'জাত্যাভিমানের সংঘর্ষে কীভাবে ধ্বংস হল প্রাণ, পুড়ল ঘরবাড়ি', মণিপুরের ভয়ঙ্কর সেই ৭ দিন-- পর্ব-২

কলকাতার চিকিৎসক আহেল বন্দ্যোপাধ্যায় আটকে পড়েছিলেন হিংসা বিধ্বস্ত মণিপুরের মোরে শহরে। বলতে গেলে মণিপুরে ঘটে যাওয়া হিংসার মাত্রায় মোরে ছিল দ্বিতীয় স্থানে। জাতির হিংসার মাত্র ১ মাস আগে মোরে হাসপাতালে পোস্টেড হয়েছিলেন আহেল।

 

আহেল বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিপুরে আটকে পড়া চিকিৎসক---- (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব)--- আমাদের কনভয়ের মধ্যে কয়েকটা আর্মি ট্রাকে আবার প্রচুর লোকজন উঠে পড়েছিল। রাস্তার মাঝখানে এরা নেমে পড়ছিল। হিংসার জেরে এরা গত কয়েকদিন ধরে মোরে সেনা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেছিল। হিংসা-ক্রোধ নিয়ে ছোটবেলা থেকে পাঠ্যবইয়ে তো কম লেখা পড়িনি, সেই হিংসা আর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ কতটা মারাত্মক হতে পারে তা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। এই হিংসা ও ক্রোধের এমনই মহিমা যে একটা পুরো অঙ্গরাজ্যের মানব সভ্যতা আজ ত্রস্ত-বিধ্বস্ত। 

৮ মে সন্ধের আগেই আমরা নিরাপদে তিন পাহাড় টপকে পৌঁছেছিলাম পাল্লালে অসম রাইফেলসের ২৬ নম্বর হেডকোয়ার্টারে। সেখানে আমাদের কিছু সঙ্গী-সাথী সেনাবাহিনীর কাছে মুচলেকা দিয়ে নিজ দায়িত্বে রওনা দেয় নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশে। তবে আমাকে ছাড়া হয়নি। কারণ, রিমস কর্তৃপক্ষের হাতে আমাদের ৩জনকে সরকারিভাবে তুলে দিতে হবে বলে সেনাবাহিনীর কাছে নির্দেশ ছিল। এদিকে, ততক্ষণে সমানে যোগাযোগ করে যাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট। তারাও আমার প্রতিটি গতিবিধি সমানে ট্র্যাক করছিল। 

Latest Videos

৯ মে। প্রায় এক সপ্তাহের এক উত্তেজনা ও আতঙ্কে ভরা দিন কাটিয়ে একটু নিশ্চিন্তের ঘুম এল অসম রাইফেলসের অফিসার্স কোয়ার্টারে। পরের দিন আমাদের নিয়ে সেনাবাহিনী রওনা হল ইম্ফলের উদ্দেশে। দুপুর থাকতেই রিমসে আমার ডিপার্টমেন্ট হেডের হাতে আমাকে সরকারিভাবে সমপর্ণ করে দিল সেনাবাহিনী। ফিরে এল হারানো আত্মবিশ্বাস। কলকাতায় বাবা-মা-কে এক নিশ্চিন্তির ফোন। ডিপার্টমেন্ট হেড-কে আমার মানসিক অবস্থা বুঝিয়ে জোগাড় করলাম ছুটি। ওদিকে বাবা-মা ততক্ষণে সেদিনই সন্ধ্যার ফ্লাইটের টিকিট কেটে ফেলেছে। যদিও, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টও হাত বাড়িয়েছিল টিকিট কেটে দেওয়ার জন্য। যেহেতু, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার ছুটির কোনও বন্দোবস্ত ছিল না তাই তাদেরকে হ্যাঁ বলতে পারিনি। বাবা-মা-র কেটে দেওয়া বিমানের টিকিট আমার হাতে কীভাবে আসবে! সেই প্রশ্ন একটা সময় বড় হয়ে ওঠে। ইন্টারনেট তো বন্ধ। অবশেষে খোঁজ মিলল বাবা-র এক রোগীর। যিনি ইম্ফল বিমানবন্দরের সঙ্গে কানেক্টেড। তার মাধ্যমে ইম্ফল বিমানবন্দরেই আমার হাতে এল ফ্লাইটের টিকিট। বিমানে চেপে বসতেই খানিকটা স্বস্তি। একই ফ্লাইটে আবার পশ্চিমবঙ্গ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর উদ্যোগে আরও কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে কলকাতায় আনার বন্দোবস্ত হয়েছিল। কলকাতা বিমানবন্দরে যখন বিমানের চাকা মাটি ছুঁল তখন রাত ৮টা ১৬। স্বস্তির শ্বাসে তখন ফেলে আসা মোর শহরের হিংসার ৭ দিন এক ঘোর লাগা অধ্যায়। কলকাতা বিমানবন্দরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় সই-সাবুদ করে বাইরে এলাম। দেখতে পেলাম বাবা-মা-র উজ্জ্বল হওয়া মুখটা। বুঝলাম 'যে সয় সে রয়'। 
আরও পড়ুন-- 
'জাত্যাভিমানের সংঘর্ষে কীভাবে ধ্বংস হল প্রাণ, পুড়ল ঘরবাড়ি', মণিপুরের ভয়ঙ্কর সেই ৭ দিনের কথা স্মরণ করলেন চিকিৎসক আহেল বন্দ্যোপাধ্যায়  
কাজ করছে না মমতা সরকারের হেল্পলাইন, হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরে সেনা ক্যাম্পে আটকে কলকাতা চিকিৎসক আহেল বন্দ্যোপাধ্যায়

 

Share this article
click me!

Latest Videos

'উনি চক্রান্তের বড় শিকার' নেতাজির জন্মদিনে এ কী বললেন মমতা? Mamata on Netaji
রাগের মাথায় এ কী করে বসলো স্বামী! দেখলে আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Nadia-এ | North 4 Parganas News Today
সুকান্ত মজুমদারকে বিজেপির নবজাতক আখ্যা কুণালের, পাল্টা দিয়ে যা বললেন সুকান্ত : Sukanta on Kunal
নেতাজির 'মৃত্যুদিন' ঘোষণা রাহুলের, ক্ষোভ উগরে একহাত নিলেন সুকান্ত মজুমদার | Sukanta on Rahul
ED Raid Today: Kolkata-র একাধিক স্থানে ফের ED-র অভিযান! Salt Lake-এ হাজির বিশাল ইডির দল | Kolkata