যোগীরাজ্যে বিজেপির হার। কার্যত, মিরাক্কেল ঘটালেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব।
যোগীরাজ্যে বিজেপির হার। কার্যত, মিরাক্কেল ঘটালেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব।
উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লী তাঁর। কথিত আছে এইরকমই। কিন্তু চব্বিশের লোকসভা ভোটে হল ব্যতিক্রম। কেন্দ্রে ‘এনডিএ’ জোটের সরকার গঠিত হতে চলেছে ঠিকই, কিন্তু উত্তরপ্রদেশে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। তাছাড়া একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারিয়েছে তারা। আর সেক্ষেত্রে বারবার উঠে আসছে উত্তরপ্রদেশের নাম। যোগী রাজ্যে বরাবরই মাটি শক্ত ছিল বিজেপির। কিন্তু সেই রাজ্যেই কিনা লোকসভা নির্বাচনে হার এবার পদ্ম শিবিরের।
প্রায় দু-দশক পর উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্যরকম এক ফলাফল। বিজেপির বিরুদ্ধে বড় জয় সমাজবাদী পার্টির। যা গত ২০০৪ সালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেইবছর জয়ের কান্ডারি ছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। আর এবার তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদব। বলা যেতেই পারে, বিজেপি বিরোধী ঐক্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তিনিই।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে, উত্তরপ্রদেশের বুকে বিজেপির জয়রথকে আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে অখিলেশের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি। তাও কিনা রাজ্যে যেখানে যোগী আদিত্যনাথ পরিচালিত বিজেপি সরকার।
প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে এই নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয় সমাজবাদী পার্টি। তা যে সঠিক ছিল, এবার প্রমাণিত। সবথেকে বড় বিষয় হল যে, উত্তরপ্রদেশে মোট ৬২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সমাজবাদী পার্টি। বাকিগুলি তারা ছেড়ে দেয় কংগ্রেসের জন্য।
এই ৬২টি আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনেই তপসিলি জাতি এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছাই করেন অখিলেশ। অর্থাৎ, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিকে সমাজবাদী পার্টি বাড়তি গুরুত্ব দিতে চেয়েছিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এটিই কি তাহলে জয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াল? জল্পনা চলছে।
লোকসভা ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, ৩৭টি আসনে জয় পেয়েছেন অখিলেশ যাদবরা। কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসনে জয়। বিজেপির ঝুলিতে ৩৩টি আসন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় লোক দল পেয়েছে মাত্র ২টি আসন এবং অন্যান্যরা। বলা যেতে পারে, গোটা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে, উত্তরপ্রদেশের ফলাফল রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপিকে হারিয়ে যোগীরাজ্যের বুকে সমাজবাদী পার্টির জয় নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা যোগ করছে।
উল্লেখ্য, রোবার্টসগঞ্জ, ফইজাবাদ সহ একাধিক আসনে সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে তপসিলি জাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রার্থী করা হয়। আর ভোটের ফলাফলের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, এই রাজ্যের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ এবং নিচুতলার একটা বড় অংশের ভোট সমাজবাদী পার্টির পক্ষে গেছে। ওবিসি সম্প্রদায় এবং তপসিলি শ্রেণির ভোট বিজেপির দিকে একদমই যায়নি।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এই নির্বাচনে ঘটেছে। অখিলেশের নেতৃত্বে, সমাজবাদী পার্টি তার আম্বেদকর বাহনীকে শক্তিশালী করে তোলে এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় রাজ্যের দলিত শ্রেণির কাছে পৌঁছে যায় এই সংগঠন। তাদের কথা এবং প্রচার দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তার ফলাফল মিলেছে হাতেনাতে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের একটা বড় অংশের সংখ্যালঘু ভোটও অখিলেশ যাদব এবং তাঁর পার্টির সমর্থনে গেছে। অর্থাৎ, সংসদীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপই চব্বিশের লোকসভা ভোটে সমাজবাদী পার্টিকে বৈতরণী পার করতে সাহায্য করল।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।