ২৩ বছরের কোকা। ২০১৮ সালের মে মাসে মুসার মৃত্যুর পর কোকা কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছিল। কোকার বাবা আবদুল মজিদ-ও একসময় হিজাব-উল-মুজাহিদিন গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, পরে  পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কোকা ২০১৮ সালে কয়েকমাসের জন্য পাকিস্তানে হিজাব-উল-মুজাহিদিন-এর শিবিরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

গত বছর কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে অসীম শান্তি বিরাজ করছে বলে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় চলাচল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ছিল। তা একটু শিথিল হতে না হতেই জিহাদিপন্থি আন্দোলন মাথাচাড়া দিচ্ছে কাশ্মীরে। গত সপ্তাহেই কুলগাম জেলায় পুলিশের ছোড়া পেলেটে আহত হন তিন স্থানীয় বাসিন্দা। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীনগরেও তিনজন পেলেটের আঘাত পেয়েছিলেন।

কাশ্মীরের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, এর অন্যতম কারণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা। এর ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভবিক্ষোভ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জিহাদিপন্থীরাই।

Share this article
click me!