১৭বার বিবর্তিত হয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকা, জানুন সেই অজানা ইতিহাস

দেশের গর্ব দেশের জাতীয় পতাকা। ভারতের তেরঙ্গা বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে।

Parna Sengupta | Published : Aug 9, 2021 8:28 AM IST

দেশের গর্ব দেশের জাতীয় পতাকা। ভারতের (India) তেরঙ্গা (TriColor) বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু জানেন কি, আজ যে পতাকার (National Flag) সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নত করি  আমরা, সেই পতাকা তৈরির পিছনে রয়েছে অজানা ইতিহাস (History Of National Flag)। আজকের আমাদের চেনা তেরঙ্গা এই চেহারার ছিল না। ১৮৮৩ সাল থেকে ১৭ বার বিবর্তিত হয়ে আজ এই রূপে বিশ্বের সামনে এসেছে ভারতের জাতীয় পতাকা। 

জাতীয় পতাকা সেই দেশের সমাজের প্রতীক, মর্যাদা, আদর্শের প্রতীক বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি করে জাতীয় পতাকা আছে। মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় পতাকা সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। ভারতের জাতীয় পতাকা বলতে আমরা তিরঙ্গা পতাকাই জানি। 

ভারতের জাতীয় পতাকাটি আয়তক্ষেত্রাকার। এর প্রস্থ দেড় গুণ। পতাকায় তিনটি রং থাকে, তিনটি রঙের জায়গা সমান। তাই একে তিরঙা বলে।গেরুয়া, সাদা, সবুজ পতাকার মাঝে নীল অশোক চক্র – এটাই স্বাধীন ভারতের ধ্বজা।  গেরুয়া রং -ত্যাগ, শৌর্য ও সেবার প্রতীক। সাদা রং-শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক। গাঢ় সবুজ রং -জীবন ধর্ম, নির্ভীকতা ও কর্মশক্তির প্রতীক। অশোক চক্রের অর্থ- উন্নতি ও গতিশীলতা। চক্রটিতে ২৪টি স্পোক বা কাটা আছে। ২৪ টি কাটা ২৪ টি অর্থ বহন করে। ভালবাসা, সাহস, শান্তি, মহানুভবতা, উদারতা, বিশ্বাস, আন্তরিকতা, করুণা, কমনীয়তার মতো অর্থ বহন করে এই স্পোকগুলি। 

১৯০৬ সালের জাতীয় পতাকা

বলা হয়, ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা ১৯০৬ সালের ৭ই অগাষ্ট কলকাতার পার্সি বাগান স্কোয়ারে (গ্রিন পার্ক) উত্তোলিত হয়েছিল। পতাকাটি লাল, হলুদ এবং সবুজের তিনটি অনুভূমিক রেখা দ্বারা গঠিত ছিল।

১৯০৭ সালের জাতীয় পতাকা

এই পতাকা ছিল বার্লিন কমিটির পতাকা, প্রথম ভিকাজি কামা ১৯০৭ সালে উত্থাপন করেছিলেন। ১৯০৭ সালের প্যারিসে দ্বিতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মাদাম কামা এবং তার নির্বাসিত বিপ্লবীদের দল। এটির সঙ্গে প্রথম পতাকার খুব মিল ছিল, তবে উপরের অংশে কেবল একটি পদ্মই ছিল। আর ছিল সাতটি নক্ষত্র ছিল, যা সপ্তর্ষিমন্ডলের প্রতীক। বার্লিনে একটি সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে এই পতাকাটি প্রদর্শিত হয়েছিল।

১৯১৭ সালের জাতীয় পতাকা 

১৯১৭ সালে হোমরুল আন্দোলনের সময় ব্যবহৃত পতাকা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। অ্যানি বেসান্ত ও লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক হোমরুল আন্দোলনের সময় এই পতাকা উত্তোজন করেন। পতাকাটিতে পাঁচটি লাল এবং চারটি সবুজ অনুভূমিক রেখা পর্যায়ক্রমে সাজানো ছিল, সপ্তর্ষি মন্ডলের সাতটি তারা তাদের উপর আঁকা ছিল। বাম দিকের উপরের কোণে ইউনিয়ন জ্যাক ছিল। একটি কোণে একটি সাদা অর্ধচন্দ্র এবং তারা ছিল।

১৯২১ সালের জাতীয় পতাকা

সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন চলাকালীন ১৯২১ সালে বেজওয়াড়ায় (বর্তমানে বিজয়ওয়াড়ায়) এক অন্ধ্র যুবক একটি পতাকা প্রস্তুত করে গান্ধীজীর কাছে নিয়ে যান। এটি দুটি রঙের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল। লাল এবং সবুজ-দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলমান। গান্ধীজি ভারতের অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একটি সাদা স্ট্রিপ এবং জাতির অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে চরকা যোগ করার পরামর্শ দেন।

১৯৩১ সালের জাতীয় পতাকা 

পতাকাটি ১৯৩১ সালে গৃহীত হয়েছিল। এই পতাকাটি ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধের প্রতীকও ছিল। ১৯৩১ সালটি পতাকার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় বছর। আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে তেরঙা পতাকা গ্রহণ করে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। এই পতাকায় গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ ছিল। তারই সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর চরকা ছিল এর কেন্দ্রে। 

১৯৪৭ সালের জাতীয় পতাকা

১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই, গণপরিষদ এটিকে মুক্ত ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করে। স্বাধীনতা আসার পরে, রঙ এবং তাদের তাত্পর্য একই ছিল। সম্রাট অশোকের ধর্মচক্রকে পতাকার প্রতীক হিসেবে চরকের জায়গায় গৃহীত করা হয়। এভাবে, কংগ্রেস পার্টির তেরঙা পতাকা শেষ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতের তেরঙা পতাকায় পরিণত হয়।

Share this article
click me!