শামীম বলেছেন অম্বেদকর হিন্দু ও মুলসিম দলিতদের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন। কিন্তু তাঁর পরাজয়ই পাসমান্দাদের সমস্যার কারণ তৈরি করে।
আওয়াজ দ্যা ভয়েজের প্রতিবেদন অনুযায়ী আল ইন্ডিয়া পাসপান্দা মুলসিম মহাজের উত্তর প্রদেশ ইউনিটের সভারতি শামীম আনসারি বলেথছেন জওহর লাল নেহেরু সরকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তৎকালীন শিক্ষামত্রা মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নির্দেশ অনুসারে। আওয়াজ দ্যা ভয়েসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামীম আনসারি বলেছেন , পাঁচজন মুসলিম সদস্য - মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হুসেন ভাই লালজি, তাজাম্মুল হুসেন, বেগম আইজাজ রসুল এবং মাওলানা হিফজুর রহমান দলিত মুসলমানদের তফসিলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। গণপরিষদের সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণের উপ-কমিটিতে বিতর্কের সময় সংরক্ষণ করা হবে। এর চেয়ারম্যান সর্দার বল্লভাই প্যাটেল এবং ডঃ বি আর আম্বেদকর দলিত মুসলমানদের পক্ষে ছিলেন। (আশরাফ) মুসলিম সদস্যরা তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
পাঁচ নেতা দাবি করেছিলেন যে মুসলমানরা অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মতো নয় এবং তাদের মধ্যে কোনও দলিত নেই। তারা প্যাটেল এবং আম্বেদকরকে বলেছিল যে ইসলামের অনুসারীদের কোন জাত নেই এবং কারও প্রতি বৈষম্য করা হয় না তাই সংরক্ষণের জন্য তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন নেই, শামীম আনসারি বলেছেন, তাঁর দাবি ইতিহাসের উপর তার গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
শামীম বলেছেন অম্বেদকর হিন্দু ও মুলসিম দলিতদের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন। দলিত মুসলমানদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এটি খুব কম সময়ের জন্য ছিল- ১০ অগাস্ট ১৯৫০ এর মৌলানা আজাদ নেহেরুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে দলিত মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ তুলে নিতে বলেন। এটি পাসমান্দার জন্য সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেয়। শামীম বলেছেন, তিনি পাসমান্দা সম্প্রদায়ের ওপর গবেষণা করার জন্য ২০০০ সালে শীতকালে সংখ্যালঘু সুরক্ষ উপ-কমিটির একমাত্র জীবিত সদস্য বেগম আইজাজ রসুলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। উত্তর প্রদেশের লখনৌ বিধানসভার কাছে একটি প্রাসাদপম বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মহিলা ৬ ফুটের ওপর লম্বা ছিলেন। আরব টাইপের গাউন পরতেন।
শামীম আও বলেছেন, সেই সময় রসুলের বয়স ৮৫ বছর ছিল। তাঁর স্বাস্থ্য ভাল ছিল না। একাই থাকতেন তিনি। আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিলেন। “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তার মনে কি ছিল যখন সে এবং অন্যরা পাসমান্ডাকে সংরক্ষণের সুবিধা অস্বীকার করতে চেয়েছিল। তার উত্তর আমাকে বাকরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং আমি কথোপকথনটি শেষ করেছিলাম। বেগম জানিয়েছিলেন, 'আমাদের সেই পাপের জন্যই আল্লাহ আজ আমাকে শাস্তি দিয়েছেন এবং তাই আমরা কষ্ট পাচ্ছি।' শামীম আরও জানিয়েছেন বেগম রসুল ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। এই বৈঠকের কিছুদিন পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আজকের শিক্ষিত পাশমান্দা যুবকরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ইতিহাসে নাড়াচাড়া করছে , মুসলমানদের একটি অংশ কেন মুসলিম লীগকে সমর্থন করেছিল এবং ভারত ভাগের বিরুদ্ধে পাশমান্দার প্রচণ্ড বিরোধিতা করে পাকিস্তানের ধারণাকে কেন সমর্থন করেছিল। শামীম বলেছেন, এই প্রশ্নের উত্তরও তিনি পেয়েছেন, সালটা ১৯৪৬, বর্তমান পশ্চিম উত্তর প্রদেশের চাঁদপুর তহলিসের গয়লি গ্রামে চৌধুরী মোখা আনসারি নামে একজন ব্যক্তি কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল। সেই সময় বেশিরভাগ মুসলিমই জমিদার জিন্নাহর মসলিম লীগকে ভোট দিতে। সেই ব্যক্তির এই আচরণের পরে ধনী জমিদাররা তাঁর সহসিকতার জন্য সেই পাসমান্দা ভোটারকে সামাজিকভাবে বয়কট করার নির্দেশ দিয়েছিল।
১৯৪৬ সালের ভারত ভিন্ন ছিল; সবাই ভোট দিতে পারে না - শুধুমাত্র ধনী জমিদার এবং সামন্ত প্রধান যারা বার্ষিক ৬৪ টাকা কর দিতেন; যারা ১.২৫ টাকা "চৌকিদারি ফি" প্রদান করেছেন বা ম্যাট্রিকুলেশন করেছেন তারা ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন। এছাড়াও, হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনী এলাকা ছিল। এই ব্যবস্থায় পাসমান্দাদের রাজনীতিতে কোনও অংশ ছিল না। ১৯৪৬ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ৪০টি আসনের মধ্যে ৬টিতে মুসলমানরা জয়লাভ করে। কংগ্রেস একটিতে জিতেছিল।মুসলিম লীগ ৩৩টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস বিহারে সরকার গঠন করার অবস্থায় ছিল , কারণ সেই সময় তারা আবদুল কাইয়ুম আনসারির নেতৃত্বাধীন সোমিন সম্মেলনের সমর্থন চেয়েছিল।
বিহার মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করতে সাদাকাত আশ্রমে আসেন মৌলানা আজাদ। মমিন সম্মেলন থেকে সদস্য বাছাই না করে তিনি তার এক আত্মীয় শাহ উমাইরাকে বাছাই করেন। অবশেষে, আবদুল কাইয়ুম আনসারিকে বিহারে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারে জেলমন্ত্রী হওয়ার জন্য দিল্লি থেকে সর্দার প্যাটেলের হস্তক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধে আনসারি তার দলকে কংগ্রেসে একীভূত করলেও আজাদের আচরণ ছিল ভিন্ন। সেই জায়গা থেকেই পশমান্দাদের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বেড়ে যায়। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল দলটি মুসলিম নেতৃত্বের নামে আশরাফকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তাদের প্রয়োজন ছিল ভোটের।তিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পসমান্দার নেতারা আজ রাজনৈতিক দলগুলোর মোকাবিলায় বাস্তববাদী।
পাশমান্দা মুসলিমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞ তাদের দুর্দশাকে একটি জাতীয় ইস্যু করার জন্য এবং তার দল বিজেপির সর্বদা একজন আশরাফকে দলের মুসলিম মুখ হিসেবে বেছে নেওয়ার স্বাভাবিক অভ্যাসের সংশোধন শুরু করার জন্য। বিজেপিকে পাশমান্দাদের ব্যবহার করছে না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সময় মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আমেদাবাদে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন শামীম। জাফর সুরেশওয়ালা বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ,সেই সময় মোদী অকপটে স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি পাশমান্দা মুসলিমদের চেনেন না। এই সম্প্রদায় সম্পর্কে তাঁর কোনও জ্ঞান নেই। তিনি বলেন এটা সত্যি বিজেপিও আশরাফকে স্থান দিয়েছে পাসমান্দাকে নয়। কিন্তু সেই সময় মোদী ধার্য ধরে তাঁর কথা শুনেছিলেন। তারপরই মোদী ২০২২ সালের হায়দ্রাবাদে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী সভায় পাসমান্দা ইস্যুতে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করেছিলেন। তিনি বলেন সকলেই পাশমান্দাদের ভোট চায়, কিন্তু কোনও দলই তাদের ক্ষমতার অঙ্গ করতে চায় না। শামীম বলেন, 'কল্পনা করুন একজন প্রধানমন্ত্রী আমাদের পক্ষে কথা বলছেন; এটি আমাদের সংগ্রামে একটি অসাধারণ প্রভাব ফেলেছে। '
আরও পড়ুনঃ
ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য সুখবর! প্রাচীন সিমলা রেলপথে অত্যাধুনিক কোচে গা-এলিয়ে সফর
অভিষেকের পাশে বসে অধীরকে তোপ বায়রনের, পাল্টা সুর নরম করে কটাক্ষ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির
আজ সন্ধ্যায় অগ্নিগর্ভ মণিপুর পৌঁছে যাবেন অমিত শাহ, শান্তি ফেরাতে ৪ দিন ঠাসা কর্মসূচি